শীতের শুষ্ক ও ঠান্ডা আবহাওয়ার প্রভাব আমাদের শরীরের পাশাপাশি ঠোঁটেও পড়ে। অনেকের আবার শুধু শীতকালেই নয়, সারাবছরই পড়ে। অর্থাৎ সারা বছরই ঠোঁট শুষ্ক থাকে ও ফেটে যায়। অনেক সময় হাসতে গেলে ঠোঁটে চাপ পড়ে এবং ঠোঁট ফেটে গিয়ে রক্ত বের হয়। এতে খুব অস্বস্তি বোধ হয়। তাই এটি যাতে রোধ করতে পারেন তার জন্যই আজকের এ আর্টিকেলটি লিখা। তাহলে আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই।
ঠোঁট ফাটার কারণ
ঠোঁট ফাটা বন্ধের উপায় খুঁজে নেওয়ার আগে প্রথমেই জেনে নেওয়া উচিত কি কারণে ঠোঁট ফাটে। আমাদের ত্বকে বা চামড়ায় সিবাসিয়াস গ্রন্থি নামক আণুবীক্ষণিক এক্সক্রনিক গ্রন্থি রয়েছে। যা থেকে তৈলাক্ত রস নিঃসৃত হয় যাকে সিবাম বলে। সিবাম আমাদের ঘামের সাথে মিশে পুরো চামড়ায় ছড়িয়ে পড়ে চামড়াকে মসৃণ ও পানিরোধী রাখে। এ কারণে চামড়া ফাটে না।
শীতকালে বাতাসের জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে এ কারণে আমাদের শরীর তেমন ঘামে না। যার ফলে সিবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে বেরিয়ে আসা তৈলাক্ত পদার্থ শরীরের চামড়ায় ঠিকমতো ছড়িয়ে পড়তে পারে না। তখন শরীরের শুকনো জায়গাগুলো কুঁচকে ফেটে যায়। শরীরের অন্যান্য জায়গায় তুলনায় আমাদের ঠোঁটের চামড়া পাতলা ও নরম। এছাড়াও এটি ঠিক নাকের নিচে অবস্থিত। যার ফলে নিঃশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসা গরম বাতাস ঠোঁটকে আরো শুকিয়ে দেয়। এ কারণে ঠোঁট বেশি ফাটে।
ঠোঁট ফাটার আর একটি কারণ হচ্ছে ঠোঁট ও শরীরে আদ্রতার ভারসাম্যের অভাব। শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় ঠোঁট দ্রুত আর্দ্রতা হারায়। এছাড়াও খেয়াল করবেন যেকোনো কারণে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়লে যে কোন মৌসুমে ঠোঁট ফেটে যায়।
এছাড়াও আরো কিছু কারণ রয়েছে যে কারণে ঠোঁট ফাটে। এগুলো হলো – বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটা, পুষ্টিহীনতা, ধূমপান,ভিটামিনের অভাব, প্রখর সূর্যের তাপ, পানিশূন্যতা, বিভিন্ন প্রকার ঔষধ এর প্রভাব ইত্যাদি।
শীতে ঠোঁট ফাটা রোধে করনীয়
শীতে ঠোঁট ফাটা রোধে নিয়মিত ভ্যাসলিন লিপবাম পেট্রোলিয়াম জেলি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও সাথে কিছু ঘরোয়া নিয়ম মেনে চললে ঠোঁটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
সমাধান-১
1 চা চামচ গ্লিসারিন ও 1 চা চামচ মধু মিশিয়ে একটি বোতলে রেখে দিন। দিনে কমপক্ষে দুই তিনবার মিশ্রণটি ঠোঁটে ম্যাসাজ করে নিন। রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই মিশ্রণটি ব্যবহার করবেন। তবে আপনি যখন এটি ব্যবহার করবেন তখনই দুই তিন মিনিট রাখার পর ভেজা রুমাল বা গামছা দিয়ে মুছে ফেলবেন। আপনি যদি সঠিকভাবে এ পদ্ধতিটি অনুসরণ করুন তবে পুরো শীতেই ঠোঁটের শুষ্কতা ও ঠোঁট ফাটার সমস্যা থাকবে না।
সমাধান-২
1 চা চামচ অলিব অয়েল তেল, 1 চা চামচ চিনি, আধা চা চামচ বেসন মিশিয়ে জেলের মতো তৈরি করে নিন। এটি ঠোঁটে লাগিয়ে নিন। একটু পরই এটি শুকিয়ে আসবে। শুকিয়ে আসলে ভেজা হাতে ম্যাসাজ করে প্যাকটি উঠিয়ে ফেলুন। এতে ঠোঁটের মরা কোষগুলো উঠে গিয়ে ঠোঁটের কোমলতা বজায় থাকে।
তাহলে এখানেই থাকলো। আপনি যদি নিয়মিত উপরের টিপসগুলো অনুসরণ করেন তাহলে সহজেই শীতে ঠোঁট ফাটা সমস্যা রোধ করতে পারবেন।
শীতে ঠোঁটের যত্ন নিতে আরও পড়ুন –