ইসলাম ৫ টি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর ইসলামের এ পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো নামাজ। প্রতিদিন পাঁচ বার নামাজ আদায় করতে হয়। দৈনিক নামাজগুলোর মাঝে ফজরের নামাজ হলো প্রথম। এটি মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পালনীয় বিষয়। চলুন তাহলে ফজরের নামাজ (ফজরের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি? ফজরের নামাজের নিয়ম, ফযীলত ইত্যাদি) সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
ফজরের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি?
ফজরের নামাজ ৪ রাকাআত। এর মাঝে ২ রাকাআত সুন্নত এবং ২ রাকাআত ফরজ। সব সালাতই ধারাবাহিকভাবে আদায় করতে হয়। তেমনি ফজরের নামাজেরও ধারাবাহিকতা রয়েছে। যেমন –
- প্রথমে ২ রাকাআত সুন্নত আদায় করতে হয়।
- পরে ২ রাকআত ফরজ আদায় করতে হয়।
- পরে ২ রাকআত ফরজ আদায় করতে হয়।
হাদীস শরীফে এ সম্পর্কে বলে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু রয়েছে তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭২৫)
এভাবে মোট ৪ রাকাআত সালাত আদায় করতে হয়। ২ রাকাআত সুন্নত, ২ রাকাআত ফরজ নামাজের মতোই। তবে সুন্নতের ক্ষেত্রে একটু পার্থক্য রয়েছে। এখনে প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যে কোন সূরা মিলিয়ে পড়তে হয়। নিম্নে ফজরের ৪ রাকআত নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ফজরের ২ রাকাআত ফরজ নামাজের নিয়ত
দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। তেমনি ফজরের ২ রাকাআত ফরজ নামাজ পড়াও অত্যাবশ্যকীয়। প্রতিটি নামাজেরই আলাদা আলাদা নিয়ত থাকে। ফজছরের ২ রাকাআত ফরজ নামাজের নিয়ত নিম্নে দেওয়া হলোঃ-
বাংলায় নিয়তঃ আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে ফজরের ২ রাকাআত ফরজ নামাজ আদায় করার নিয়াত করছি আল্লাহু আকবার।
ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত নামাজের নিয়ম
সুন্নাত নামাজ ফরজ নামাজের মতোই। তবে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। চলুন তাহলে ফজরের ২ রাকাআত সুন্নত নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেই।
- প্রথমে অযু সহকারে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যান। এরপর জায়নামাজের দোয়া পড়ুন।
- এরপর ২ রাকাআত সুন্নাত নামাজের নিয়ত করে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলুন।
- পরে বা হাতের উপর ডান হাত রেখে নাভির নিচে রাখুন। মহিলারা বুকের উপর হাত বাঁধবে।
- এবার সানা পাঠ করুন।
- এবার সূরা ফাতিহা পড়ুন। শেষ হলে আমিন বলুন।
- ফাতিহা শেষ হলে অন্য একটি সূরা বা তিনটি ছোট আয়াত পড়ুন। যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতূল্য হয়। (আবু দাউদ: হাদিস ৬৯৫)
- এবার আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান। রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করুন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৭২৯) এবং আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরুন। (মুজামে সাগির ২/৪৯৭)
- রুকুতে নিম্নে ৩ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)
- ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে রুকু থেকে মাথা উঠান। মুক্তাদি হলে শুধুমাত্র ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলুন। এরপর তাকবিরে তাহরিমা তথা “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদায় যান। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৭)
- সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে আপনার হাঁটু, এরপর হাত, তারপরে দুন হাতের মাঝে কপাল মাটিতে রাখুন। পেটকে রান থেকে এবং বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে আলদা রাখুন। হাত – পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কিবলামুখী করে রাখুন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৮৫)
- সিজদায় নিচে ৩ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)
- পরে সিজদা থেকে উঠার সময় প্রথমে মাথা তুলে দু হাত রানের উপর রেখে বসুন। এরপর তাকবির বলে দ্বিতীয় সিজদা করুন। এ সিজদাহয়েও নিচে ৩ বার তাসবিহ পড়ুন।
- এরপর জমিনে হাত দিয়ে ঠেক না দিয়ে এবং না বসে সোজাসুজি তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যান।
এখানেই প্রথম রাকাআত সুন্নাত নামাজ আদায় করা শেষ। এবার দ্বিতীয় রাকাআত শুরু।
- দ্বিতীয় রাকাতে হাত উঠাবেন না, ছানাও পড়বেন না, আউজু বিল্লাহও পড়বেন না।
- প্রথম রাকাআতের মত সূরা ফাতিহা এবং সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়ে রুকু এবং সিজদা করবেন।
- দ্বিতীয় সিজদা শেষ করে ডান পা খাড়া করে বাঁ পা বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর বসে পড়বেন। আপনার হাতগুলো তখন রানের ওপর থাকবে এবং ডান পায়ের আঙুলগুলো কিবলামুখী থাকবে। (মুসলিম, হাদিস : ৯১২)
- সোজা হয়ে বসে শেষ বৈঠক করবেন।
- শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দূরুদ ও দুআ মাসূরা পড়ুন।
- এরপর ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে বলতে ডানে এবং বাঁয়ে সালাম ফেরাতে হবে।
- সালাম ফেরানো শেষ হয়ে গেলে মোনাজাত করতে হয়।
এভাবেই ২ রাকাআত সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়।
ফজরের দু রাকআত সুন্নাতের গুরুত্ব
ফজরের দু রাকআত সুন্নাতের গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় বর্ণিত আছে। নিম্নে কয়েকটি দেওয়া হলো –
হাদীস শরীফে এ সম্পর্কে বলে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু রয়েছে তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭২৫)
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) কখনো যুহরের (ফরজ নামাজের) পূর্বের চার রাকআত এবং ফজরের পূর্বের দু রাকআত (সুন্নাত) নামাজ কখনো তরক করতেন না। (বুখারী – ১১৮২, ইবনে মাজাহ – ১১৫৬, আবু দাউদ – ১২৫৩)
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেন, “ফযরের দুই রাকআত পৃথিবী এবং এর ভেতরে যা কিছু রয়েছে এর চেয়ে উত্তম।” (মুসলিম – ২৫, নাসায়ী – ১৭৫৯, তিরমিজি – ৪১৬)
ফজরের ২ রাকআত ফরজ নামাজের নিয়ম
ফজরের ২ রাকাআত ফরজ নামাজের নিয়ম নিম্নে দেওয়া হলো-
- প্রথমে অযু সহকারে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যান। এরপর জায়নামাজের দোয়া পড়ুন।
জায়নামাজের দোআ বাংলা উচ্চারণঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন।
বাংলা অর্থঃ নিশ্চই আমি তাঁহার দিকে মুখ ফিরাইলাম, যিনি আসমান জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন । আমি মুশরিকদিগের দলভুক্ত নহে ।
- এরপর ২ রাকাআত ফরজ নামাজের নিয়ত করে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলুন
- পরে বা হাতের উপর ডান হাত রেখে নাভির নিচে রাখুন। মহিলারা বুকের উপর হাত বাঁধবে।
- এবার সানা পাঠ করুন।
সানা বাংলা উচ্চারণ : সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বি – হামদিকা ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা তোমারই পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি, তোমার নামই বরকতপূর্ণ এবং তোমার গৌরবই সর্বোচ্চ, তুমি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। (নাসায়ি, হাদিস : ৮৮৯)
- এবার সূরা ফাতিহা পড়ুন। শেষ হলে আমিন বলুন।
- ফাতিহা শেষ হলে অন্য একটি সূরা বা তিনটি ছোট আয়াত পড়ুন। যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতূল্য হয়। (আবু দাউদ: হাদিস ৬৯৫)
- এবার আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান। রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করুন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৭২৯) এবং আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরুন। (মুজামে সাগির ২/৪৯৭)
- রুকুতে নিম্নে ৩ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)
- ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে রুকু থেকে মাথা উঠান। মুক্তাদি হলে শুধুমাত্র ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলুন। এরপর তাকবিরে তাহরিমা তথা “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদায় যান। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৭)
- সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে আপনার হাঁটু, এরপর হাত, তারপরে দুন হাতের মাঝে কপাল মাটিতে রাখুন। পেটকে রান থেকে এবং বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে আলদা রাখুন। হাত – পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কিবলামুখী করে রাখুন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৮৫)
- সিজদায় নিচে ৩ বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)
- পরে সিজদা থেকে উঠার সময় প্রথমে মাথা তুলে দু হাত রানের উপর রেখে বসুন। এরপর তাকবির বলে দ্বিতীয় সিজদা করুন। এ সিজদাহয়েও নিচে ৩ বার তাসবিহ পড়ুন।
- এরপর জমিনে হাত দিয়ে ঠেক না দিয়ে এবং না বসে সোজাসুজি তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যান।
এখানেই প্রথম রাকাআত ফরজ নামাজ আদায় করা শেষ। এবার দ্বিতীয় রাকাআত শুরু।
- দ্বিতীয় রাকাতে হাত উঠাবেন না, ছানাও পড়বেন না, আউজু বিল্লাহও পড়বেন না।
- প্রথম রাকাআতের মত সূরা ফাতিহা এবং সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়ে রুকু এবং সিজদা করবেন।
- এরপর সোজা হয়ে বসে শেষ বৈঠক করুন। শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দুরূদ ও দোয়া মাসূরা পাঠ করুন।
- এরপর আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ বলতে বলতে ডানে বায়ে সালাম ফিরাতে হবে।
- সালাম ফিরানো শেষ হলো মুনাজাত করতে হবে।
- প্রথম রাকাআতের মত সূরা ফাতিহা এবং সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়ে রুকু এবং সিজদা করবেন।
এভাবেই ২ রাকাআত ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়।
নামাজের জন্য প্রয়োজনীয় দোয়া (সূরা ফাতিহা, তাশাহুদ, দুরূদ ও দোয়া মাসূরা)
সূরা আল ফাতিহা
ক্রম | আয়াত & অর্থ | উচ্চারণ & ইংলিশ অর্থ |
---|---|---|
1 | بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ | বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। |
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। | In the name of Allah, Most Gracious, Most Merciful. | |
2 | الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ | আল হামদুলিল্লা-হি রাব্বিল ‘আ-লামীন। |
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। | Praise be to Allah, the Cherisher and Sustainer of the worlds; | |
3 | الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ | আররাহমা-নির রাহীম। |
যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু। | Most Gracious, Most Merciful; | |
4 | مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ | মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন। |
যিনি বিচার দিনের মালিক। | Master of the Day of Judgment. | |
5 | إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ | ইয়্যা-কা না‘বুদুওয়া ইয়্যা-কা নাছতা‘ঈন। |
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। | Thee do we worship, and Thine aid we seek. | |
6 | اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ | ইহদিনাসসিরা-তাল মুছতাকীম। |
আমাদেরকে সরল পথ দেখাও, | Show us the straight way, | |
7 | صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ | সিরা-তাল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলাইহিম । গাইরিল মাগদূ বি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ্দাল্লীন। |
সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। | The way of those on whom Thou hast bestowed Thy Grace, those whose (portion) is not wrath, and who go not astray. |
তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণ : ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাত। আসসালামু আলাইকা, আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।’
দরুদ বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদিউ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মদিম, কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিমা, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’
দুআ মাসূরা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরাও ওয়ালা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলি মাগফিরাতাম-মিন ইনদিকা, ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।’
ফজরের নামাজ আগে সুন্নত না ফরজ
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন আছে। প্রত্যেকটি ওয়াক্ত ধারাবাহিকতার সাথে আদায় করতে হয় নাহলে নামাজ হয় না। এটি প্রতিটি মুসলমানেরই দ্বীনি দায়িত্ব। ফজর নামাজের নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতা আছে।
ফজরের নামাজ মোট চার রাকাত।
- দুই রাকাত সুন্নত এবং
- দুই রাকাত ফরজ।
কেউ যদি আগে দুই রাকাত ফরজ আদায় করে এবং পরে দুই রাকাত সুন্নত আদায় করে তহলে তার নামাজ ভুল হবে।সবসময়ই আগে দুই রাকাত সুন্নত আদায় করে নিতে হয়।তারপর দুই রাকাত ফরজ আদায় করতে হয়।
ফজরের নামাজের পর আমল
ফজরের নামাজের পর আমল
১. আল্লা-হু আকবার (একবার সরবে)। আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ।
অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৯৫৯, ৯৬১ ছালাত পরবর্তী যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮)
২. আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু, তাবা-র ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক। এটুকু পড়েই ইমাম উঠে যেতে পারেন। (মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬০)
৩. আয়াতুল কুরসী :
আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম। লা তা’খুযুহু সেনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিসসামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আর্য। মান যাল্লাযী ইয়াশফা উ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি। ইয়ালামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহীতূনা বিশাইইম মিন ‘ইলমিহী ইল্লা বিমা শাআ; ওয়াসে’আ কুরসিইয়ুহুস সামা ওয়া-তে ওয়াল আর; ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজু হুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়ূল আজীম (বাক্বারাহ ২/২৫৫)।
অর্থ : আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোন তন্দ্রা বা নিদ্রা তাকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবকিছু তারই মালিকানাধীন। তার হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হ’তে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর তত্ত্বাবধান তাকে মোটেও শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, প্রত্যেক ফরয ছালাত শেষে আয়াতুল কুরসী পাঠকারীর জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আর কোন বাধা থাকে না মৃত্যু ব্যতীত’ (নাসাঈ)। শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হিফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযুক্ত থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হতে না পারে’ (বুখারী)। (নাসাঈ কুবরা হা/৯৯২৮, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭২; মিশকাত হা/৯৭৪)
৪. আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ : আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে তার দিকে ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি।
এই দো’আ পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়। (তিরমিযী, আবু দাউদ, মিশকাত হা/২৩৫৩)
০৫. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দৈনিক ১০০ করে বার তওবা করতেন। (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫)
০৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রত্যেক সালাতের শেষে সূরা ফালাক’ ও ‘নাস’ পড়ার নির্দেশ দিতেন। (মিশকাত হা/৯৬৯)
০৭. তিনি প্রতি রাতে শুতে যাওয়ার সময় সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে দু’হাতে ফুক দিয়ে মাথা ও চেহারাসহ সাধ্যপক্ষে সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। তিনি এটি তিনবার করতেন। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২১৩২)।
নামাজের গুরুত্ব বা ফযীলত বা তাৎপর্য
পবিত্র কুরআনে ৮২ বার নামাজ শব্দের উল্লেখ আছে। এ থেকেই বুঝা যাচ্ছে নামাজের গুরুত্ব বা ফযীলত কত! এর মাধ্যমেই একজন মুসলমান পাপ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে সক্ষম হয়। কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে এর গুরুত্ব আরও বেশি বুঝা যায়। নিম্নে নামাজ সম্পর্কে কয়েকটি কুরআনের আয়াত ও হাদিস দেওয়া হলো –
নামাজ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত
তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। আর নিঃসন্দেহে তা বড়ই কঠিন- বিনীতদের জন্যে ছাড়া । (সুরা আল বাকারাহ ২: ৪৫)
ওহে যারা ঈমান এনেছ! জুমু‘আর দিনে যখন তোমাদের কে সালাতের জন্যে ডাকা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং ক্রয় বিক্রয় পরিত্যাগ কর। এটি তোমাদের জন্যে উত্তম –যদি তোমরা জানতে। (সুরা জুমু‘আ ৬২: ৯)
অতঃপর যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহ কে স্মরণ করো, অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ বোধ করবে তখন পুরনাঙ্গ) সালাত কায়েম কর, নিশ্চয় সালাত মু’মিনদের ওপর একটি সময় নির্ধারণ ফরয। (সুরা নিসা ৪:১০৩)
আমি যদি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করি (ক্ষমতা ও সম্পদ দ্বারা) তাহলে তারা সালাত কায়েম করবে, সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে, আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহর (নিকট) (সুরা হাজ ২২:৪১)
এগুলো ছাড়াও পবিত্র কুরআনে নামাজ সম্পর্কে আরও অনেক আয়াত রয়েছে।
সালাত সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস
সালাত সম্পর্কে হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন। আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ তিনি ইরশাদ করেছেন “তোমরা ভেবে দেখ, তোমাদের কারো ঘরের দরজায় যদি একটি নদী প্রবাহিত হতে থাকে, এবং সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করতে থাকে, তাহলে তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) বলেন, না তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে না। তিনি বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের এটিই হচ্ছে দৃষ্টান্ত। এ সালাতসমূহের মাধ্যমে আল্লাহ পাপ মোচন করে দেন। (বুখারী – ৫২৬, ৪৬৮৭, মুসলিম – ২৭৬৩, তিরমিযী – ৩১১২, ৩১১৪, আবু দাউদ – ৪৪৬৮, ইবনে মাজাহ – ১৩৯৮, ৪২৫৪, আহমদ – ৩৬৪৫, ২৩৮৪৪, ৪০৮৩, ৪২৩৮, ৪২৭৮,৪৩১৩)
হযরত ‘আমর ইবনে শুয়াইব রহ. হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে, তার পিতা তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতের জন্যে আদেশ কর, যখন তারা সাত বছর বয়সে পৌঁছাবে। আর যখন তারা দশ বছর বয়সে পৌঁছবে, তখন তাদেরকে সালাতের জন্যে প্রহার কর এবং তাদের শোয়ার স্থান পৃথক করে দাও।” (সুনানে আবু দাঊদ: ৪৯৫)
আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও এক জুমু’আ থেকে আরেক জুমু’আ পর্যন্ত পঠিত সালাত এর মধ্যকার সব গুনাহের কাফফারা, যে পর্যন্ত না কবীরা গুনাহ করা হয়।” (মুসলিম – ২৩৩, তিরমিযী -২১৪, ইবনে মাজাহ – ১০৮৬, আহমদ – ৭০৮৯, ৮৪৯৮, ৯৮৪৪, ৯০৯২, ২৭২৯০, ১০১৯৮)
হজরত উম্মি ফারওয়াহ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, সবচেয়ে মর্যাদাবান ‘আমল কোনটি? তিনি বলেন, ওয়াক্তের প্রারম্ভে সালাত আদায় করা। (সুনানু আবী দাঊদ: ৪২৬, জামি’উত তিরমিযী:১৭০)
এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে সালাতের গুরুত্ব, ফযিলত বা তাৎপর্য কতটুকু।
আরও পড়ুন – আছরের নামাজ পড়ার নিয়ম