সিলোম কি?
সিলোম কি? সিলোম হচ্ছে এমন কোনো দেহ গহ্বর যা মেসোডার্ম থেকে উদ্ভূত এবং পেরিটোনিয়াম নামে মেসোডার্ম কোষস্তরে আবৃত।তিন কোষস্তর বিশিষ্ট প্রাণীর দেহ প্রাচীর এবং পরিপাক নালীর প্রাচীরের মধ্যবর্তী ফাঁকা গহ্বরকে দেহবিবর বা সিলোম বলা হয়।
সিলোম কত প্রকার
প্রাণিদের তিন ধরনের সিলোম দেখা যায়। যথাঃ
১। অ্যাসিলোমেটঃ এদের দেহে সিলোমের পরিবর্তে ভ্রূণীয় পরিস্ফুটনের সময় অন্তঃস্হ ফাঁকা স্হানটি(ব্লাস্টোসিল)মেসোডার্মাল স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা কোষে পূর্ণ থাকে।পরিফেরা,নিডারিয়া,প্লাটিহেলমিনথিস পর্বভুক্ত প্রাণিরা অ্যাসিলোমেট।উদাহরণ -হাইড্রা, যকৃত কৃমি ইত্যাদি।
২। স্যুডোসিলোমেটঃএসব প্রাণি ও সিলোম বিহীন তবে ভ্রণীয় পরিস্ফুটনের সময় অন্তঃস্থ ফাঁকা স্হানটিকে ঘিরে কখনও কখনও মেসোডার্মাল কোষ স্তর অবস্থান করে।Nematoda, Rotifera, Kinorhyncha প্রভৃতি পর্বভুক্ত প্রাণিরা। উদাহরণ -চোখ কৃমি।
৩। ইউসিলোমেটঃপ্রকৃত সিলোমযুক্ত প্রাণী। যাদের ভ্রূণীয় মেসোডার্মের অভ্যন্তর থেকে গহ্বর রুপে সিলোম উদ্ভূত হয় এবং চাপা,মেসোডার্মাল এপিথেলিয়াল কোষে গঠিত পেরিটোনিয়াম স্তরে সম্পূর্ণ বেষ্টিত থাকে।Mollusca,Annelida,Arthropoda,Echinodermata,Hemichordata,ChordataChordata প্রভূতি পর্বভুক্ত প্রানী। শামুক,ঝিনুক, কেঁচো, ইলিশ ইত্যাদি।
পড়ুনঃ কোষ কি / কোষ কাকে বলে? কোষের প্রকারভেদ
সিলোমের উপর ভিত্তি করে বহুকোষী প্রানীর শ্রেণিবিন্যাস
সিলোমের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে বহুকোষী প্রানীদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
১। সিলোমবিহীন বা Aceolomata প্রাণীঃ যেসব বহুকোষী প্রানীর দেহে সিলোম অনুপস্থিত থাকে তাদেরকে সিলোম বিহীন প্রাণী বলা হয়।Porifera,Cnidaria,Ctenopera পর্বের প্রাণী।
২। সিলোমযুক্ত বা Coelomata প্রাণীঃ যাসব প্রাণীর দেহে মেসোডার্ম স্তর উদ্ভূত সিলোম বিদ্যমান তাদেরকে সিলোমযুক্ত প্রাণী বলে।Annelida,Arthopora,Mollusca,Echainodermata,
সিলোমের উৎপত্তি
প্রকত সিলোমযুক্ত প্রাণীদের ভ্রুণীয় বিকাশকালে মেসোডার্ম কোষস্তর থেকে সিলোম সৃষ্টি হয়।উৎপত্তি অনুসারে সিলোমকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
- Schezoceolous সিলোম
- Enterocoeleous সিলোম
১। Schizocoelous সিলোমের উৎপত্তিঃ গ্রিক শব্দ schizein অর্থ বিচ্ছিন্ন বা বিভেদিত হওয়া।এ ধরনের সিলোমের উৎপত্তির শুরুতে ভ্রূণীয় ব্লাস্টোপোরের নিকটতম অঞ্চল থেকে কিছু এক্টোডার্ম কোষ বিচ্ছিন্ন হয়ে এক্টোডার্ম ও এন্ডোডার্মের মধ্যবর্তী অঞ্চলে জমা হয়।এসব কোষ বিভাজিত হয়ে দুটি পার্শ্বীয় অনুদৈর্ঘ্য মেসোডার্ম ব্যান্ড গঠন করে।এই মেসোডার্ম ব্যান্ড বিভেদিত হয়ে বাইরের দিকে প্যারাইটাল এবং ভিতরের দিকে ভিসেরাল স্তর সৃষ্টি করে।এই দুই স্তরের মাঝখানে সে সিলোমীয়,গহ্বর সৃষ্টি হয় তাকে Schizocoelous সিলোম বলে।
২। Enterocoelous সিলোমের উৎপত্তিঃ গ্রিক শব্দ enteron অর্থ পরিপাক নালী।এধরনের সিলোমের উৎপত্তির শুরুতে ভ্রূণীয় আর্কেন্টেরন বা আদি পরিপাকনালীর পৃষ্ঠপার্শ্বীয় অঞ্চল থেকে দুটি পার্শ্বীয় অনুদৈর্ঘ্য সিলোমিক নালী উপবৃদ্ধি আকারে সৃষ্টি হয়। নালী দুটি সৃষ্টির মুহূর্তে আর্কেন্টেরন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে।বর্ধিত নালী দুটি পরিশেষে অঙ্কীয় দিকে এসে পরস্পর মিলিত হয়ে সিলোম রুপে আত্মপ্রকাশ করে।
আজকের মত এখানেই শেষ করলাম। সিলোম কি? সিলোম কত প্রকার ও কি কি? উৎপত্তি সহ উদাহরণ নিয়ে লেখা এই আর্টিকেলটি ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।