প্রযুক্তির যেমন উন্নতি হচ্ছে মানুষও তেমনি প্রযুক্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে। অনলাইনে কোন কাজ করতে গেলে বা ভালমতো কোন কিছু একটা দেখতে বা করতে গেলেই এন্ড্রয়েড ফোনে আর চলে না। ব্যক্তিগত একটা কম্পিউটার সবার জন্যই এখন অত্যাবশকীয় হয়ে পড়ছে। বিনোদন থেকে শুরু করে অফিসের কাজ সবই কিছুতেই এখন একটা কম্পিউটার লাগে।
এখন কম্পিউটার কিনবো ঠিক আছে কিন্তু কিনতে গিয়েই পড়তে হয় বড় ঝামেলায়। ল্যাপটপ নাকি ডেস্কটপ? কোনটা যে ভাল হবে তার সিদ্ধান্ত নিতে অনেক কাট-খড় পোড়াতে হয়। ল্যাপটপ ও ভাল ডেস্কটপও ভাল কিন্তু কোনটা যে আমার বর্তমানে এবং ভবিষ্যতের জন্য ভাল হবে তা নির্ধারণ করা খুব কঠিন হয়ে যায়। এমন সমস্যায় যারা আছেন তাদের জন্যই আজকের এই ব্লগ।
আশা করি সম্পূর্ণ ব্লগটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনার এমন সমস্যার শতভাগ সমাধান পাবেন।
তাহলে চলুন শুরু করা যাক,,,,,,,,,!!!
আপনি কোথায় এবং কি কাজ করবেন?
ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কেনার আগে আপনাকে প্রথমেই চিন্তা করতে হবে আপনি এটি দিয়ে কি কাজ করবেন এবং কোথায় কাজ করবেন। তাছাড়া বাজারে যেহেতু বিভিন্ন বাজেটের পিসি পাওয়া যায় তাই বাজেটের ব্যাপারটাও চিন্তা করতে হবে।
আরো পড়ুন- আসল শাওমি (MI) ফোন চিনবেন কিভাবে?
ল্যাপটপ
- আপনি যেখানে-সেখানে আপনার পিসিকে বহন করে নিয়ে যে চান তাহলে অবশ্যই ল্যাপটপ কিনতে হবে।
- একই বাজেটের মধ্যে ল্যাপটপ কিনলে ডেস্কটপ থেকে এর কাজের পারফরমেন্স কম হবে। তাই সহজে বহন করার পাশাপাশি জটিল কাজ করতে হলে আপনাকে ডেস্কটপ থেকে বেশি দামে ল্যাপটপ কিনতে হবে।
ডেস্কটপ
- ডেস্কটপ কিনলে আপনি তা যেখানে-সেখানে বহন করতে পারবেন না। যেকোন এক জায়গাতে রেখেই কাজ করতে হবে।
- একই বাজেটের মধ্যে ভাল পারফরমেন্স দরকার হলে ডেস্কটপ ভাল হবে। অর্থাৎ আপনি যদি অল্প বাজেটে ভাল পারফরমেন্স চান তাহলে ল্যাপটপ থেকে ডেস্কটপ উত্তম।
এবার আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনার অধিক ভাল পারফরমেন্স ডেস্কটপ দরকার নাকি অল্প পারফরমেন্সের মধ্যে সহজে বহনযোগ্য একটা ল্যাপটপ দরকার।
কেমন কার্যক্ষমতা চান?
আপনি যদি অল্প বাজেটের মধ্যে অধিক কার্যক্ষমতা বিশিষ্ট পিসি চান তাহলে আপনার জন্য ডেস্কটপই ভাল হবে। কারণ অধিক কার্যক্ষমতা বিশিষ্ট ল্যাপটপের দাম অনেক। কারণ ল্যাপটপ তৈরির ক্ষেত্রে মূলত প্রথমের এর ব্যাটারিং বেকাপের চিন্তা করা হয় কিন্তু ডেস্কটপ তৈরির ক্ষেত্রে চিন্তা করা হয় এর পারফরমেন্সের কথা।
ল্যাপটপ
- একই ক্লক-স্পিড, জেনারেশন এবং সিরিজের মধ্যে ল্যাপটপের তুলনায় ডেস্কটপ ভাল।
- ডেস্কটপের তুলনায় ল্যাপটপের কুলিং সিস্টেম দুর্বল। ফলে ল্যাপটপে বেশি সময় ধরে ভারী কাজ করা যায় না।
ডেস্কটপ
- অল্প বাজেটের মধ্যে ল্যাপটপের তুলনায় ডেস্কটপের পারফরমেন্স ভাল পাবেন।
- ডেস্কটপের কুলিং সিস্টেম ভাল। ফলে ওভারক্লক করে পারফরমেন্স বুস্ট করা যায়।
- গ্রাফিক্সের কাজের জন্য যেহেতু অধিক কার্যক্ষমতার প্রয়োজন হয়, তাই গ্রাফিক্সের জন্য ডেস্কটপ উত্তম।
তবে ভালো পারফরমেন্সের ল্যাপটপ পিসিও পাবেন তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে অনেক টাকা গুনতে হবে। তাই আপনার যদি পারফরমেন্স বিবেচ্য বিষয় হয়, তাহলে যেকোনো বাজেটে ডেস্কটপ পিসিই সুস্পষ্টভাবে জয়ী হবে।
মেরামত করা বা কার্যক্ষমতা বাড়াতে চাইলে
যেহেতু এগুলো ইলেকট্রনিক্সের জিনিস নষ্ট হবার সম্ভবনা থাকছেন। আবার চাইলে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের কার্যক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সংযোজন ও করা যায়। তাহলে চলুন এসকল ক্ষেত্রে কোনটি লাভজনক জেনে নেই-
ল্যাপটপ
- মেরামত করা বা যন্ত্রাংশ সংযোজন করার ক্ষেত্রে ল্যাপটপে অনেক সমস্যা পোহাতে হয়।
- ল্যাপটপে র্যাম (RAM) বা স্টোরেজ (Storage) বাড়ানো যায়। অন্য কোন পার্ট সংযোজন করা যায় না।
- ল্যাপটপের মেরামত করার জন্য সবসময় ভাল মেরামতকারী পাওয়া যায় না।
ডেস্কটপ
- ডেস্কটপের যেকোন পার্ট সংযোজন করে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবেন। আপনি এর প্রতিটি ক্ষুদ্র অংশ পরিবর্তন করে আপনার পিসির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবেন।
- ডেস্কটপ মেরামতকারী পেতে আপনাকে কোন সমস্যায় পড়তে হবে না। চাইলে ছোট-খাটো মেরামত আপনি নিজেও করতে পারবেন।
তাই মেরামত করা বা যেকোন পার্টস পরিবর্তন করে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে ডেস্কটপই সেরা। আপনি যদি ভবিষ্যতে আপনার পিসির কোন পার্টস পরিবর্তন করতে চান তাহলে ডেস্কটপ কেনায় উত্তম হবে।
নতুন ফিচার ও সহজে ব্যবহার করতে চাইলে
আপনি যদি আধুনিক সব নতুন নতুন ফিচার সহ দ্রুত যেকোন জায়গায় বসে কাজ করতে চান তাহলে আপনার জন্য ল্যাপটপই সমাধান। তাছাড়া ক্লাসে বা অফিসে বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য ল্যাপটপই সেরা।
ল্যাপটপ
- নতুন সকল ফিচার একসাথে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ল্যাপটপ কিনতে হবে৷ সুন্দর ডিজাইন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, কম্প্যাক্ট বডি ইত্যাদি আপনি ল্যাটপটেই ভাল পাবেন।
- টাচস্কিন ব্যবহার করে সহজে এবং দ্রুত কাজ করতে চাইলে ল্যাপটপ কিনতে হবে।
- বাসের মধ্যে ট্রাফিক জ্যামে আটকে থেকেও আপনি আপনার কাজ করতে পারবেন। ফলে আপনার সময়ের অপচয় অনেকটা রোধ হবে।
- লোডশেডিংয়ের কথা চিন্তা করলে ল্যাপটপের বিকল্প নেই। বর্তমান ল্যাপটপের ব্যাটারি গুলোর পাওয়ার ব্যাকআপ যথেষ্ট ভাল। যেকোন প্রকার লোডশেডিং এর মধ্যেও আপনি আপনার কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।
ডেস্কটপ
- আধুনিক ফিচারগুলো আপনি ডেস্কটপেও পাবেন কিন্তু ল্যাপটের মতো সিমপ্লিসিটি পাবেন না।
- তাছাড়া ডেস্কটপ তো যেখানে-সেখানে, ক্লাসে, অফিসে বহন করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। যেহেতু ডেস্কটপ বহন করা সম্ভব নয় তাই যেখানে-সেখানে বসে আপনার ইচ্ছে মতো একে ব্যবহার করতে পারবেন না।
- ডেস্কটপের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো লোডশেডিং। কারেন্ট না থাকলে ডেস্কটপ চালানো মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়।
নতুন ফিচার সহ যেখানে-সেখানে ব্যবহার করতে চাইলে ল্যাপটপই সেরা। আপনি যদি সকল কিছুর একটি সিম্পল কম্বিনেশন চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ল্যাপটপ কিনতে হবে।
গেম খেলবেন বা ভারী কোন কাজ করবেন?
আপনি যদি গেইম খেলতে চান বা ভারী কাজ (যেমন- হেভি গ্রাফিক্স) করতে চান তাহলে আপনার অধিক কার্যক্ষমতা পিসির দরকার।
আরো পড়ুন- কম্পিউটারে টাইপিং স্পিড বাড়াতে কার্যকরী ৯ টি টিপস!
ল্যাপটপ
- গেম বা ভারী কাজ করতে গেলে ল্যাপটপ না কিনায় ভাল।
- বিশেষ ভাবে তৈরি গেমিং ল্যাপটপ দিয়ে গেম খেলা গেলেও তার দাম অনেক বেশি। তাও এসকল ল্যাপটপ দিয়ে ডেস্কটপের মতো ভাল পারফরমেন্স পাওয়া যায় না।
ডেস্কটপ
- গেম খেলতে চাইলে বা ভারী কাজ করতে চাইলে ডেস্কটপ কিনতে হবে।
- এসকল ভারী কাজে ডেস্কটপের পারফরমেন্সকে পিছনে ফেলতে পারে এমন ল্যাপটপ কমই আছে।
এবার আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন, আপনি যদি গেইম খেলতে বা ভারী কাজ করতে চান তাহলে বেশি দামে গেমিং ল্যাপটপ কিনবেন নাকি অল্প বাজেটের মধ্যেই একটা ডেস্কটপ কিনবে। তবে এক্ষেত্রেও সহজে বহনের ( যেহেতু ডেস্কটেপ) অসুবিধাটা রয়েই গেল।
সর্বোপরি ল্যাপটপ কিনবেন নাকি ডেস্কটপ কিনবেন?
উপরের আলাদা আলদা সুবিধা-অসুবিধাগুলোকে একত্রে করে যদি বলতে হয় ল্যাপটপ না ডেস্কটপ ভাল হবে তাহলে বলা যায়, আপনি যদি মোটামুটি মানের গেম বা ভারী কাজ করতে চান (যেমন- মাইক্রোসফট অফিস, ফটোশপ, কোডিং) পাশাপাশি লোডশেডিং এর সমস্যা আছে তাহলে এসকল কাজের স্পেসিফিকেশন দেখে একটা ল্যাপটপ কিনে ফেলুন। তবে বহন করার ইচ্ছেবা প্রয়োজন থাকলে যেমন কাজই করুন না কেন আপনার ল্যাপটপ-ই কিনতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার দাম একটু বেশি পড়বে।
আরো পড়ুন- স্মার্টফোন কেনার আগে যে জিনিসগুলো অবশ্যই জানতে হবে!
আবার আপনি যদি এক জায়গায় বসে ভারী কাজ করতে চান বা ভাল মানের গেম খেলতে চান তাহলে আপনাকে ডেস্কটপ কিনতে হবে।
তবে একান্তই আপনার বাজেট কম থাকলে আবার পোর্টেবল ডিভাইস চাইলে মিড রেঞ্জের মধ্যে আপগ্রেড করার কেমন সুবিধা আছে তা দেখে ৩০ হাজার টাকার আশেপাশে এন্ট্রি লেভেলের ল্যাপটপ নিতে পারেন।
আজ এই পর্যন্তই, ব্লগটি ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধদের সাথে শেয়ার করবেন।
ধন্যবাদ।