Homeবিজ্ঞানজীববিজ্ঞানশ্বসনতন্ত্র কি বা কাকে বলে? শ্বসনতন্ত্রের প্রকারভেদ ও পরিচিতি

শ্বসনতন্ত্র কি বা কাকে বলে? শ্বসনতন্ত্রের প্রকারভেদ ও পরিচিতি

মানবদেহের যে তন্ত্রের মাধ্যমে শ্বসনকার্য সম্পন্ন হয় তাকে শ্বসনতন্ত্র বলে। অর্থাৎ, যে তন্ত্রের মাধ্যমে আমরা শ্বাসকার্য থেকে শুরু করে অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করি তাকে শ্বসনতন্ত্র বলে। আর শ্বসনের সাথে যেসব অঙ্গ জড়িত তাকে শ্বসনিক অঙ্গ বলে।

শ্বসনতন্ত্রের প্রকারভেদ

মানুষের শ্বসনতন্ত্র ৩ প্রকার। এগুলো হলো –

  1. বায়ুগ্রহণ ও ত্যাগ অঞ্চল
  2. বায়ু পরিবহন অঞ্চল
  3. শ্বসন অঞ্চল

চলুন তাহলে, এবার আমরা এই ৩ প্রকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

পড়ুন – রক্ত কি? রক্তের প্রকারভেদ ও রক্তের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত

বায়ুগ্রহণ ও ত্যাগ অঞ্চল

শ্বসনতন্ত্রের বায়ুগ্রহণ ও ত্যাগ অঞ্চলের ৬ টি অংশ রয়েছে। এরা পরপর সিকুয়েন্স অনুসারে সাজানো থাকে। এদের সিকুয়েন্স হচ্ছে –

  • সম্মুখ নাসারন্ধ্র
  • ভেস্টিভিউল
  • নাসাগহ্বর
  • পশ্চাৎ নাসারন্ধ্র
  • নাসা গলবিল
  • স্বরযন্ত্র

সম্মুখ নাসারন্ধ্র

শ্বসনতন্ত্রের প্রথম অংশই হচ্ছে সম্মুখ নাসারন্ধ্র। এটি হলো আমাদের নাকের ছিদ্র। এ ছিদ্র দিয়ে আমাদের নাকে বাসাত ঢুকে এবং বের হয়। এর সাহায্য কোন বস্তুর সুগন্ধ ও দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। ছিদ্র দুটির মাঝে একটা পর্দা থাকে যা দিয়ে ছিদ্র দুটো আলাদা করা। এই পর্দাকে নাসাল সেপ্টাল বলা হয়।

ভেস্টিভিউল

নাসারন্ধ্রের পরের অংশ হলো ভেস্টিভিউল। নাকের ছিদ্রের ভেতরের লোমশ অংশটি হচ্ছে ভেস্টিভিউল, যেখানে নাকের লোম থাকে। এ লোম বাতাস পরিষ্কারে সাহায্য করে।

পড়ুন – নিউক্লিয়াস কাকে বলে? নিউক্লিয়াসের গঠন ও কাজ

নাসাগহ্বর

নাকের ভেতরের গহ্বর বা ফাঁকা জায়গায় হচ্ছে নাসাগহ্বর। এখানে মিউকাস ক্ষরণকারী কোষ এবং অলফ্যাক্টরি কোষ থাকে। মিউকাস হলো পিচ্ছিল এক ধরণের পদার্থ, অলফ্যাক্টরি কোষ হচ্ছে আমাদের ঘ্রাণ নেওয়ার মতো ক্ষমতাধারী কোষ।

পশ্চাৎ নাসারন্ধ্র

নাসাগহ্বরের পেছনের অংশ হচ্ছে পশ্চাৎ নাসারন্ধ্র। এদের সংখ্যা দুইটি। এদেরকে কোয়ানা বলে। এর সাহায্যে বাতাস নাসাগহ্বর থেকে নাসা গলবিলে প্রবেশ করে।

নাসা গলবিল

পশ্চাৎ নাসারন্ধ্র থেকে মুখ গলবিল পর্যন্ত এর বিস্তৃতি।

স্বরযন্ত্র

স্বরযন্ত্রের শুরু হয় মুখ গলবিল থেকে। এর ভেতরে এমন কিছু সংকোচন প্রসারণশীল পেশী আছে যেগুলো আমাদের গলার কন্ঠস্বর তৈরি করতে পারে।

মানুষের গলার সামনে একটা উঁচু অংশ থাকে। একে Adam’s Apple বলা হয়। এর ভেতরে স্বররজ্জজু বা Vocal Cord থাকে যা আমাদের গলার স্বর তৈরি করতে সাহায্য করে। এর ঠিক নিচে দুুুুটো থাইরয়েড গ্রন্থি থাকে যা থেকে হরমোন বের হয়।

স্বররজ্জুর মাধ্যমে ফুসফুস দিয়ে বাতাস বের হয়। আর যখন এটি বন্ধ থাকে তখন আমাদের গলার স্বর শোনা যায় না, আর যখন এটি খুলা থাকে তখন গলার স্বর তৈরি হয়। একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে স্বররজ্জু কখনোই আমাদের মুখের ভাষা বা ধ্বনি তৈরি করতে পারে না।

আমরা আমাদের জিহ্বা, গলবিল ও ঠোঁটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধবনি তৈরি করতে পারি, কিন্তু আমাদের স্বররজ্জু দিয়ে ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাস সেই শব্দ কতটা জোরে বা আস্তে শোনাবে সেটা নির্ভর করে। কাজেই –

আমাদের উচ্চারণ করা শব্দের কারণ – জিহ্বা, গলবিল, ঠোঁট। আর আমাদের উচ্চারণ করা শব্দের তীব্রতার কারণ – স্বররজ্জু।

বায়ু পরিবহন অঞ্চল

বায়ু পরিবহন অঞ্চলের কয়েকটা অংশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –

পড়ুন – মাইটোসিস কি? মাইটোসিস কোষ বিভাজনের গুরুত্ব

শ্বাসনালী

শ্বাসনালীর বিস্তৃতি হচ্ছে স্বরযন্ত্রের পর থেকে ৫ ম বক্ষদেশীয় কশেরুকা পর্যন্ত। এটি ১২ সে.মি. লম্বা এবং এটি মোট ১৬ – ২০ টা C আকৃতির তরুনাস্থি নিয়ে গঠিত হয়। শ্বাসনালীর ভেতরের প্রাচীরে সিলিকা নামক এক ধরণের পদার্থ থাকে যা শ্বাসনালীর মাঝে অবাঞ্ছিত বস্তু প্রবেশ রোধ করে।

অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে, তরুনাস্থি C আকৃতির না হয়ে যদি গোল হত তাহলে কি কোন সমস্যা হতো?

তরুনাস্থি C আকৃতির না হয়ে যদি গোল হতো তখন বড় সমস্যা হতো। কেননা স্বরযন্ত্রের পেছনে গোলাকার অন্ননালী থাকে, তখন এটি অস্বাভাবিকভাবে সংকোচন প্রসারণ করতে পারতো না। কারণ আমরা খাবার খাওয়ার সময় অন্ননালী সংকোচ প্রসারণ হয়।

ব্রংকাস

শ্বাসনালী দুইভাগে বিভক্ত হয়ে ২ টা ব্রংকাসে ভাগ হয়। এগুলো হলো –

  • ডান ব্রংকাস
  • বাম ব্রংকাস

ডান ব্রংকাস ছোট ও প্রশস্ত থাকে এবং বাম ব্রংকাস লম্বা ও সরু হয়। ডান ফুসফুস বেশি ছোট বলে এটি জীবাণু দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয়।

আমাদের শ্বসনতন্ত্রের মোট বায়ু পরিবহন চক্রটা ঠিক নিচের মতো –

সম্মুখ নাসারন্ধ্র – ভেস্টিভিউল – নাসাগহবর – পশ্চাৎ নাসারন্ধ্র – নাসাগলবিল – স্বরযন্ত্র – শ্বাসনালী – ব্রংকাস – ফুসফুস

শ্বসন অঞ্চল

শ্বসন অঞ্চলের মাধ্যমে বাতাস বিনিময় হয় অর্থাৎ, বাইরে থেকে শরীরের ভিতরে বাতাস যায় এবং শরীরের ভেতরের দূষিত বাতাস বাইরে বেরিয়ে আসে।

পড়ুন – কোষ বিভাজন কি? কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ

শ্বসন অঞ্চলের প্রধান অংশ হচ্ছে ফুসফুস। একটা স্বাভাবিক ফুসফুসের রং হালকা গোলাপী রঙের হয়। ফুসফুসের প্রতিটা খন্ডকে লোব বলে। একটা ফুসফুসের ২ টা অংশ থাকে। যথাঃ

  • ডান ফুসফুস
  • বাম ফুসফুস

ডান ফুসফুসের লোবের সংখ্যা ৩ আর বাম ফুসফুসের লোবের সংখ্যা ২ টি। ফুসফুসের প্রতিটা কাটা অংশকে ফিশার বলে। আর এ ফিশারগুলোই ফুসফুসকে খন্ড বা লোবে পরিণত করে। ফুসফুস প্লুরা নামক আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে। প্লুরাতে দুটো স্তর থাকে। এগুলো হলো –

  • বাইরের স্তর – প্যারাইটাল
  • ভেতরের স্তর – ভিসেরাল

আবার, ব্রংকাসের যে অংশ ফুসফুসে প্রবেশ করে তাকে হাইলাম বলে।

আরও পড়ুন – কোষ কি? কোষের প্রকারভেদ

ব্রংকোপালমোনারী সেগমেন্ট

ফুসফুসের লোবের ভেতরে আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ আছে যাদেরকে লোবিউল বা ব্রংকোপালমোনারী সেগমেন্ট বলে। প্রত্যেকটা ফুসফুসে ১০ টা করে মোট ২০ টা লোবিউল থাকে। লোবিউল থাকার কারণ হচ্ছে – যখন একটা লোবিউল জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় তকন আরেকটা লোবিউল জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় না।

আবার কিছু কিছু লোব আছে যেগুলো ফুসফুসের নির্দিষ্ট একটা লোবিউলে হয়। তাই কোন রোগ হলে সেটা কোন লোবিউলল হতে পারে সেটা সহজেই সনাক্ত করা যায়। যেমন – ক্যান্সার, যক্ষ্মা। এগুলো নির্দিষ্ট কিছু লোবিউলে হয় বলেই ডাক্তাররা সেসব রোগকে সহজেই সনাক্ত করতে পারে।

শ্বসন বৃক্ক

শ্বাসনালী বা ট্রাকিয়া থেকে বিভিন্ন অংশ পার হয়ে বাতাস যেভাবে ফুসফুসে প্রবেশ করে তার ডায়াগ্রাম হলো –

ট্রাকিয়া – প্রাইমারী ব্রংকাস – সেকেন্ডারি ব্রংকাস / লোবার ব্রংকাস – টারশিয়ারি ব্রংকাস – টার্মিনাল ব্রংকিওল – শ্বসন ব্রংকিওল – অ্যালভিওলার থলি

বৃক্কের মধ্যে ব্রংকাস ও ব্রংকিওল তরুণাস্থি দিয়ে তৈরি। আবারট্রাকিয়ার ভেতরের তল সিলিয়াযুক্ত সিউডো স্ট্যাটিফাইড স্তম্ভাকার এপিথেলিয়াম দিয়ে আবৃত। আবার এপিথেলিয়াম মানে আবরণী, অর্থাৎ এরা ট্রাকিয়ার ভেতরের আবরণ তৈরি করতে পারে।

অ্যালভিওলাসের গঠন

অ্যালভিওলাস সরল আইশাকার এপিথেলিয়াম দিয়ে আবৃত। এর আবরণ অনেক পাতলা থাকে যাতে করে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড সহজে পরিবহন করতে পারে। এই অ্যালভিওলাসের মাধ্যমে আমাদের ফুসফুসের সমস্ত গ্যাস বিনিময় ঘটে। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ৭০০ বিলিয়ন অ্যালবিওলাই থাকে।

অ্যালভিওলাসে ৩ ধরণের কোষ থাকে। যথা-

টাইপ – ০১ : এতে গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে।

টাইপ – ০২ : এ ধরণের কোষে সারপেকটেন্ট ক্ষরণ করে।

টাইপ – ০৩ : এ ধরণের কোষগুলো জীবাণু ধ্বংস করে।

সারফেকট্যান্ট

সারফেকটেন্টের রাসায়নিক নাম ডাইপালমিটইল ফসফাটিডাইল কোলিন বা Dipalmitoyl Lecithin. এর কাজ হচ্ছে পৃষ্টটান না কমিয়ে ফুসফুসকে চুপসে না দেওয়া।


তাহলে আজ এখানেই থাকলো। আশা করি শ্বসনতন্ত্র সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে ছি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আর শ্বসনতন্ত্র সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Recent posts

Recent comments