বর্তমান বিশ্বে স্মার্টফোন প্রায় সবার হাতে হাতে। স্মার্টফোন ছাড়া এখন কল্পনায় করা যায় না। স্মার্টফোনের মাধ্যমেই এখন আমার সব কাজ করে থাকি। দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিটিস সবকিছুই স্মার্টফোনের মাধ্যমে করে থাকি। এককথায় স্মার্টফোনের মাধ্যমে এখন সবকিছুই করা যায়।
আমরা যখন ফোন কিনার আগে আমাদের মনে নানারকম প্রশ্ন থাকে। কোন ফোনে কি পাবো, ফোনটা ভাল না মন্দ ইত্যাদি। এককথায় স্মার্টফোন কেনার আগে কি কি বিষয় জানা দরকর তার সবকিছুই। যেটা দেখে আমরা বুঝতে পারব কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ।
কিন্তু, স্মার্টফোনের দাম দেখেই আমরা ভালো-মন্দ বিচার করে ফেলি। দাম বেশি হলেই ধরে নেই ভালো ফোন আর কমদামি হলেই সেটা ধরে নেই খারাপ ফোন। তাইতো? কিন্তু এটা একদম ঠিক না।
তাই ফোন কেনার আগে আপনার যদি কিছু জ্ঞান, টিপস বা নিয়ম জানা থাকে, তাহলে আপনি যে দামেই ফোন কেনেন না কেন, সে দামেই একটি আকর্ষণীয়, সেরা এবং ভালো ফোন কিনতে পারবেন।
তাই এ আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য লিখা।এ আর্টিকেলে আমি আপনাদের এমন কিছু পরামর্শ দিব যেগুলো জানার পর ভালো – মন্দ ফিচার দেখেই স্মার্টফোন কিনতে পারবেন।এবং স্মার্টফোনে কী কী ফাংশন বা ফিচার থাকতে হয় তা জানতে পারবেন।
অর্থাৎ স্মার্টফোন কেনার আগে যা যা জানা দরকার তার সবকিছুই এটি পড়ে জানতে পারবেন। তবে স্মার্টফোন ফোন কেনার তেমন কোন টিপস নেই। শুধু কিছু বেসিক ফিচার বা অ্যাডভান্স ফিচার এবং ফোনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাংশন জানা থাকলেই আপনি একটি পারফেক্ট স্মার্টফোন কিনতে পারবেন।
তাহলে আর দেরি না করে চলুন, আমরা জেনে নেই মোবাইল কেনার আগে কি কি বিষয় দেখতে হয় এবং কি কি বিষয় আপনার জেনে রাখা উচিত।
বেস্ট স্মার্টফোন সিলেক্ট করবেন কিভাবে?
স্মার্টফোনের ফিচার, ফাংশন, বিল্ড – কোয়ালিটি ভালো হলে সে ফোনটি নিঃসন্দেহে সেরা। আমার মতে সে ফোনটিই সেরা ফোন। তাই বেস্ট স্মার্টফোন সিলেক্ট করতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
Read More :
এন্ড্রয়েড ফোনের স্পিড বাড়াবেন কীভাবে?
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট : বিল্যান্সার!
বেশি বেশি আয় করা যায় এমন সেরা ৫ টি ফ্রিল্যান্সিং কাজ
স্মার্টফোন কেনার আগে কি কি বিষয় জেনে রাখা উচিত?
স্মার্টফোন কেনার আগে যে ৯ টি বিষয় জেনে রাখা উচিত তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- ফোনের স্কিন এবং ডিসপ্লে
- ব্যাটারি
- র্যাম (RAM)
- প্রসেসর
- ফাংশন (Function) বা ফিচার (Features)
- ডিজাইন বা স্টাইল
- ক্যামেরা
- স্টোরেজ
- ব্র্যান্ড
ফোনের স্ক্রিন এবং ডিসপ্লে
ফোন কেনার আগে ফোনের স্ক্রিন এবং ডিসপ্লে কেমন সেটা দেখা জরুরি। স্কিন বা ডিসপ্লে বলতে আমরা তার সাইজ কত বড় সেটাই দেখি। কিন্তু সাইজ দেখার সাথে সাথে স্কিনে ব্যবহার করা ডিসপ্লে HD না Full HD না কেবল WVGA সেটা দেখা জরুরি। তবে মোবাইলের স্ক্রীন সাইজ 5 থেকে 6 ইঞ্চি হলে ভালো।
ফোনের ডিসপ্লে HD+ বা Full HD হলে ফোনের স্ক্রিনে আপনি ভিডিও দেখে, গেইম খেলে অনেক মজা পাবেন। ডিসপ্লে কোয়ালিটি অনেক আকর্ষণীয় হবে। তবে স্কিন HD+ না হয়ে শুধু WVGA হলে ভিডিও দেখে, গেইম খেলে মজা পাবেন না এবং ডিসপ্লে কোয়ালিটিও খারাপ হবে।তাই ফোন কেনার আগে ফোনের স্ক্রিন যাতে Full HD বা HD+ হয় সেটা খেয়াল করবেন।
ফোনের আকর্ষণীয় ডিসপ্লে কোয়ালিটি জন্য Screen Resolution ও বেশি হতে হবে। 720*1520 Pixels বা এর বেশি Screen Resolution থাকলে সেই ফোনে High Quality Display র মজা নিতে পারবেন।
এছাড়া খেয়াল রাখবেন IPS LCD থেকেও যাতে ডিসপ্লে ভালো হয়। Waterdrop Notch ডিসপ্লে থাকলে Premium এবং স্টাইলিশ ডিসপ্লে লুক পাবেন। এছাড়া Pixel Density 270 PPI থেকেও বেশি হলে ভালো।
উপরের বর্ণনা অনুযায়ী যদি, আপনি ফোনের ডিসপ্লে বা স্ক্রিন সিলেক্ট করেন তাহলে চোখ বন্ধ করে বুঝতে পারবেন যে,সেই ডিসপ্লে অনেক আকর্ষণীয় হবে। তাতে গেইম খেলে, ভিডিও দেখে এবং ব্যবহার করে অনেক ভালো লাগবে।
ব্যাটারি
স্মার্টফোন কেনার আগে যে জিনিসটি দেখা সবচেয়ে জরুরি সেটা হল ফোনের ব্যাটারি কত MaH. ফোনের ব্যাটারির যত বেশি MaH হবে ফোনে চার্জ তত বেশি টিকবে।
আপনি যদি ভিডিও দেখার জন্য, গেইম খেলার জন্য, সিনেমা দেখার জন্য, ফোনটি ব্যবহার করে থাকেন আর তার maH Power কম থাকে তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ফোনে চার্জ শেষ হয়ে যাবে যে কারণে আপনাকে বারবার ফোন চার্জ দিতে হবে।
তাই বারবার যাতে মোবাইল চার্জ দিতে না হয় সেজন্য 4০০০+ বা তার বেশি maH Power ব্যাটারি থাকা মোবাইল কিনবেন। যদি এর চেয়ে কম দেখে কিনেন তাহলে দ্রুত চার্জ শেষ হয়ে যাবে এবং বারবার ফোন চার্জ দিতে হবে।
র্যাম (RAM)
ফোনের র্যাম (RAM) যত বেশি হবে ফোন তত ফাস্ট চলবে এবং সহজে হ্যাং হবে না। কারণ ফোনে যদি ভিডিও দেখা হয়, গেইম খেলা হয়, ব্যবহার করা হয় বা বিভিন্ন ধরনের কাজ করা হয় তখন সে কাজের হিসেব অনুযায়ী ফোন তার র্যামের কিছু পরিমাণ ব্যবহার করে। যদি ফোনে RAM বেশি থাকে তখন কোন অসুবিধা ছাড়াই সব কাজ করা যায়।
অন্যদিকে ফোনে RAM যদি কম থাকে তাহলে RAM এর সীমাবদ্ধতার জন্য যেকোনো ধরনের কাজ করতে অসুবিধা হয়। অর্থাৎ ফোন স্লো কাজ করে এবং হ্যাং হয়ে যায়।
তাই ফোন কেনার আগে সর্বনিম্ন 3/4 GB RAM থাকা মোবাইল কিনবেন। তবে 6 GB হলে আরও বেশি ভালো। খেয়াল রাখবেন 1/2 GB RAM থাকা ফোন কয়েকদিন পরই অসুবিধা দেখা দিবে।
প্রসেসর
Processor Core এবং Processor Speed ফোনকে ফাস্ট এবং স্মোথভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। প্রসেসর কোর এবং স্পিড কম হলে RAM বেশি থাকলেও ফোন স্লো কাজ করবে।
তাই ফোন ফাস্ট কাজ করার জন্য Octa Core প্রসেসর হওয়া ভালো। কিন্তু প্রসেসর যদি Dual Core / Quad Core হয় তাহলে খুব সম্ভবত আপনার ফোন কয়েকদিন পরেই স্লো কাজ করবে এবং হ্যাং হওয়া শুরু করবে।
খেয়াল রাখবেন আপনার ফোনের প্রসেসরের স্পিড যাতে 1.5 GHz + থাকে। তবে মিনিমাম 2 GHz হলে ফোন খুব দ্রুত কাজ করবে। তাই স্মার্টফোন কেনার আগে প্রসেসরের কোর সংখ্যা এবং স্পিড দেখে কিনবেন।
ফাংশন (Function) বা ফিচার (Features)
আমার মতে একটি স্মার্টফোনে অ্যাডভান্স ফাংশন এবং ফিচার থাকা অনেক জরুরি। বর্তমানে এন্ড্রয়েড ফোনে বিভিন্ন ফিচার এবং ফাংশন এসে গেছে। এখন সাব দামের ফোনেই এসব ফিচার দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ-
- Face Unlock
- Fingerprint Unlock
- Wi-Fi Hotspot
- App Clone
- USB OTG Support
- Latest Android Version
আপনার ফোনে যদি এসব সাধারন ফিচার এবং ফাংশন থাকে তাহলে বুঝবেন আপনার ফোনটি লেটেস্ট।
ডিজাইন বা স্টাইল
ফোনের ডিজাইন বা স্টাইল কেমন হবে সেটা পুরোটাই আপনার উপর নির্ভর করে। তবে এমন একটি ফোন কিনবেন যার বডি স্লিম হবে এবং Back সুন্দর হবে। তবে ব্যাক Metal Finish হলে বেশি ভালো লাগে।
তবে কিছু Hard Plastic Material দিয়ে তৈরি মোবাইলের ব্যাক দেখতে অনেক সুন্দর হয়। সেটা আপনাকে যাচাই করে দেখতে হবে।
ক্যামেরা
আপনি যদি হাই কোয়ালিটি HD ছবি তুলতে চান তাহলে ফোন কেনার আগে ফোনের ক্যামেরা কোয়ালিটি দেখে নিবেন। এমনিতে হাই কোয়ালিটি ছবি তোলার জন্য 13 MP ব্যাক ক্যামেরা এবং 8 MP ফ্রন্ট ক্যামেরা হলেই যথেষ্ট।
তবে আপনি যদি শুধু HD ছবি তোলার জন্য ফোন কিনতে চান তাহলে 16 মেগাপিক্সেল তার থেকে বেশি মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দেখে কিনবেন। তবে ভিন্ন ভিন্ন ফোনের ক্যামেরা কোয়ালিটি ভিন্ন ভিন্ন। তাই ফোন কেনার আগে ক্যামেরা কোয়ালিটি চেক করে নিবেন।
স্টোরেজ
বর্তমানে বিভিন্ন রকমের স্টোরেজ স্পেস থাকা ফোন পাওয়া যায়। যেমন – 4 GB, 16 GB, 32 GB, 64 GB এবং এর থেকে বেশি পাওয়া যায়। আপনি যে ফোন কিনবেন তাতে যাতে সর্বনিম্ন 32 GB বা 64GB স্টোরেজ স্পেস থাকে।
ইন্টারনাল স্টোরেজ স্পেস যত বেশি হবে তত বেশি অ্যাপ, ভিডিও, গেইম, ফাইল ইত্যাদি আপনার ফোনে রাখতে পারবেন। স্পেস কম থাকলে ফোনে বেশি অ্যাপ ইনস্টল করতে পারবেন না। আপনার ফোন স্লো কাজ করবে। আমি মনে করি, 64 GB ইন্টারনাল স্টোরেজ হলে সবচেয়ে বেশি ভালো।
ব্র্যান্ড
স্মার্টফোন কেনার আগে অবশ্যই ব্র্যান্ড এবং কোম্পানি দেখে নেওয়া উচিত। কারণ নন-ব্র্যান্ডের ফোনগুলো মোটামুটি খারাপ হয়। ভালো কোম্পানি ব্র্যান্ডের মোবাইলের কোয়ালিটি, স্টাইল, ফাংশন, কর্মক্ষমতা অনেক ভালো এবং বেশি।
টাকা দিয়েই যেহেতু ফোন কিনছেন তাই একটি ভালো ব্র্যান্ড যেমন – Xiomi, Vivo, Samsung, Oppo, Nokia, Asus ইত্যাদি ভালো ব্র্যান্ড দেখে কিনবেন।
আরেকটি সুবিধা হচ্ছে ভালো ব্র্যান্ডের মোবাইল কোম্পানির সার্ভিস সেন্টার সব জায়গায় পাওয়া যায়। তাই কখনো যদি ফোন খারাপ হয় তখন সহজেই নিজের ওয়ারেন্টি কার্ড দেখিয়ে ফ্রিতে ঠিক করে নিতে পারবেন এবং সার্ভিস সেন্টারে কাজও ভালো হয়।
তাই ভবিষ্যতে আপনার যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই সব সময় একটা ভালো কোম্পানির ফোন কেনার চেষ্টা করবেন।
তাহলে আজ এখানেই থাকলো। আশা করি, ফোন কেনার আগে আপনি যদি উপরের বিষয়গুলো খেয়াল রাখেন তাহলে অবশ্যই একটি ভালো, সুন্দর এবং সব ধরনের ফিচার সহ মোবাইল পেয়ে যাবেন। আমার এ আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার পরিজনদের সাথে শেয়ার করবেন।ধন্যবাদ।