ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যেখানে মানব জীবনের প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সবকিছুর মতোই প্রাকৃতিক প্রয়োজন (প্রস্রাব – পায়খানা) নিয়েও নানারকম নির্দেশনা রয়েছে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমি পায়খানায় প্রবেশের দোয়া ও টয়লেট থেকে বাহির হওয়ার দো’আ সম্পর্কে আলোচনা করব।
পায়খানায় প্রবেশের দোয়া ও টয়লেট থেকে বাহির হওয়ার দো’আ
প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে আমাদের টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। তখন দুষ্ট জিনের বদ-নজর থেকে বেঁচে থাকা খুবই প্রয়োজন। রাসূল (সাঃ) এ প্রয়োজন সম্পন্ন করার পর মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “আমি তোমাদের জন্য পিতার মতো। আমি তোমাদের সব কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকি। তোমরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে কেবলাকে সামনে বা পেছনে দিয়ে বসবে না। ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য সম্পাদন করবে না।’ তিনি তিনটি ঢিলা ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন এবং গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ঢিলা করা থেকে বারণ করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস নং – ০৭)
তাই পায়খানায় প্রবেশের আগে ও পরে যাবতীয় অনিষ্টতা ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য দোয়া পড়া সুন্নাত। নবিজী (সাঃ) নিজেও এ দোয়াগুলোর আমল করতেন। তাহলে আর দেরি না করে চলুন সে দোয়াগুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
বাথরুমে / পায়খানায় প্রবেশের আগের দোয়া
হজরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবীজি (সাঃ) টয়লেটে প্রবেশের সময় বলতেন-
اَللهُمَّ إِنّيْ أَعًوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَ الْخَبَائِثِ
আরবি উচ্চারণ : “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।”
বাংলা অর্থ : “হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে পুরুষ ও নারী শয়তানের অনিষ্ট তথা ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।” (বুখারি)
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে যে –
হজরত আলি ইবনু আবি তালিব (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, টয়লেটে ঢুকার সময় জিনের চোখ ও আদম সন্তানের গোপনীয় অঙ্গসমূহের মধ্যে অন্তরাল সৃষ্টি করতে চাইলে ; বলতে হবে-
بِسْمِ اللهِ
আরবি উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি’
অর্থ : আল্লাহর নামে। (তিরমিজি)
সুতরাং টয়লেটে বা বাথরুমে প্রবেশের সময় এভাবে দোয়া করতে হবে –
بِسْمِ اللهِ اَللهُمَّ إِنّيْ أَعًوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَ الْخَبَائِثِ
আরবি উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।’
বাংলা অর্থ : ‘আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে পুরুষ ও নারী শয়তানের অনিষ্ট তথা ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)
রাথরুম / টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর দো’আ
হজরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় বলতেন-
ﻏُﻔْﺮَﺍﻧَﻚَ
আরবি উচ্চারণ : ‘গোফরানাকা।’
অর্থ : (হে আল্লাহ!) আপনার কাছে ক্ষমা চাই।’ (বুখারি, আদাবুল মুফরাদ)
বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর, এভাবেও দোয়া করা যেতে পারে-
غُفْرَانَكَ الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ اَذْهَبَ عَنِّيْ الْاَذَى وَعَافَانِيْ
আরবি উচ্চারণ : ‘গোফরানাকা আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি।’
অর্থ : ‘(হে আল্লাহ!) আপনার কাছে ক্ষমা চাই। সব প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য; যিনি ক্ষতি ও কষ্টকর জিনিস থেকে আমাকে মুক্তি দিয়েছেন।’
তাই প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত, পায়খানায় প্রবেশের আগে এবং বাথরুম থেকে বের হওয়ার পরে উপরে উল্লেখিত দোয়ার মাধ্যমে দুষ্ট পুরুষ ও নারী জীনের বদ-নজর থেকে হেফাজত থাকা। পায়খানার পরে কষ্টদায়ক অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও শুকরিয়া আদায় করা।
টয়লেটে / বাথরুমে যাওয়ার নিয়ম
বাথরুমে যাবার পূর্বে নিচে দেওয়া করণীয় আদবগুলো মেনে চলা উচিত। এগুলো হলো –
- বা পা দিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করা।
- প্রবেশের পূর্বে উপরে দেওয়া উল্লিখিত দোয়া পড়া।
- পরিষ্কার হওয়ার ক্ষেত্রে নজর রাখা।
- পানি ব্যবহারের আগে টিস্যু বা পবিত্র মাটির ঢিলা ব্যবহার করা। (হাড় বা শুকনো গোবর দিয়ে ঢিলা ব্যবহার করা যাবে না। কাপড়ের টুকরু দিয়ে ঢিলা ব্যবহার করা যায়।
- ঢিলা ব্যবহারের পর পানি ব্যবহার করা উচিত। কারণ এতে ভালো পরিষ্কার হয়।
- পুরোপুরি কাপড় না উঠিয়ে, সতর ঠিক রাখা উচিত।
- মাথা ঢেকে রাখা। (টুপি বা অন্য কাপড় দিয়ে।)
- কিবলার দিয়ে ফিরে না বসা।
- টয়লেটে খালি পায়ে না যাওয়া।
- দাঁড়িয়ে প্রস্রাব-পায়খানা না করা।
- বাম হাত দিয়ে ঢিলা বা পানি ব্যবহার করা। ইত্যাদি।
আজ এখানেই থাকলো। আল্লাহ তা’আলা সকল মুসলিম উম্মাহকে বাথরুমে প্রবেশের পূর্বে ও বের হয়ে হাদিসে দেওয়া দিকনির্দেশনা অনুযায়ী দোয়া পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।