বর্তমান সময়ের একটি জনপ্রিয় অ্যাপ হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp). এর জনপ্রিয়তা সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই।
হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তা বোঝার জন্য আপনাকে বুঝতে হবে এটি বিনামূল্যে, ইন্টারনেট ভিত্তিক মেসেজিংয়ের প্রথম মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন।এর ব্যবহারকরী দিন দিন বাড়ছে।
কিন্তু অনেকেই জানে না WhatsApp কী? এর কাজ কী? তাই আজ আমি তাদের সুবিধার্থে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। চলুন তাহলে প্রথমেই জেনে নেই WhatsApp কী?
হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) কী?
WhatsApp মেসেঞ্জার বা সোজা হোয়াটসঅ্যাপ হ’ল আমেরিকান ফ্রিওয়্যার, ক্রস প্ল্যাটফর্ম মেসেজিং এবং ভয়েস ওভার আইপি (ভিওআইপি) সার্ভিস।
ফেসবুকের মালিকানাধীন এ প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারকারীদের টেক্সট মেসেজ, ভয়েস মেসেজ প্রেরণ, ভয়েস এবং ভিডিও কলগুলি করতে এবং ইমেজ,ডকুমেন্টস, ইউজার লোকেশন এবং অন্যান্য মিডিয়াগুলিকে শেয়ার করতে সহায়তা করে।
হোয়াটসঅ্যাপ কীভাবে কাজ করে?
আপনি যতই দূরে থাকুন না কেন WhatsApp আপনাকে আপনার প্রিয়জনের সাথে সংযুক্ত থাকতে সহায়তা করতে পারে।
হোয়াটসঅ্যাপের মূল অঙ্কনটি হ’ল এটি আপনাকে কেবল একটি ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে কল এবং মেসেজ প্রেরণ এবং গ্রহণ করতে দেয়, যার অর্থ এটি বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য এবং আন্তর্জাতিক কলিংয়ের জন্য আদর্শ। সাইন আপ করার জন্য কোনও ফি নেই এবং চিন্তার জন্য কোনও ডেটা প্ল্যান ভাতা নেই।
হোয়াটসঅ্যাপ গুগলের মেসেজ বা বার্তাগুলির মতো অন্যান্য মেসেজ প্রেরণ সার্ভিসের মতো হলেও, এটি এখনও কয়েকটি সুবিধা দেয়, যার মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হলো ক্রস-প্ল্যাটফর্ম কার্যকারিতা। (উদাহরণস্বরূপ, অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএসের মধ্যে)।
হোয়াটসঅ্যাপ এর বৈশিষ্ট্য
হোয়াটসঅ্যাপকে টেক্সট মেসেজিং অ্যাপের চেয়ে বেশি কিছু মনে হতে পারে না তবে এটি আরও অনেক কিছু করতে পারে। হোয়াটসঅ্যাপের মূল বৈশিষ্ট্যগুলির কয়েকটি নিম্নে দেওয়া হলো –
ভয়েস এবং ভিডিও কল: ভয়েস কল ছাড়াও, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে গ্রুপ ফাংশন সহ ভিডিও কল করা যায় এবং একসাথে সর্বোচ্চ আটজন অংশগ্রহণকারী কলে যুক্ত হতে পারে।
ভয়েস মেসেজিং: আপনি স্বতন্ত্র চ্যাট বা গ্রুপ চ্যাটে ভয়েস মেসেজগুলো রেকর্ড করতে এবং পাঠাতে পারবেন।
সুরক্ষিত মেসেজ প্রেরণ: হোয়াটসঅ্যাপ এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করে, একটি সুরক্ষিত যোগাযোগের মান যেখানে কেবল মেসেজিং করা লোকেরা মেসেজগুলো পড়তে পারে।
ফটো এবং ভিডিও শেয়ারিং : আপনার ইমেজগুলো পিক্সেলাইট করা হবে বা ডাউনলোডযোগ্য হবে না এমন উদ্বেগ ছাড়াই আপনি ভিডিও, ফটো এবং জিআইএফ পাঠাতে পারেন। যা বিভিন্ন মোবাইল প্ল্যাটফর্ম এবং ওয়্যারলেস ক্যারিয়ারের মধ্যে মাঝে মাঝে এসএমএস বার্তাগুলিতে ঘটতে পারে।
ডকুমেন্টস শেয়ারিং: হোয়াটসঅ্যাপ আপনাকে ই-মেইল বা পৃথক ডকুমেন্টে শেয়ার করে নেওয়ার অ্যাপ্লিকেশন ছাড়াই পিডিএফ, স্প্রেডশিট এবং স্লাইডশোর মতো সব ধরণের নথি পাঠাতে দেয়।
ডেস্কটপ অ্যাক্সেস: হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাক এবং পিসির জন্য একটি ডেস্কটপ সংস্করণ সরবরাহ করে।
হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস: হোয়াটসঅ্যাপের উৎসর্গকৃত ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টটি তৈরি করা হয়েছে, যাতে উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যগুলি প্রদর্শন করতে এবং সুবিধাজনক এবং পরিচিত একটি প্ল্যাটফর্মে তাদের গ্রাহকদের সাথে সংযোগ করতে পারে।
হোয়াটসঅ্যাপের আপকামিং ফিচার!
প্রায়দিনই হোয়াটসঅ্যাপে কিছু না কিছু নতুন ফিচার যুক্ত হয়। অনেকেই আছে যারা নতুন ফিচারের কথা শুনলেই সেটিকে তখনি ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় WhatsApp-এর প্রোটোকল।
হোয়াটসঅ্যাপে কোনো নতুন ফিচার রোলআউট হলে প্রথমেই তা বেটা প্রোগ্রাম ইউজারদের কাছে আপডেট আসে।
তারপর এটি সকলের (স্টেবল) জন্য উন্মুক্ত হয়। তাই অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপের বেটা ভার্সন ব্যবহার করতে চায়।
এটি ব্যবহার করার জন্য সাইন আপ করা লাগবে। কীভাবে সাইন আপ করতে হয় তা জানতে নিচের অংশটুকু পড়ুন।
হোয়াটসঅ্যাপের বেটা টেস্টার হিসেবে সাইন আপ করবেন কীভাবে?
হোয়াটসঅ্যাপের বেটা প্রোগ্রামে দুটি উপায়ে সাইন আপ করা যায়।
- স্মার্টফোন বা পিসি-র ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে।
- যেকোন ডিভাইসে নিজের গুগল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে।
স্মার্টফোনের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপের বেটা টেস্টার হওয়া যায় কীভাবে?
এক্ষেত্রে আপনার একটি স্মার্টফোনের প্রয়োজন হবে। স্মার্টফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপের বেটা টেস্টার হতে চাইলে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুন।
- প্রথমে গুগল প্লে স্টোরে যান।
- তারপর সেখান থেকে WhatsApp এ ক্লিক করুন।
- পরে সেখান থেকে হোয়াটসঅ্যাপের ডেডিকেটেড পেজের নীচের দিকে স্ক্রল করুন।
- স্ক্রল করলে আপনি ‘Become a beta tester’ শীর্ষক একটি প্যানেল দেখতে পাবেন।
- ওখান থেকে প্রথমে ‘I’m in’ এ ক্লিক করুন।
- তারপর ‘Join’ অপশনে ক্লিক করুন।এখানে ক্লিক করলেই আপনি বেটা ভার্সন ব্যবহার করতে পারবেন।
পিসি / ডেক্সটপের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপের বেটা টেস্টার হওয়া যায় কীভাবে?
আপনি যদি পিসি বা ডেস্কটপে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন তাহলে নিচের টিপসগুলো অনুসরণ করে হোয়াটসঅ্যাপের মিটার টেস্টার হন৷
- প্রথমে যেকোন ব্রাউজার (Chrome, Opera, Firefox ইত্যাদি) থেকে নিচের দেওয়া লিঙ্কে প্রবেশ করুন https://play.google.com/apps/testing/com.whatsapp
- সেখানে আপনি একটি ডায়ালগ বক্স এবং একটি “Become a beta tester” বাটন দেখতে পাবেন ।
- আপনাকে কেবল “Become a beta tester” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
- সেখানে ক্লিক বা সাইন আপ করার পর যদি স্ক্রিনে “You are a beta tester now” লিখা আসে তাহলে বুঝে নিবেন আপনি বেটা প্রোগ্রামে জয়েন করতে সক্ষম হয়েছেন।
ব্যাস হয়ে গেল। এবার আপনি হোয়াটসঅ্যাপের লেটেস্ট ভার্সনগুলির আপডেট পাবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ বেটা টেস্টার প্রোগ্রাম থেকে লিভ নেবেন কিভাবে?
আপনি যদি যেকোনো সময় বেটা প্রোগ্রাম থেকে লিভ নিতে চান,তাহলে একই পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনার স্মার্টফোন বা পিসি বা ডেক্সটপ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ বেটা টেস্টার প্যানেলে বা পেইজে গিয়ে ‘Leave’ অপশনে ক্লিক করুন । এরপর WhatsApp অ্যাপটি আনইনস্টল করুন। পুনরায় হোয়াটসঅ্যাপটি রি-ইনস্টল করুন।ব্যাস হয়ে গেছে। লক্ষ রাখবেন,অ্যাপ আনইনস্টল করার আগে আপনার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট বা ব্যাকআপ নিয়েছেন কিনা।
নতুন আপডেটে কোন সমস্যা দেখা যাচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্যই প্রথমে বেটা ইউজারদের লেটেস্ট আপডেট দেওয়া হয়।
অর্থাৎ সবার আগে বেটা ভার্সনের উপভোগ করতে পারলেও, মাঝে মাঝে অ্যাপে টুকটাক সমস্যা হতে পারে। তবে এখন হোয়াটসঅ্যাপের বেটা প্রোগ্রামে জয়েন করতে চাইলে আপনাকে অপেক্ষা করতে হতে পারে, কারণ আপাতত এই অ্যাপটির পরীক্ষামূলক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা পূর্ণ হয়ে গেছে।
আরো পড়ুনঃ গুগল ড্রাইভ (Google drive) কি? গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করবেন কীভাবে?
তাহলে বন্ধুরা আজ এখানে থাকলো। খুব শীঘ্রই আপনাদের সামনে আরেকটা আর্টিকেল নিয়ে হাজির হব। সে পর্যন্ত ভালো থাকবেন। আর আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলো অবশ্যই পরিবার পরিজন ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।