স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে মেথির উপকারিতা!

ভাল স্বাস্থ্য আমাদের সবারই কাম্য। কিন্তু ভাল স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত যত্ন। কেবল সঠিক পরিচর্যাই আপনার স্বাস্থ্য ঠিক রাখবে ইনশাআল্লাহ। স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য অন্যতম হল মেথি। মেথির উপকারিতা অনেক। তাই মেথির উপকারিতা নিয়ে আমাদের আজকের এই লেখা। মেথির নানা বিধ উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করার চেষ্টা করব। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক।

মেথির উপকারিতা

১) ডায়াবেটিস

মেথিতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার এবং আরো অনেক উপাদান থাকে যেগুলো হজম এবং শরীরের কার্বোহাইড্রেট আর সুগার শোষণ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।মেথি শরীরের ইনসুলিন নিঃসরণ মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

বর্তমানে করা রিসার্চ থেকে আমরা জানতে পারি,প্রতিদিন গরম জলে ভিজানো ১০ গ্রাম মেথির বীজ ডায়বেটিস টাইপ ২ নিয়ন্ত্রণ করতে দারুণ কাজ করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ইনসুলিন প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়ার জন্য মেথির গম দিয়ে বানানো রুটি, পাউরুটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

পড়ুনঃ বেদানার ১১ উপকারিতা

২) হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় মেথি

হার্টকে সুস্থ রাখতে মেথির উপকারিতা অপরিসীম।মেথি এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখা মেথির বীজ সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেলে হার্টের ব্যথা বা বুকের জ্বালাপোড়ার সমস্যা ওষুধ না খেয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কমিয়ে ফেলা সম্ভব।

পড়ুনঃ ৫ টি ঔষধি গাছের কথা

৩) কোলেস্টেরল

মেথি রক্তে উপস্থিত কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করার পাশাপাশি শরীরকে কোলেস্টেরল থেকে ক্ষতি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতেও কার্যকরী। মেথি আমাদের শরীরের লিপোপ্রোটিন ব্যান্ড প্রোটিন কমাতে সাহায্য করে। মেথির বীজে উপস্থিত থাকা স্টেরয়েডাল স্যাপোনিল ক্ষুদ্রান্তে থাকা কোলেস্টেরলের আত্তীকরণ হার কমিয়ে দেয়। লিভারে উৎপন্ন তরলের শোষণের হারকেও কমিয়ে দেয়।চর্বিযুক্ত খাবার থেকে নির্গত হওয়া ট্রাইগ্লিসারাইড এর শোষণের মাত্রাও মেথি কমিয়ে দেয়।

পড়ুনঃ ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করার ঘরোয়া উপায়

৪) বাতের ব্যাথায় মেথি

প্রায় সকল চল্লিশোর্ধ্ব মানুষের বাতের ব্যথার সমস্যা হয়ে থাকে। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ-এর প্রতিবেদন অনুসারে মেথির ইস্ট্রোজেনের উপর প্রভাব এতটাই যে বর্তমানে ডাক্তাররা মেথির ব্যবহারকে ইস্ট্রোজেন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির সাথে তুলনা করছেন।বাতের তীব্র ব্যথা কমাতে মেথি ভীষণভাবে কার্যকরী।

৫) পিরিয়ডের ব্যাথা

পিরিয়ডের ব্যাথা প্রায় সকল মেয়েদের জীবনেই বিভীষিকার মতন এবং মাসের ওই বিশেষ দিনগুলোতে মেজাজ খারাপ থাকা বা স্কুল কলেজ কামাই করার মতো ঘটনা প্রায় সবার জীবনেই ঘটেছে।তবে এখন আর চিন্তা নেই- রান্নাঘরেই মিলবে এর সমাধান! 

পিরিয়ডের ব্যাথা তখন শুরু হয় যখন ইউটেরাসে মৃত টিস্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে।তাই ওই বিশেষ দিনগুলোতে মেথি দিয়ে বানানো গরম গরম চা পিরিয়ডের ব্যাথার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার মোক্ষম উপায়।

৬) হজমের সমস্যায় মেথি

হজমের ক্ষমতা এবং শরীরের কার্বোহাইড্রেট আর সুগার শোষণ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মেথির বীজের উপস্থিত কার্বোহাইড্রেট এবং অন্যান্য উপাদান কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে মেথির বীজ ভেজানো পানি খেলে হজমের সমস্যা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়।

৭) ক্যান্সার

রিসেন্ট একটা গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে মেথি ব্যবহার করার ফলে ক্যান্সার হবার আশংকা কমেছে।বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই রান্নায় মেথি ব্যবহার করা উচিত কারণ মেথিতে উপস্থিত ট্রাইগ্লিসারাইড এস্ট্রোজেন গ্রহণকারী মডিউলেটরের কাজ করে এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষগুলোকে উদ্দীপ্ত করতে করতে একসময় ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

৮) ব্রেস্টের দুধ উৎপাদন

মেথিতে উপস্থিত ডায়োসজেনিন দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।মেথিতে উপস্থিত ভিটামিন, মিনারেল মায়ের দুধের পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে নবজাতকের জন্য উৎকৃষ্ট মানের করে তোলে।

৯) ওজন কমাতে মেথি

মেথির দানায় লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, ভিটামিন বি সিক্স, প্রোটিন, ফাইবার, অনেক উপকারী ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ থাকে।এবং এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিফ্লামেটরী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

মেথির বীজে এক ধরনের ফাইবার থাকে যা গ্যালাক্টোমান্নান নামে পরিচিত যা সহজে পানিতে গুলে যায়,যা ওজন পরিচালনায় এবং ক্ষুধার অনভূতিকে প্রশমন করে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া শরীরের মেটাবলিজম ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে যা মেদ ঝরে যাওয়া এবং অন্য এডিপোশ টিস্যুর কর্মক্ষমতাকে হ্রাস করে। 

২০১৫ সালের এক গবেষণায় জানা গেছে, নয় জন অতিরিক্ত ওজনের কোরিয়ান মহিলা লাঞ্চের আগে একটি শিম, মেথি এবং প্লাসিবো চা পান করেতেন।রিপোর্ট অনুযায়ী যারা মেথি চা পান করতেন তারা কম ক্ষুধা এবং পূর্ণ অনুভব করতেন।

আরও পড়ুনঃ পেটের মেদ কমানোর সহজ ৫ টি ব্যায়াম

১০) রক্তচাপ

মেথির বীজে উচ্চ পটাসিয়াম এবং ফাইবারের উপস্থিতি রক্তচাপ হ্রাসে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।এক বা দুই চা চামচ মেথির দানা পানির মধ্যে দুই তিন মিনিট ফুটিয়ে নিন, এরপরে ছেঁকে নিয়ে মেথির দানা গুলো ব্লেন্ডারে দিয়ে পেস্ট বানান এবং সেটি দিনে দুবার খেয়ে নিন। এটি অনুসরণ করলে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আপনি উন্নতি লক্ষ্য করতে পারবেন।

১১) কিডনির কার্যকারিতা

২০০৭  সালে “ফাইটোথেরাপি রিসার্চ”-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, মেথি ক্যালসিয়াম অক্সালেট জাতীয় কিডনির পাথর প্রতিরোধ করতে সক্ষম। গবেষণার ফলাফলে দেখা গিয়েছে মেথি গ্রহণকারী প্রাণীগুলির কিডনিতে উল্লেখযোগ্যভাবে কম ক্যালসিফিকেশন হয়ে। 

১২) লিভার

২০০৭ সালে প্রকাশিত “জীববিজ্ঞান ও বিষবিদ্যাবিষয়ক” গবেষণায় এস কাভিয়ারসন বলেছেন, মেথি অ্যালকোহলের ক্ষতির হাত থেকে লিভারকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।অ্যালকোহলে আসক্ত মানুষের চর্বিযুক্ত লিভার ও ফাইব্রোসিস থাকে যা কোলাজেন সংশ্লেষণের মাধ্যমে নির্মূল করা যেতে পারে।গবেষণার মাধ্যমে দেখা যায় যে লিভারের এন্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমগুলোর ক্রিয়া-কলাপ বাড়াতে মেথি ভূমিকা পালন করে। তাই সব মিলিয়ে মেথির উপকারিতা অপরিহার্য।

আরও পড়ুনঃ


তাহলে আজ এখানেই থাকলো। আশা করি মেথির উপকারিতা সম্পর্কে কিছুটা হলেও তুলে ধরতে পেরেছি। পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *