চলেন আমরা শব্দ নিয়ে আজ কিছু জানার চেষ্টা করি। এটি আসলে কি? এটি কিভাবে তৈরি হয়? শব্দ তরঙ্গ তৈরি করতে হলে একটি উৎস দরকার হয় এবং সেই শব্দটি অন্য জায়গায় প্রেরণের জন্য একটি নির্দিষ্ট মাধ্যম প্রয়োজন। আবার শব্দ গ্রহণের জন্যও একটি রিসিভার দরকার। আমাদের চারপাশে আমরা একটু তাকালেই অসংখ্য শব্দের উৎস দেখতে পাব। আমাদের কণ্ঠনালীই শব্দের অন্যতম উৎস। আমাদের কণ্ঠনালী ছাড়াও শব্দের আরেকটি পরিচিত উৎস হল স্পিকার। আপনি যদি রেডিও, টিভি, মোবাইল বা হেডফোনের স্পিকার দেখে থাকেন তাহলে সেখানে পাতলা পর্দা দেখতে পারবেন। একে ডায়াফ্রাম বলা হয়। উক্ত ডায়াফ্রাম সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কাপিয়ে শব্দ তৈরি করা হয়।
শব্দ কাকে বলে?
কম্পনশীল কোন বস্তু থেকে যে শক্তি জড় মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে আমাদের কানে পৌঁছে মস্তিষ্কে এক বিশেষ অনুভূতি জাগায় তাকে শব্দ বলে।
পড়ুনঃ পদার্থ কি বা কাকে বলে? পদার্থ কত প্রকার ও কি কি?
শব্দ তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য
- শব্দ একটি যান্ত্রিক তরঙ্গ তাই কোনো বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি হয় ।
- শব্দ তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য স্থিতিস্থাপক জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয়।
- এই তরঙ্গের প্রবাহের দিক এবং কম্পনের দিক একই বলে এটি একটি অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ।
- শব্দ তরঙ্গের বেগ মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।
- বায়বীয় মাধ্যমে এর বেগ কম, তরলে তারচেয়ে বেশি, কঠিন পদার্থে আরো বেশি।
- শব্দের তীব্রতা তরঙ্গের বিস্তারের বর্গের সমানুপাতিক। অর্থাৎ তরঙ্গের বিস্তার যত বেশি শব্দের তীব্রতা তত বেশি হবে।
- শব্দ তরঙ্গের প্রতিফলন, প্রতিসরণ ও উপরিপাতন সম্ভব।
- শব্দের বেগ মাধ্যমের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার উপরও নির্ভরশীল।
শব্দের বেগ
কোন স্থিতিস্থাপক সমসত্ব মাধ্যমে শব্দ তরঙ্গ এক সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকে শব্দের বেগ বলে ।
শব্দের বেগ তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। তবে শব্দের বেগ বাতাসের চাপের উপর নির্ভর করেনা। শব্দের সাথে তাপমাত্রার সম্পর্ক হচ্ছেঃ শব্দের বেগ তাপমাত্রার বর্গমূলের সমানুপাতিক। অর্থাৎ,
বিঃদ্রঃ এখানে তাপমাত্রার একক কিন্তু সেলসিয়াস এককে হবেনা। এখানে অবশ্যই তাপমাত্রা কেলভিন এককে ব্যবহার করতে হবে। সেলসিয়াস তাপমাত্রার সাথে 273 যোগ করলেই তা কেলভিন এককে রূপান্তর হয়ে যাবে।
পড়ুনঃ তাপ এবং তাপমাত্রা কি? | তাপ ও তাপমাত্রার পার্থক্য
দূরত্ব অতিক্রম করতে শব্দের কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ শব্দ, নির্দিষ্ট মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বেগে চলে ।
১. কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ সর্বাধিক ।
২. তরল মাধ্যমে শব্দের বেগ গ্যাসীয় মাধ্যমে শব্দের বেগের থেকে বেশি ।
৩. যে মাধ্যম বেশি স্থিতিস্থাপক সেই মাধ্যমে শব্দের বেগ বেশি হয় । কঠিন মাধ্যমের স্থিতিস্থাপকতা তরল বা গ্যাসীয় মাধ্যমের থেকে বেশি, তাই কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ তরল বা গ্যাসীয় মাধ্যমের থেকে বেশি হয় ।
৪. বিজ্ঞানী কোলাডন ও স্ট্রাম সর্ব প্রথম জলে শব্দের বেগ নির্ণয় করেন । ৪ ডিগ্রী C উষ্ণতায় শব্দের বেগ প্রায় ১৪৩৬ মি / সে ।
শূন্য মাধ্যমে শব্দের বেগ
উপরের লেখাটুকু পড়ে আমরা অন্তত এটা জানতে পেরেছি যে মাধ্যম ছাড়া শব্দ চলতে পারে না। তাই শূন্য মাধ্যমে শব্দের বেগ হবে শূন্য। কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে বেশি। বায়বীয় মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে কম। উল্লেখ্য, বাতাসে শব্দের বেগ ৩৩২ মি/সে।
কয়েকটি মাধ্যমে শব্দের বেগ:
গ্যাসীয় মাধ্যম | বেগ (মিটার / সেকেন্ড) |
---|---|
কার্বন ডাইঅক্সাইড | 260 মিটার / সেকেন্ড |
অক্সিজেন | 317 মিটার / সেকেন্ড |
বাতাস | 332 মিটার / সেকেন্ড |
হিলিয়াম | 965 মিটার / সেকেন্ড |
হাইড্রোজেন | 1270 মিটার / সেকেন্ড |
তরল মাধ্যম | বেগ (মিটার / সেকেন্ড) |
---|---|
অ্যালকোহল | 1270 মিটার / সেকেন্ড |
তারপেনটাইন | 1325 মিটার / সেকেন্ড |
জল (০ ডিগ্রি C) | 1450 মিটার / সেকেন্ড |
সমুদ্রের জল | 1552 মিটার / সেকেন্ড |
কঠিন মাধ্যম | বেগ (মিটার / সেকেন্ড) |
---|---|
রবার | 54 মিটার / সেকেন্ড |
তামা | 3560 মিটার / সেকেন্ড |
কংক্রিট | 5000 মিটার / সেকেন্ড |
স্টিল | 5100 মিটার / সেকেন্ড |
গ্লাস | 5500 মিটার / সেকেন্ড |
গ্রানাইট | 6000 মিটার / সেকেন্ড |
অ্যালুমিনিয়াম | 6420 মিটার / সেকেন্ড |
আর্টিকেলটি পড়ে ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।