প্রাচীনকাল থেকেই বিজ্ঞানের অন্যতম একটি শাখা ছিল গণিত। বিজ্ঞানের এই আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো গণিতের জনক কে? বর্তমানে বিভিন্ন চাকরি ও ভর্তি পরীক্ষায় এ প্রশ্নটি প্রায়ই আসে। কিন্তু অনেকেই এ প্রশ্নের উত্তর জানে না। তাই আজকের আর্টিকেলে আমি গণিতের জনক, গণিতের বিভিন্ন শাখার জনক, আর্কিমিডিসের পরিচিতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। এবং গনিতের জনকের পাশপাশি পাটিগণিত, বীজগণিত এবং জ্যামিতির জনক নিয়েও আলোচনা করবো।
প্রাচীন গ্রীক গণিতবিদদের মধ্যে আর্কিমিডিস (Archimedes) ছিল অন্যতম। তাকে গণিতের জনক বলা হয়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
গনিত ও গণিতের বিভিন্ন শাখার জনক
বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় (যেমন – বিভিন্ন চাকরি ও ভর্তি পরীক্ষা) গণিতের জনক কে সে বিষয় জানতে চাওয়া হয়। অনেকে এটার সঠিক উত্তর না জানার কারনে পরীক্ষায় ভুল করে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমি গনিতের জনক নিয়ে কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন এবং সেসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো।
গনিতের ৩টি শাখা রয়েছে। এগুলো হলো –
- পাটিগণিত
- বীজগণিত
- জ্যামিতি
নিম্নে এদের জনক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
গণিতের জনক কে? (Who is the father of Mathematics?)
গণিতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য আর্কিমিডিসকে গণিতের জনক বলা হয়। কারণ তিনিই সবার আগে মেথড অফ এক্সহশন ব্যবহার করে অসীম ধারার সমষ্টিরূপে প্যারাবোলার বক্ররেখার অন্তগর্ত ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করেন। তার অবদানগুলো বর্তমান সময়েও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
Archimedes একাধারে গ্রিক গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক ছিলেন। তিনিই প্রথম পাই -এর মান নির্ণয় করেন, বক্রতলের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র প্রদান করেন এবং যেকোনো বড় সংখ্যাকে সহজে প্রকাশ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তাই তাকে গনিতের জনক বলা হয়ে থাকে।
আধুনিক বীজগনিতের জনক কে?
আল খাওয়াজমীকে বীজগণিতের জনক বলা হয়। তাকে বীজগনিতের জনক বলার কারণ হলো – তিনিই প্রথম বীজগণিতকে একটি স্বাধীন শৃঙ্খলা হিসেবে গণ্য করেন এবং “হ্রাস” এবং “ভারসাম্য” পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। এ কারণে আল-খারেজমিকে বীজগণিতের জনক বলা হয়ে থাকে।
জ্যামিতির জনক কে?
জ্যামিতির জনক হলো ইউক্লিড। কারন ইউক্লিডই সর্বপ্রথম জ্যামিতির ইতস্তত বিক্ষিপ্ত সূত্রগুলোকে বিধিবদ্ধ ভাবে সুবিন্যস্ত করে Euclid’s Elements নামে ১৩ খন্ডে একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন। তাই ইউক্লিডকে জ্যামিতির জনক বলা হয়ে থাকে।
গনিতের বিভিন্ন শাখার জনক?
ক্রমিক নং | আবিষ্কারের বিষয় | জনক |
০১ | সংখ্যাতত্ত্ব | পিথাগোরাস |
০২ | জ্যামিতি | ইউক্লিড |
০৩ | ক্যালকুলাস | নিউটন |
০৪ | ম্যাট্রিক্স | কেইসে |
০৫ | ত্রিকোণমিতি | হিপ্পারচাস |
০৬ | পাটিগণিত | আর্যভট্র |
০৭ | বীজগণিত | মুসা আল খারিজমী |
০৮ | লগারিদম | জন নেপিয়ার |
০৯ | সেটতত্ত্ব | জর্জ ক্যান্টর |
১০ | আলগরিদম | ব্রহ্মগুপ্ত |
১১ | শূন্যে আবিষ্কারক | ব্রহ্মগুপ্ত ও আর্যভট্র |
আর্কিমিডিসের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি (জীবনী)
আর্কিমিডিস 287 খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিরাকিউসে নামক স্থানে একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ফিডিয়াস। তিনি একজন জ্যােতির্বিজ্ঞানী ছিলেন।
আর্কিমিডিস ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান, গণিত এবং রাজনীতি বিষয়ে অধ্যয়নের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তার সারা জীবন ধরে তিনি গাণিতিক সমীকরণ এবং সমস্যা সমাধানে নিযুক্ত ছিলেন। তার পরিবারও শিক্ষা লাভের জন্য তাকে যথেষ্ট সহায়তা করেছিল।
Archimedes সম্পর্কে আকর্ষণীয় তথ্য
Archimedes সম্পর্কে অনেকগুলো মজার তথ্য রয়েছে। তার ছবি দিয়ে “দ্য ফিল্ডস মেডেল” নামে একটি পুরস্কার তার অবদানের স্মরণে ডিজাইন করা হয়েছে। এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি তার আমলে মহান গণিতবিদদের প্রদান করা হতো।
এছাড়াও তার নামটি অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তাই তার নামানুসারে একটি গ্রহাণুর নামকরণও করা হয়েছিল। এগুলো ছাড়াও বিখ্যাত গ্রীক গণিতবিদ, গণিতের জনক মন্টেস আর্কিমিডিসের নামে একটি বিখ্যাত পর্বতশ্রেণী রয়েছে। এটি চাঁদে অবস্থিত একটি পর্বতশ্রেণী। তার নাম ও আবিষ্কারের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়তে থাকে।
আর্কিমিডিসের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারসমূহ
গণিত ও বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য আবিস্কারের কারণে আর্কিমিডিসকে গনিতের জনক বলা হয়। তিনি সিরাকিউসের রাজা দ্বিতীয় হিরোর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। সে সময় তিনি একটি পুলি সিস্টেম তৈরি করেছিলেন যা নাবিকদের ওজনযুক্ত বস্তুগুলিকে উপরে এবং নীচে সরাতে সাহায্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।
এছাড়া গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি বিভিন্ন গাণিতিক ধারণা কনফিগার করেছেন। আকৃতির ক্ষেত্র পরিমাপ করার জন্য তাঁর দ্বারা ‘ক্লান্তির পদ্ধতি’ তৈরি করা হয়েছে। PI এর মান পরিমাপ করা তার ‘নিঃশেষিত হওয়ার পদ্ধতি’ এর ফলাফল।
সর্বাধিক অসামান্য কৃতিত্বের এই ধাপটি একটি বৃত্তের পরিমাপ গণনা করতে গণিতে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আর্কিমিডিস গোলক এবং সিলিন্ডারের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেন। তিনি একটি বৃত্তের এলাকা এবং পৃষ্ঠের পাশাপাশি একটি প্যারাবোলা অধ্যয়ন করেছিলেন।
মূলত তিনি হলেন আগের গণিতবিদদের মাঝে একজন যিনি মৌলিক সংখ্যার ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তাছাড়া তিনি অনন্তের ধারণাটিও বের করেন। তিনি একটি অস্ত্র তৈরি করেছিলেন যাকে বলা হয় আর্কিমিডিসের নখর।
এই নখরটির কাজ হলো শহরের প্রাচীরের সমুদ্রের দিকের অংশকে যেকোনো ধরণের সামরিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। এটি ছিল রোমান জেনারেল মার্সেলাসের আক্রমণ প্রতিহত করার একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
আর্কিমিডিসের মৃত্যু
সিসিলি একটি গ্রিক উপনিবেশ ছিল। তাই এটি প্রায় সময়ই বিভিন্ন শত্রু দেশগুলোর আক্রমণের মুখোমুখি হতো। রোমান সামরিক নেতা মার্কাস ক্লডিয়াস একবার সিসিলি আক্রমণ করেন। সে যুদ্ধে একজন রোমান সৈন্য আর্কিমিডিসকে হত্যা করেছিল। মূলত ২১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।