ইংরেজি Radiation Therapy শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো রেডিওথেরাপি। এটি হলো কোন রোগের চিকিৎসায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ব্যবহার। এটি ক্যান্সারের একটি চিকিৎসা। এতে সাধারণত উচ্চ ক্ষমতার এক্সরে ব্যবহার করে ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষকে ধ্বংস করা হয়।
এই এক্স-রে ক্যান্সার কোষের ভেতরের DNA ধ্বংস করে কোষের সংখ্যা বাড়া বা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়ানো থামায়।
রেডিওথেরাপি কখন ব্যবহার করা হয়?
সাধারণত ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে বা ছড়ানো শুরু করলে রেডিওথেরাপি ব্যবহার করা যায়।
পড়ুন – ক্রায়োসার্জারি কি? ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার
যেসব কারণে এটা ব্যবহার করা হতে পারে তা হলো –
- ক্যান্সারকে নির্মূল করার চেষ্টা করার সময়।
- অন্যান্য চিকিৎসার কার্যকরিতা বাড়াতে ব্যবহার করা হতে পারে।
- সার্জারির পরে ক্যান্সার ফিরে আসার সম্ভবনা কমাতে।
- ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব না হলে উপসর্গগুলো দূর করতে ইত্যাদি।
সার্জারির পরে রেডিওথেরাপি ক্যান্সারের সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা।
রেডিওথেরাপির ধরণ
বিভিন্নভাবে রেডিওথেরাপি দেওয়া যায়।ডাক্তাররায় আপনাকে জানিয়ে দিবে আপনার জন্য কোনটি সবচেয়ে ভালো। এটি দেওয়ার সবচেয়ে কমন উপায়গুলো হচ্ছে –
- একটি মেশিনের সাহায্যে দেওয়া
- রেডিওথেরাপি ইমপ্ল্যান্টস
- রেডিওথেরাপি ইনজেকশ, ক্যাপসুল বা ড্রিংকস
একটি মেশিনের সাহায্যে দেওয়া
এর সাহায্যে দিতে হলে আপনাকে একটি টেবিলে শুইতে হবে এবং একটি মেশিনের দ্বারা আপনার ক্যান্সারের দিকে রেডিয়েশনের রশ্মি তাক করা হবে। মেশিনটিকে ঘরের বাইরে থেকে চালানো হবে। কিন্তু জানালা বা ক্যামেরা দিয়ে ডাক্তাররা আপনাকে দেখবে। প্রয়োজন হলে ইন্টারকলের সাহায্যে আপনি তাদের সাথে কথা বলতে পারবেন।
পড়ুন – টেলিমেডিসিন কি?টেলিমেডিসিনের সুবিধা
চিকিৎসাকালীন সময়ে আপনাকে স্থির হয়ে থাকতে হবে। এটি করতে মাত্র কয়েক মিনিট লাগে এবং কোনরকম ব্যথা লাগে না। রেডিয়েশন দেওয়া শেষ হলে অল্প কিছুক্ষণ পরেই আপনি বাসায় চলে যেতে পারবেন।
রেডিওথেরাপি ইমপ্ল্যান্টস
ক্যান্সারে আক্রান্ত জায়গায় অপারেশন করা ছাড়া যদি রেডিওএক্টিভ ইমপ্ল্যান্টস বসানো যায়, তাহলে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার মাঝে মাঝে অপারেশনের সাহায্যে ইমপ্ল্যান্ট ক্যান্সারের কাছে বসানো হতে পারে।
ইমপ্ল্যান্ট আপনার শরীরর ভিতরে কতক্ষণ রাখা হবে, তা কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এটি কয়েক মিনিট বা কয়েক দিন হতে পারে। মাঝে মাঝে ছোট ইমপ্ল্যান্ট সারা জীবন শরীরের ভেতরে রাখা হতে পারে।
এটি থেকে যে রেডিয়েশন ছড়াবে, সেটা থেকে আপনার কোন ব্যথা হবে না। কিন্তু এর কারণে আপনার আশেপাশের মানুষের ক্ষতি হতে পারে। একারণে ইমপ্ল্যান্টসগুলো আপনার শরীর থেকে বের না করা পর্যন্ত আপনাকে হাসপাতালে থাকতে হতে পারে।
রেডিওথেরাপি ইনজেকশ, ক্যাপসুল বা ড্রিংকস
ক্যান্সারের কিছু কিছু চিকিৎসায় রেডিওএক্টিভ লিকুইড পান করতে দেওয়া হতে পারে বা ইনজেকশনের সাহায্যে আপনার রক্তে দেওয়া হতে পারে। এটি করার কিছুদিন পর্যন্ত আপনার শরীর রেডিওএক্টিভ হয়ে থাকতে পারে। এজন্য আপনাকে কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে। শরীরে রেডিয়েশনের লেভেল কমলে আপনি বাসায় চলে যেতে পারবেন।
পড়ুন – পদার্থ কি বা কাকে বলে? পদার্থ কত প্রকার ও কি কি?
নোটঃ রেডিওথেরাপি চলাকালীন সময়ে মহিলারা যাতে গর্ভবতী না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ রেডিয়েশনের জন্য বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
রেডিওথেরাপি করার আগের পরামর্শ
রেডিওথেরাপি যদি আপনার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা হয়, তাহলে চিকিৎসকরা আপনাকে জানাবে। এরপর আপনি এটি করবেন কিনা এটা আপনার ব্যাপার। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ডাক্তারকে আপনি নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলো করতে পারেন –
- রেডিওথেরাপি দেওয়ার উদ্দেশ্য কি?
- এটির সাইড ইফেক্ট হলে সেটা প্রতিরোধ করার উপায় কি?
- এটা কতটা কার্যকর হতে পারে।
- এর বদলে অন্য কোন চিকিৎসা করা যায় কি না। ইত্যাদি।
রেডিওথেরাপি কখন দেওয়া হবে?
এই থেরাপিতে সাধারণত প্রতিদিন রেডিয়েশনের সামান্য একটু ডোজ দেওয়া হয়। এভাবে কয়েক সপ্তাহ চলতে পারে।তবে চিকিৎসা শুরু করার আগে আপনার ডাক্তার কিছু প্ল্যান করে নিবেন। সেগুলো হলো –
- আপনাকে কোন ধরণের রেডিওথেরাপি দেওয়া হবে।
- আপনার কত ঘন ঘন চিকিৎসা লাগবে।
বেশিরভাগ মানুষের সপ্তাহে পাঁচ দিন রেডিয়েশন দেওয়া হয়। এরপর দুদিন বিশ্রাম দেওয়া হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে সপ্তাহে পাঁচ দিনের বেশি বা দিনে একবারের বেশি রেডিয়েশন দেওয়া হতে পারে।
আরও পড়ুন – তাপগতিবিদ্যায় সিস্টেম কাকে বলে? সিস্টেম কত প্রকার ও কি কি?
রেডিওথেরাপির সাইড ইফেক্ট
ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলো ধ্বংস হওয়ার সাথে সাথে রেডিওথেরাপির কারণে আশেপাশের সুস্থ কোষেরও ক্ষতি হতে পারে। যেকারণে কিছু সাইড ইফেক্ট দেখা দিতে পারে। তবে এর নির্দিষ্ট কোন সাইড ইফেক্ট নেই। একেক জনের একেকরকম সাইড ইফেক্ট দেখা দিতে পারে। তবে নিম্নলিখিত সাইড ইফেক্টগুলো দেখা দেওয়ার সম্ভবনা আছে।
- চামড়ায় কালশিটে দাগ পড়তে পারে
- ক্লান্তি লাগতে পারে
- বমি বমি ভাব হতে পারে
- ক্ষুদা কমে যেতে পারে
- ডায়রিয়া হতে পারে।
- চুল পড়তে পারে ইত্যাদি।
ত আজ এ পর্যন্তই। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।