ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মাঝে অন্যতম একটি হলো সাওম। সাওম মানে হলো রোজা। আর রমজান মাসের অন্যতম ইবাদত হলো ইফতার। মহান আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ পালনে সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার করা থেকে বিরত থেকে, সূর্যান্তের সাথে সাথে দেরি না করে ইফতার করতে হয়। দ্রুত ইফতার করা সুন্নাত। তাই ইফতারের সময় হওয়ার সাথে সাথে দোয়া ও নিয়ম মেনে ইফতার করা জরুরি। চলুন তাহলে ইফতারের দোয়া ও নিয়ত আরবি ও বাংলা উচ্চারণ সম্পর্কে জেনে নেই।
রোজা সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে ইরশাদ করেন যে –
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ
বাংলা অনুবাদ – “হে মুমিন সকল! তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” (সূরা বাকারা-১৮৩)
ইফতারের দোয়া – আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
ইফতারের সময় যে দোয়া পড়তে হয় সে নিয়ে হাদিসে বর্ণনা আছে। এমনকি ইফতারের পরের দোয়ার কথাও উল্লেখ করা আছে। তেমনি একটি হাদিস হলো –
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) যখন ইফতার করতেন, তখন বলতেন-
ইফতারের আগের দোয়া
بِسْمِ الله – اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ وَ اَفْطَرْتُ
আরবি উচ্চারণ : “বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আলা রিযক্বিকা আফত্বারতু।”
বাংলা অর্থ : “আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্যে রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।” (আবু দাউদ, মিশকাত)
ইফতারের আরেকটি দোআ হলো –
বাংলা উচ্চারণ : “জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতাল্লাতিল উ’রুকু; ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।”
বাংলা অর্থ : “(ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো।” (আবু দাউদ, হাদিস নং: ২৩৫৭)
কারো দাওয়াতে ইফতারি করলে মেজবানের উদ্দেশে এই দোয়া পড়তে হয়
اَفْطَرَعندكم الصائمون واكل طعامكم الابرار وصلت عليكم الملئكة
আরবি উচ্চারণ: “আফতারা ইনদাকুমুস সায়িমুন ওয়া আকালা তাআমুকুমুল আবরার ওয়া সাল্লাত আলাইকুমুল মালাইকা।”
বাংলা অর্থঃ “আল্লাহ করুন যেন রোজাদাররা তোমাদের বাড়ীতে রোজার ইফতার করে এবং নেক লোকেরা যেন তোমাদের খানা খায় এবং ফেরেশতারা যেন তোমাদের উপর রহমতের দু‘আ করে।” (আসসুনানুল কুবরা, নাসাঈ ৬:৮১)
মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সঠিকভাবে ইফতার করার ও রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
কোনো পরিবারের কাছে ইফতার করলে তাদের জন্য দো‘আ
أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُوْنَ، وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ
আরবি উচ্চারণ – “আফত্বারা ইন্দাকুমুস সা-ইমূন, ওয়া আকালা ত্বা‘আ-মাকুমুল আবরা-রু, ওয়াসাল্লাত আলাইকুমুল মালা-ইকাহ।”
বাংলা অনুবাদ – “আপনাদের কাছে রোযাদাররা ইফতার করুন, আপনাদের খাবার যেন সৎলোকেরা খায়, আর আপনাদের জন্য ফিরিশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করুন।”
আর হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে যে, নবী (সাঃ) যখন পরিবারের কাছে ইফতার করতেন তখন উপরের দোয়াটি বলতেন।
ইফতারের পরের দোআ
ইফতারের পর নবী কারীম (সাঃ) এই দোয়া পড়তেন-
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ. رواه أبو داود، وصححه الحاكم في المستدرك، ولم يتعقبه الذهبي.
আরবি উচ্চারণ: “জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।”
বাংলা অর্থ: “(ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হল, শিরা-উপশিরা সতেজ হল আর আল্লাহ তাআলা চান তো রোযার সওয়াব লিপিবদ্ধ হল।”
ইফতারের নিয়ত বাংলা অর্থ
অর্থ : “আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্বের মাধ্যমে ইফতার করছি।”
ইফতারের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ
আরবি উচ্চারণ : “আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহু আল-হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।”
ইফতারের নিয়ত আরবি
اَللهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلىٰ رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ
ইফতারের সময় করণীয় কাজ
ইফতাদের সময় নিম্নলিখিত কাজ করা উচিত।
- সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা।
- এ সময় অন্য কোন কাজে ব্যস্থ না থাকা।
- বেশি বেশি দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা।
- খেজুর, সাদা পানি বা দুধ দিয়ে ইফতার করে মাগরিবের সালাত আদায় করা।
- ভারী খাবার না খাওয়া।
- ইফতারে বেশি দেরি করে জামাআত তরক না করা।
- মাগরিবের নামাজ আদায় করে তৃপ্তিসহকারে খাওয়া। ইত্যাদি।
ইফতারের গুরুত্ব ও ফজিলত
আল্লাহর নামে নিয়ত করে সারাদিন রোযা রাখার পর যে পানাহারের মাধ্যমে রোজার সমাপ্তি ঘটে, তাকে ইফতার বলা হয়। এই মুহূর্তটা রোজাদারদের নিকট পরম আনন্দের। এর বিশেষ ফজিলত রয়েছে। ইফতার করাও যেমন ফজিলতের তেমনি অন্যকে ইফতার করানোও সওয়াবের কাজ। কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে নিম্নে এর গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: “হে মুমিন সকল! তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” (সূরা বাকারা-১৮৩)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না।”
আমাদের নবী (সাঃ) অসংখ্য হাদিসে যথাসময়ে ইফতার করার তাগিদ দিয়েছেন। তেমনি একটি হাদিসে এসেছে –
“মানুষ যতদিন ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে ইফতার করবে; ততদিন তারা কল্যাণ লাভ করবে।”
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী কারিম (সাঃ) বলেন, “রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি আনন্দ হচ্ছে যখন সে ইফতার করে। আরেকটি হচ্ছে যখন সে প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।” (তিরমিজি, হাদিস নং : ৭৬৬)
রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, (অন্য বর্ণনায়) ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ পড়ে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।” (বুখারি শরিফ: হাদিস নং ১৯০১)
সাহাবায়ে কিরাম বললেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘পানিমিশ্রিত এক পেয়ালা দুধ বা একটি খেজুর অথবা এক ঢোঁক পানি দ্বারাও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও সেই পরিমাণ সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, আল্লাহ তাআলা তাকে আমার হাউসে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না।” (মুসনাদে আহমাদ)
উপরের কুরআন ও হাদিসের দলীল দ্বারা দেখা যাচ্ছে যে ইফতারের ফজিলত অনেক। মহান আল্লাহ তা’আলা সকল মুমিনকে ইফতার করার এবং অন্যকে ইফতার করানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।