Sunday, September 24, 2023
Homeইসলামসূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত ও এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও...

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত ও এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত

মহান আল্লাহ তা’আলা মানুষের কল্যাণের জন্যই পবিত্র কুরআন নাযিল করেছেন। এটি সকল মুমিনের জন্য পথ প্রদর্শক। এর মাঝেই সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে। অর্থাৎ, মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান রয়েছে এতে। কুরআনের অসংখ্য আয়াত রয়েছে, যেগুলো দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর। তেমনিভাবে সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের মাঝেও রয়েছে কল্যাণ৷ তাই আজকের আর্টিকেলে আমি সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত এবং আয়াতের আরবি, বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করব।

সূরা হাশরের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

পবিত্র কুরআনের ৫৯ নাম্বার সূরা হচ্ছে , সূরা আল-হাশর। এই সূরাটি মক্কা নগরীতে অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ২৪ টি। আর রূকু সংখ্যা ৩ টি। পারার ক্রম ২৮। হাশর শব্দের অর্থ হচ্ছে একত্র হওয়া, জড়ো হওয়া, সমাবেশ ইত্যাদি। এই সূরার দ্বিতীয় আয়াতের أَخْرَجَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ مِنْ دِيَارِهِمْ لِأَوَّلِ الْحَشْرِ বাক্যাংশের الْحَشْرِ অংশ থেকে এই সূরার নামটি গৃহীত হয়েছে। মূলত যে সূরার মধ্যে الْحَشْرِ (‘হাশর‌’) শব্দটি আছে এটি সেই সূরা। এ সূরায় কোন সিজদার সংখ্যা নেই। এর পূর্ববর্তী সূরা হচ্ছে সূরা মুজাদালাহ আর পরবর্তী সূরা হচ্ছে সূরা মুমতাহিনা।

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের আরবি

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের আরবি
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের আরবি
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ (২২)
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ (২৩)
هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (২৪)

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের বাংলা উচ্চারণ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
হুওয়াল্লা-হুল্লাযী লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া ‘আ-লিমুল গাইবি ওয়াশশাহা-দাতি হুওয়াররাহমা-নুর রাহীম। (২২ নং আয়াত)
হুওয়াল্লা-হুল্লাযী লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া আলমালিকুল কুদ্দূছুছ ছালা-মুল ম’মিনুল মুহাইমিনুল ‘আঝীঝুল জাব্বা-রুল মুতাকাব্বিরু ছুবহা-নাল্লা-হি ‘আম্মা-ইউশরিকূন। (২৩ নং আয়াত)
হুওয়াল্লা-হুল খা-লিকুল বা-রিউল মুছাওবিরু লাহুল আছমাউল হুছনা; ইউছাব্বিহুলাহূ মা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়াহুওয়াল ‘আঝীঝুল হাকীম। (২৪ নং আয়াত)
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের বাংলা উচ্চারণ
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের বাংলা উচ্চারণ

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের বাংলা অনুবাদ / অর্থ

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
তিনিই আল্লাহ তা’আলা, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। (২২)
তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্মশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র। (২৩)
তিনিই আল্লাহ তা’আলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়। (২৪)

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ইংরেজি অর্থ

He is Allah, than Whom there is La ilaha illa Huwa (none has the right to be worshipped but He) the All-Knower of the unseen and the seen (open). He is the Most Beneficent, the Most Merciful.
He is Allah than Whom there is La ilaha illa Huwa (none has the right to be worshipped but He) the King, the Holy, the One Free from all defects, the Giver of security, the Watcher over His creatures, the All-Mighty, the Compeller, the Supreme. Glory be to Allah! (High is He) above all that they associate as partners with Him. (23)
He is Allah, the Creator, the Inventor of all things, the Bestower of forms. To Him belong the Best Names. All that is in the heavens and the earth glorify Him. And He is the All-Mighty, the All-Wise. (24)

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত অনেক। সকাল, বিকাল সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়া অনেক সওয়াবের আমল। এই তিন আয়াতের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসেও বলা হয়েছে। নিম্নে সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস দেওয়া হলো –

হজরত মাকাল ইবনে ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন,

অর্থ: “যে ব্যক্তি সকালে ৩বার আউজু বিল্লাহিস সামিঈল আলিমি মিনাশশাইত্বানির রাঝিমসহ ‘সুরা হাশরের’ শেষ তিন আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য ৭০ হাজার রহমতের ফেরেশতা আল্লাহ তাআলা নিযুক্ত করবেন। সে ফেরেশতাগণ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উক্ত ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকবেন  এবং তার ওপর আল্লাহর রহমত প্রেরণ করতে থাকবে। যদি ঐ দিন সে ব্যক্তি মারা যান তবে সে শহীদি মৃত্যু লাভ করবে।

আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যার সময় এ আয়াতগুলো তিলওয়াত করবে তাঁর জন্যও আল্লাহ তাআলা ৭০ হাজার রহমতের ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন। যারা তাঁর ওপর সকাল হওয়া পর্যন্ত রহমত প্রেরণ করতে থাকবে। আর যদি ঐ রাতে সে ব্যক্তি মারা যান তবে সে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং – ৩০৯০; আবু দাউদ, হাদিস নং- ২৯২২; মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ১৯৭৯৫; কানজুল উম্মাল, হাদিস নং – ৩৫৯৭)

হাসান (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি সকালে সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করে, সে যদি সেই দিন মৃত্যুবরণ করে, তবে তাকে শাহাদাতের সীল (টিকিট) প্রদান করা হবে এবং সন্ধ্যায় তা পাঠ করলে সে যদি সেই রাতে মৃত্যুবরণ করে, তবে তাকে শাহাদাতের সীল প্রদান করা হবে।” (সুনানে দারেমী, হাদিস নং – ৩৪৬২)

হযরত আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূল সা.ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি দিনে কিংবা রাতে সুরা হাশরের শেষাংশ তথা শেষের তিন আয়াত পাঠ করে অতঃপর ঐ রাতে কিংবা দিনে মৃত্যবরণ করলে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাত আবশ্যক করে ফেলেন।” [তাফসিরে কুরতুবী]

অন্য আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে যে –

হযরত মুসলিম বিন হারেস তামিমী (রাঃ) রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল (সাঃ) তাঁর দিকে মনোনিবেশ করে বলেন, “যখন তুমি মাগরিবের নামায শেষ করবে, তখন তুমি বলবে “আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান নার”  [হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও!] ৭ বার। নিশ্চয় যদি তুমি তা বলে থাকো, তাহলে তুমি যদি সে রাতে ইন্তেকাল কর, তবে তুমি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে গেছে হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হবে। আর যদি তুমি তা সকালে পড়ে থাক, আর তুমি সেদিন মারা যাও, তাহলে তুমি জাহান্নাম থেকে মুক্ত হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে যাবে।” (আবু দাউদ, হাদিস নং – ৫০৮১)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘আমি আমার খলিল রাসুল (সাঃ) কে ইসমে আজম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দিলেন, “হে আবু হুরায়রা! তোমার কর্তব্য হচ্ছে সুরা হাশরের শেষাংশ পাঠ করা। আমি আবার পরপর দু’বার ইসমে আজম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উক্ত উত্তরই প্রদান করেন।”
(তাফসিরে কুরতুবী)

উপরের হাদিসের দলীল থেকে প্রমাণিত হয় যে, সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত অনেক। আমাদের উচিত বেশি বেশি সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করা।

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের শিক্ষা

নংশিক্ষা
আল্লাহ তা’আলাই বিশ্বজগতের একমাত্র বাদশাহ। তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই।
আল্লাহ তা’আলাই সমগ্র সৃষ্টির একমাত্র হিফাজতকারী এবং তিনিই নিরাপত্তাদানকারী। শান্তি ও নিরাপত্তা তিনি ছাড়া আর কারো কাছে চাওয়া যাবে না।
আল্লাহই সমগ্র সৃষ্টির পরিকল্পক, অস্থিত্ব দানকারী ও চূড়ান্ত ও রূপদানকারী। সুতরাং এর ব্যতিক্রম মনে করা কুফর।
আল্লাহই সবচেয়ে বড়। গর্ব ও অহংকার একমাত্র তার জন্যই শোভনীয়। অন্য কারো জন্য করা বৈধ নয়।
আল্লাহ তা’আলা জ্ঞান, যুক্তি ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত তাঁর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নের পরিপূর্ণ শক্তি রাখেন। এমন শক্তির অধিকারী আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে মনে করা যাবে না।
সমস্ত সৃষ্টিজগত সার্বক্ষণিক আল্লাহর তাসবিহ তথা পবিত্র ও মহিমা ঘোষণা করছে। সুতরাং মানুষেরও কর্তব্য আল্লাহর নির্দেশ পালনের মাধ্যমে তার মহিমাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা। ইত্যাদি।

তাহলে আজ এখানেই শেষ করছি। আশা করি, সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত ও এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত এবং শিক্ষা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। খুব শীঘ্রই আপনাদের সামনে অন্য আরেকটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হব। সে পর্যন্ত ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Subscribe

- Never miss a story with notifications

- Gain full access to our premium content

- Browse free from up to 5 devices at once

Must read