নামাজ হলো বেহেশতের চাবি। তাই নামাজের প্রতি রাকআতে দো'আ, তাসবিহ, তাহলেলের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চায়। এসবকিছু নিয়ে পবিত্র আল-কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তেমনি দুই সিজদার মাঝের দোয়া রয়েছে। চলুন তাহলে দুই সিজদার মাঝের দোয়া (আরবি ও অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ) সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
সালাতের অন্য দোয়ার মতোই দুই সিজদার মাঝের দোয়া টিও সুন্নাত। তবে এ নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ আলেমদের মতে এই দোয়াটি মুস্তাহাব। এটি নামাজের ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত নয়।
হাম্বলি মাযহাবের মতে, দুই সিজদার মাঝের দোয়া পড়া ওয়াজিব। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন যে, নবী (সাঃ) দুই সিজদার মাঝে এটি পড়তেন। আর এসব জিকির ওয়াজিব। তাই দুই সিজদার মাঝের দোয়ার হুকুম অন্যান্য জিকিরের মতোই। সেক্ষেত্রে অন্তত ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি’ একবার বলা ওয়াজিব। এরচেয়ে বেশি বলা মুস্তাহাব।
‘জমহুর ওলামা’ বা অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম যে মত দিয়েছেন, তা খুব শক্তিশালী ও অধিক যুক্তিযুক্ত। কারণ, ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্ট কোনো দলিল নেই। আবার কিছু কিছু হাম্বলি মাজহাবের অনুসারী এই বক্তব্যটি গ্রহণ করেছেন। তাই জমহুর ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য গ্রহণ উত্তম।
দুই সিজদার মাঝের দোয়া (আরবি ও অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ)
দুই সিজদার মাঝের দোয়া সম্পর্কে হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই সিজদার মাঝে নিচের দোয়াটি বলতেন-
তবে হাদিসে শব্দগুলোর ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। কোথাও কম, আবার কোথাও বেশি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সবগুলো মিলিয়ে এই দোয়াটিতে ৭ টি শব্দ রয়েছে। নিম্নে দুই সিজদার মাঝের দোয়া আরবি ও অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ সহ দেওয়া হলো –
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ، وَارْحَمْنِي ، وَاجْبُرْنِي ، وَاهْدِنِي ، وَارْزُقْنِي ، وَعَافِنِي ، وَارْفَعْنِي
বাংলা উচ্চারণ : “আল্লাহুম্মাগ ফিরলি, ওয়ার হামনি, ওয়াজবুরনি, ওয়াহদিনি, ওয়ারজুকনি, ওয়া আ’ফিনি ওয়ারফা’নি।”
বাংলা অর্থ : “হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার ওপর রহম করুন। আমার প্রয়োজন পুরণ করে দিন। আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং আমাকে রিজিক দান করুন। আমাকে সুস্থতা দান করুন এবং আমার সম্মান বৃদ্ধি করুন।” (আবু দাউদ, হাদিস : ৮৫০; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮৮৮)
হজরত হুজায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে এ দোয়াটি পড়তেন-
رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي
বাংলা উচ্চারণ: রব্বিগফির লী, রব্বিগফির লী। (ইবনু মাজাহ, আবু দাউদ)
বাংলা অর্থ: হে আমার রব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। হে আমার রব্! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।
উপরে যে গুরুত্বপূর্ণ দো’য়াগুলো দেওয়া হলো , এগুলো পাঠ করার সবচেয়ে উত্তম সময় হলো দুই সিজদার মাঝখানের বৈঠকে। দিনে-রাতে কম করে হলেও আমরা ৩২ রাকআত নামাজ আদায় করে থাকি। যদি আমরা দুই সিজদার মাঝখানে এই দো’য়াটি পড়ি তবে দিনে-রাতে ৩২ বার এই দো’য়া পাঠ করা হবে।
দোয়াগুলোর বাংলা উচ্চারণের কথাগুলোর প্রতি খেয়াল করুন, কি চমৎকারকথা! যা আপনি আল্লাহকে বলছেন।আপনি বলছেন:
- হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন।
- আমাকে রহমত করুন।
- আমাকে হিদায়াত দান করুন।
- আমাকে রিজিক দান করুন।
- আমাকে সুস্থতা দান করুন।
প্রতিদিন কম করে হলেও আপনি ৩২ বার আল্লাহকে বলছেন, ‘হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, রহমত করুন, হিদায়াত দান করুন, রিজিক দিন এবং সুস্থতা দান করুন।’
এই সুস্থতার মধ্যে কিন্তু বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকার কথাও যুক্ত আছে। একবার ভেবে দেখুন দিনে-রাতে আপনি ৩২ বার এই দো’য়ার মাধ্যমে সুস্থতা চেয়ে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চেয়ে আল্লাহর নিকট দো’য়া করছেন। কি অসাধারণ বিষয়, তাই না!
তবে কষ্টের সাথে বলতে হয় যে, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মুসল্লি এই দো’য়াটি জানে না। এর ফলে তারা দুই সিজদার মধ্যে দো’য়াটি পাঠ করেন না।
এমন অনেক বিষয় আছে যা আল্লাহর নিকট না চাইলেও তিনি তাঁর বান্দাকে দিবেন। আবার অনেক বিষয় আছে যা আমাদের অবশ্যই তাঁর নিকট চেয়ে নিতে হবে, না চাইলে তিনি দিবেন না। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর এই শেখানো দো’য়ার মাধ্যমে আমাদের চাইতে বলা হয়েছে। তাই চলুন আমরা দোয়াটি শুদ্ধভাবে শিখে যথানিয়মে, যথাস্থানে এবং যথাসময়ে পাঠ কে অশেষ ফজিলত অর্জন করি।
সবশেষে মহান আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা, প্রত্যেক নামাজে দুই সিজদার মাঝে আল্লাহর তাসবিহ-তাহলিল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর হুকুম আহকাম পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আরও পড়ুন – তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া