আজ আমরা সাইবার ক্রাইম কি? সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
বর্তমানে কম-বেশি সবাই কোন না কোন ভাবে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত। আর ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত সবাই মোটামোটি সাইবার ক্রাইম শব্দটির সাথে পরিচিত। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে অনেক সাইবার ক্রাইম সংগঠিত হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশেই না, বিশ্বের প্রতিটি দেশে-ই সাইবার ক্রাইমের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান সময়ের ক্রাইম গুলোর মধ্যে সাইবার ক্রাইম একটা ভীতিজনক শব্দে পরিণত হয়েছে।
প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোক সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। মূলত এই ক্রাইমের টার্গেট হচ্ছেন যেসকল ইন্টারনেট ব্যহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ নয়।
বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর সাইবার ক্রাইমের জন্য শত শত কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছ। ২006 সালে কম্পিউটার ইকোনোমিক্স জরিপ অনুযায়ী ভাইরাসের কারণে ১৩.৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সারাবিশ্ব।
সাইবার ক্রাইম কোন নতুন অপরাধ নয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য চুরি, তথ্য বিকৃতি, মানি লন্ডারিং, জালিয়াতি, ব্ল্যাকমেইল ইত্যাদির মতো অপরাধ গুলো করা হলে তা সাইবার ক্রাইম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সাইবার ক্রাইম কি?
ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংঘটিত সকল ধরনের অপরাধই সাইবার ক্রাইমের অন্তর্ভুক্ত। মূলত, সাইবার ক্রাইম হচ্ছে এমন একটি অপরাধ, যাতে প্রধানত কম্পিউটার বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র ব্যবহৃত হয় এবং অপরাধীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী অপরাধগুলো করে।
সাইবার ক্রাইমকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
- ইনসাইডারস
- হ্যাকার
- ভাইরাস রাইটারস এবং
- ক্রিমিনাল গ্রুপ।
বিভিন্ন প্রকার সাইবার ক্রাইম
১. হ্যাকিং
সাইবার ক্রাইমের প্রথমেই আসে হ্যাকিং। হ্যাকিং এবং হ্যাকার শব্দ দুটির সাথে আমরা সবাই মোটামোটি পরিচিত। সাধারণত হ্যাকিং মানে হচ্ছে কারো অনুমতি ব্যতিত তার ইলেকট্রনিক ডিভাইসের কন্ট্রোল নেওয়া বা তার ক্ষতি করা। আর যারা হ্যাকিং-এর এসব কাজগুলো করে থাকেন তাদেরকে হ্যাকার বলা হয়।
আরো পড়ুন- হ্যাকিং থেকে আপনার এন্ড্রয়েড ফোনকে নিরাপদ রাখুন সহজ ৫ উপায়ে!
একজন হ্যাকার আপনার কম্পিউটার, মোবাইল বা অন্য যেকোন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ভাইরাস বিস্তার করে আপনার গুরুত্বপূর্ণ যেকোন তথ্য আুরি বা নষ্ট করে দিতে পারে। তাছাড়া হ্যাকাররা আপনার সোসাল একাউন্ট হ্যাক করে আপনার যেকোন ক্ষতি করতে পারে। আবার অনেক হ্যাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট বা ই-কমার্স ওয়েবসাইটের তথ্য বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর হ্যাক করে আপনাকে ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। কয়েক প্রকারের হ্যাকিং আছে। তার মধ্যে ব্লাক হ্যাট হ্যাকিং সবচেয়ে ক্ষতিকর। ব্লাক হ্যাট হ্যাকাররা তাদের টার্গেটদের বিরাট ক্ষতির মুখে ফেলে।
২. পর্নোগ্রাফি
পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে অনেকেই হ্যাকারদের কবলে পড়ে। বেশির ভাগ পর্ণ সাইটগুলোতেই ক্ষতিকর কম্পিউটার ভাইরাস থাকে। যেকোন সময় হ্যাকাররা পর্ণসাইটে ভিজিটকারী ব্যক্তির ডিভাইস হ্যাক করে নিতে পারে।
আরো পড়ুন- ভিপিএন (VPN) কি? ভিপিএন ব্যবহার করে নিজেকে গোপন রাখা যায় যেভাবে!
তাছাড়া অনেক সাইট পপ-আপ এড সো করে আবার অনেক সাইট কখনো কখনো ইমেইল এড্রেস চেয়ে থাকে। এই সকল কাজের মাধ্যমে বা যারা এসকল সাইট থেকে ভিডিও ডাউনলোড দেয়, তারা না জেনে অনেক সময় ভিডিওর সাথে হ্যাকারদের তৈরি করা অনেক ভাইরাস ফাইল ডাউনলোড করে নিতে পারে। এসকল ফাইলের মাধ্যমে হ্যাকাররা ডিভাইসের কন্ট্রোল নিজেদের কাছে নিয়ে নিতে পারে। ফলে তারা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
৩. ড্রাগ ব্যবসা
ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন কি না হয়? মাদক থেকে শুরু করে নারী-শিশু পাচার সবই এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়। ড্রাগ ব্যবসায়ীরা তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মাদকদ্রব্যের ক্রয়, বিক্রয় ইত্যাদি কাজগুলো বিশ্বব্যাপী করে যাচ্ছে। যা মারাত্মক সাইবার ক্রাইম। তারা গোপনে এসকল কাজ করে যাচ্ছে।
৪. নারীর নির্যাতন
সাইবার ক্রাইমের আরেকটা বড় ইস্যু হচ্ছে নারী নির্যাতন। শত শত নারী প্রতিনিয়ত সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। এখানে অভিনেত্রী থেকে শুরু করে একটা সাধারণ মেয়েও বাদ যাচ্ছে না। ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতার অভাব বা সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে ভাল ধারণা না থাকায় অনেকেই সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়। মেয়েদের সোসাল মিডিয়া একাউন্ট হ্যাক করে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা, যৌণ দৃশ্য প্রকাশ করা বা প্রকাশ করার হুমকি দেওয়া কিংবা মেয়েদের ছবি ব্যবহার করে ফেইক একাউন্ট খোলার মতো সাইবার ক্রাইম প্রায়ই সংঘটিত হচ্ছে।
তাছাড়া প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে অনেকেই এর অপব্যবহার করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে মেয়েদের ফেইস ব্যবহার করে কৃত্রিম যৌন দৃশ্য তৈরি করে ইন্টারনেটে প্রকাশ করছে। ফলে লক্ষ লক্ষ মেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আবার অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিচ্ছে।
আবার পর্নোগ্রাফি সাইটগুলোতে অনেক মেয়ের ছবি পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো তাদের সোসাল মিডিয়া একাউন্ট থেকে নিয়ে এসকল পর্নোগ্রাফি সাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে। ফলে তাতেও অনেকেই নানা-মুখী সমস্যার শিকার হচ্ছে। আর এসকল অপরাধের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে।
৫. স্প্যামিং এবং জাঙ্ক মেইল
সাধারণ মানুষদের ঠকানোর একটি কার্যকরী উপায় হলো এটি। বিভিন্ন সময় অনেক মানুষকে বিভিন্ন ফেইক অফিস নম্বর থেকে ফোন করে বলা হয় আমি বিকাশ থেকে বা এমুক কোম্পানি থেকে বলছি, আপনি লক্ষ টাকা লটারি জিতেছেন। এর মাধ্যমে তারা মানুষকে বোকা বানিয়ে তাদের বিভিন্ন একাউন্ট নম্বর হাতিয়ে নেয়। ফলে লটারির লোভে পড়ে অনেকে বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মখীন হয়।
তাছাড়া এমন আরো অনেক সমস্যার কথা বলে বা বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, পাসওয়ার্ড, একাউন্ট নম্বর নিয়ে নেয়। এই কাজ গুলো হ্যাকাররা সাধারণত ফোন কলের মাধ্যমে করে থাকে আবার অনেক সময় মেসেজ বা ইমেইলের মাধ্যমেও করে থাকে।
সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে আইন
উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও সাইবার ক্রাইম সংঘটিত হয়ে আসছে। উন্নত বিশ্বের সাইবার ক্রাইম বেশি হওয়ায় সাইবার ক্রাইমকে অপরাধের তালিকায় শীর্ষে রাখা হয়েছে। ফলে সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশেও সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণের জন্য একাধিক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ তে এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া আছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৬ ধারায় বলা আছে–
“যদি কোনো ব্যক্তি জনসাধারণের বা কোনো ব্যক্তির ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে বা ক্ষতি হবে মর্মে জানা সত্ত্বেও এমন কোনো কাজ করেন, যার ফলে কোনো কম্পিউটার রিসোর্সের কোনো তথ্যবিনাশ, বাতিল বা পরিবর্তিত হয় বা তার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাস পায় বা অন্য কোনোভাবে একে ক্ষতিগ্রস্ত করে| এমন কোনো কম্পিউটার সার্ভার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করার মাধ্যমে এর ক্ষতিসাধন করেন, কিন্তু তিনি মালিক বা দখলদার নন, তাহলে তাঁর এই কাজ হবে একটি হ্যাকিং অপরাধ| কোনো ব্যক্তি হ্যাকিং অপরাধ করলে তিনি অনূর্ধ্ব ১০ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন | এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন বা উভয়দণ্ড দেওয়া যেতে পারে |”
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় বলা আছে–
“যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে বা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহলে তার এই কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে |”
সর্বোপরি বলা যায়, সাইবার ক্রাইম একটি মারাত্মক অপরাধ। যা দেশ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। আমরা সবাই সাইবার ক্রাইম থেকে বিরত থাকবো এবং অন্যকেও সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সচেতন করবো। সাইবার ক্রাইমের কবলে পড়লে যেমন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তেমনি সাইবার অপরাধ করেও কেউ রেহাই পাবে না। তাই সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে আমাদের সবারই সচেতন থাকতে হবে। আর অবশ্যই এমন জগ্ন অপরাধ থেকে আমরা সবাই বিরত থাকবো৷
আজ এই পর্যন্তই। আশা করি সাইবার ক্রাইম কি? সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন! নিয়ে লেখা এই আর্টিকেলটি আপনার ভাল লীছে। বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে যারা সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে এখনো সচেতন নয় অবশ্যই তাদের কাছে শেয়ার করবেন। ভাল থাকবে, সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ।
Why
Phone pay আমাকে চিট করেছে
Phonepe থেকে আমার টাকা কেটে নিয়েছে