আজকাল প্রায় সবাই অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এই সুবাদে আমরা প্রায়ই বন্ধুদের মুখে শুনি তাদের ফোন 2 গিগা হার্জ প্রসেসর এর কাজ করে। আবার কেউ কেউ বলে আমার ফোনে dual-core, quad-core, octa-core প্রসেসর রয়েছে। এগুলো হচ্ছে মোবাইল প্রসেসর এর নাম।
আপনি যদি এই বিষয়গুলো ভালভাবে না জেনে থাকেন তাহলে আপনার মাথায় প্রশ্ন আসবেই। মোবাইল প্রসেসর কি? এটির কাজই বা কি? কেনইবা মোবাইলের প্রসেসর ভালো হলে মোবাইল খুব দ্রুত কাজ করে এবং কম ব্যাটারি ব্যবহার করে? তো চলুন আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে নেই।
আরেকটা কথা, আপনি যদি কখনো নতুন মোবাইল কিনতে চান তাহলে অবশ্যই মোবাইলের প্রসেসর এর ব্যাপারে ভালোভাবে জেনে নেবেন। কারণ মোবাইলের প্রসেসর এর সাথে আপনার কাজের গতি এবং মোবাইলের চার্জ টাকা ছাড়াও আরো অনেক কিছু জড়িত।
দেখে নিনঃ মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়
মোবাইল প্রসেসর কি? (What is Mobile Processor)
প্রতিটি কম্পিউটার ভালোভাবে রান করার জন্য যেমন একটি প্রসেসর থাকে। তেমনি ভাবে প্রত্যেকটি মোবাইল ফোন ভালোভাবে রান করার জন্য একটি প্রসেসর লাগে।
প্রসেসর হল সিপিইউ এর একটি অংশ। Processor হল একটি ছোট চিপ যা কম্পিউটার, মোবাইল এবং অন্যান্য Electronic ডিভাইসে থাকে। এর প্রাথমিক কাজ Input গ্রহণ করা এবং সে অনুযায়ী আউটপুট সরবরাহ করা। অনেকের প্রশ্ন থাকে যে, প্রসেসর কি দিয়ে তৈরি? উত্তর: একটি প্রসেসর বা মাইক্রোপ্রসেসর কয়েক মিলিয়ন ট্রানজিস্টর (Transistor) দিয়ে গঠিত একটি সংহত সার্কিট।
আরেকটু সহজ করে বললে, মোবাইল প্রসেসর হল মোবাইলের বোর্ডে লাগানো একটি ছোট্ট চিপ যা মোবাইলের সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে সক্ষম। প্রসেসর একটি ডিভাইস বা মোবাইলের ব্রেন এর মত কাজ করে। মানুষের সকল কাজ যেমন তার ব্রেইন এর মাধ্যমে প্রসেসিং হয়। তেমনি মোবাইলে ভিডিও দেখা, গেম খেলা, গান শোনা, ইন্টারনেট চালানো ইত্যাদি কাজ করতে প্রসেসর এর প্রয়োজন হয়। প্রসেসর ছাড়া কোন ডিভাইসে এই কাজগুলো করা সম্ভব নয়।
এইজন্যই, আপনার ডিভাইস এর প্রসেসর যত ভালো হবে আপনি এই কাজগুলো ততো স্মুথ ভাবে করতে পারবেন। আর যদি প্রসেসর ভালো না হয় তাহলে আপনার মোবাইলে যাবতীয় কাজ করতে যথেষ্ট অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। আপনার ডিভাইস এর প্রসেসর খারাপ হলে, আপনার ফোন স্লো হতে পারে, যেকোনো সময় হ্যাং করতে পারে কিংবা গরম হয়ে যেতে পারে। প্রসেসর নিম্নমানের হলে মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যেতে পারে।
তাই প্রসেসর যত ভালো হবে, আপনার মোবাইলের গতি তত বাড়বে। মোবাইল smoothly কাজ করবে। ফলে বড় বড় গেম খুব সহজেই আপনি আপনার মোবাইলে চালাতে পারবেন।
জেনে নিনঃ মোবাইলের ফন্ট পরিবর্তন করবেন কিভাবে?
মোবাইল প্রসেসর এর প্রকারভেদ
মোবাইলের প্রসেসর অনেক রকম হতে পারে। বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম ভাগ হয়ে থাকে। নিচে আমি একে একে সবগুলো আলোচনা করার চেষ্টা করব।
কোর (Core) এর সংখ্যার পার্থক্য
কোন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে প্রসেসর সাধারণত চার ধরনের হয়ে থাকে।
- ডুয়াল কোর (dual core)
- কোয়াড কোর (quad core)
- হেক্সা কোর (hexa core) এবং
- অক্টা কোর (octa core)
উপরের চার রকম প্রসেসর এর একটি সাধারণ পার্থক্য হল কোরের সংখ্যা। Dual-core প্রসেসর এ কোরের সংখ্যা দুইটি। Quad-core প্রসেসরে কোরের সংখ্যা চারটি। Hexa-core প্রসেসরে কোরের সংখ্যা ছয়টি এবং Octa-core প্রসেসরে কোরের সংখ্যা থাকে আটটি।
মনে রাখবেন, আপনার ডিভাইসের প্রসেসরের কোরের সংখ্যা যত বেশি হবে ডিভাইসের কার্যক্ষমতা তত বাড়বে।
Core কিছুটা এভাবে কাজ করে যেমন – আপনি কোন একটি কাজ করছেন যেটি করতে আপনার প্রায় 10 ঘন্টা লেগে যাবে। সেই কাজটাই যদি আপনি আপনার এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে করেন তাহলে আপনার সময় লাগবে প্রায় 5 ঘণ্টা। অর্থাৎ কাজটি আরও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। আপনি যদি কাজটির জন্য আরো দুইটা বন্ধুকে ডেকে আনেন তাহলে আপনার কাজটি আরো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, প্রতিটি কোর এক একটা হাতের মত কাজ করে। তাই প্রসেসর এর কোড যত বেশি থাকে তার কাজ করার সামর্থ্য তত বেশি থাকে। মনে হচ্ছে আপনি ডিভাইস টি থেকে ভালো পারফরম্যান্স পাবেন।
তাই আপনি যদি নতুন মোবাইল কেনার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে কেনার আগে অবশ্যই দেখে নেবেন মোবাইলটিতে কত কোরের প্রসেসর লাগানো আছে।
Note – মোবাইল ফোনে কোন প্রসেসর লাগানো আছে সেটা মোবাইলের বাক্সের পিছনেে Specifications অংশে লেখা থাকে। কেনার সময় এই অংশটি ভালো করে দেখে নেবেন।
কোম্পানির (Company) পার্থক্য
কোরের পার্থক্য ছাড়াও প্রসেসর এর আলাদা আলাদা কোম্পানি রয়েছে। মূলত চারটি জনপ্রিয় কোম্পানি আছে যারা প্রসেসর তৈরি করে।
- Qualcomm / snapdragon
- Mediatek
- Samsung / Exynos
- Nvidia
ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল কোম্পানি উপরের চারটি কোম্পানির প্রসেসর তাদের মোবাইলে ব্যবহার করে থাকেন।
GHz (frequency) এর পার্থক্য
প্রসেসর এর পার্থক্য গিগাহার্জের (GHz) উপরে অনেকটা নির্ভর করে। গিগাহার্জ যত বেশি হয় প্রসেসর তত ভালো কাজ করে। গিগাহার্জ সাধারণত 1 গিগাহার্জ, 1.5 গিগাহার্জ, 2 গিগাহার্জ বা আরও বেশি হয়ে থাকে। গিগাহার্টজ কে ফ্রিকোয়েন্সিও বলা হয়ে থাকে।
কোন মোবাইল প্রসেসর ভালো ? (Best mobile processor)
মোবাইলের অনেক রকমের প্রসেসর বাজারে রয়েছে।মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো একেক ধরনের প্রসেসর ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে কোন প্রসেসরটি ভালো এবং দ্রুত গতিসম্পন্ন সেটি যেন আমাদের জন্য একটু কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তবে ভয়ের কিছু নেই। এখানে আমরা সুন্দর করে বুঝিয়ে দেবো কিভাবে আপনি ভালো এবং দ্রুত গতিসম্পন্ন প্রসেসর চিনবেন।
প্রসেসর চিনতে হলে আপনাকে আগে যেটা দেখতে হবে সেটা হচ্ছে প্রসেসরটি কত কোর বিশিষ্ট। উপরে প্রসেসর এর কোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে। কোরে সংখ্যা যত বেশি হয় প্রসেসরের মান ভাল হয়। একটা quad-core, octa-core কিংবা hexa-core অবশ্যই ভালো মানের হয়ে থাকে। কোর যত বেশি হয় প্রসেসর এর শক্তি তত বেশি হয়।
তবে একটু ভালো প্রসেসর শুধু কোরের উপরে নির্ভর করে না। আরো অনেক রকমের ফ্যাক্টর থাকে যেগুলো ভালো মানের প্রসেসর নির্বাচনে সহায়ক।
সেগুলো হলো –
প্রসেসর এর গঠন (Processor architecture)
প্রসেসর আর্কিটেকচার প্রসেসর এর গঠন অনেকটাই প্রসেসর এর গুণগত মান প্রকাশ করে। উদাহরণস্বরূপ, সব ধরনের ইলেকট্রনিক জিনিস সময়ের সাথে তাদের গঠন উন্নত করে থাকে। মোবাইলের প্রসেসর এর ক্ষেত্রেও কথাটি ব্যতিক্রম নয়। দিনদিন মোবাইলের প্রসেসর এর গঠন আকৃতি এবং কাজ করার ক্ষমতা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে এবং উন্নত হচ্ছে। তাই মোবাইল কিনার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার কেন মোবাইলটিতে থাকা প্রসেসর লেটেস্ট আর্কিটেকচার (Latest Architecture) দ্বারা তৈরি কিনা।
প্রসেসরটিতে লেটেস্ট আর্কিটেকচার ব্যবহার হয়েছে কিনা তা আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন প্রসেসর এর Cortex নাম্বার দেখে। Cortex নাম্বার দেখার জন্য আপনাকে মোবাইলের বক্স এর পেছনে স্পেসিফিকেশন বা ইন্টারনেটে মোবাইল প্রসেসর টু কন্টাক্ট নাম্বার সার্চ করতে হবে।
যদি প্রসেসরে ARM cortex A53 বা ARM cortex A57 লেখা থাকে তবে প্রসেসরটি একদম লেটেস্ট এবং উন্নতমানের। ARM cortex এর সংখ্যা যতটা বেশি হবে প্রসেসর architecture ততটাই latest বা উন্নত হবে।
প্রসেসরের প্রযুক্তি (Processor Technology)
বর্তমানে প্রসেসর টেকনোলজি অনেকটাই উন্নত হয়ে গেছে। Processor এ প্রচুর পরিমাণ ন্যানো ট্রানজিস্টার থাকে। প্রসেসরে ট্রানজিস্টর যত ছোট হচ্ছে এর কাজের গতি ততই দ্রুত হচ্ছে।
ট্রানজিস্টর হচ্ছে প্রসেসর এর মধ্যে থাকা ছোট ছোট মাইক্রোচিপের সমন্বয়। মাইক্রোচিপ গুলোর আকার যত ছোট হয় মোবাইলের কাজের গতি তত বেড়ে যায়, হ্যাং কম করে এবং একসাথে অনেকগুলো কাজ করানো যায় এবং ব্যাটারি সাশ্রয় হয়।
বিশ্ব বিখ্যাত কোম্পানি যেমন স্যামসাং এর প্রসেসর গুলোতে মাত্র 14 ন্যানোমিটার মাইক্রোচিপ থাকে। অন্যদিকে কোয়ালকম বানায় 20 ন্যানোমিটার মাইক্রোচিপ এর প্রসেসর। এরপর মিডিয়াটেক বানায় 26 এবং 28 ন্যানোমিটারের মাইক্রোচিপ প্রসেসর।
তাই বলা যায়, ভালো প্রসেসর বানায় স্যামসাং এবং এর পরে আছে কোয়ালকম। তাই একটি মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে আপনার প্রসেসরটি কোন কোম্পানির।
প্রসেসর ফ্রিকোয়েন্সি (Processor frequency)
প্রসেসর সম্পর্কে কিছু কথা উপর এ আগেই বলা হয়েছে ।
আপনি যদি আপনার মোবাইল দিয়ে ভালো মানের কাজ করতে চান তবে আপনার মোবাইলের ফ্রিকোয়েন্সি দেড় থেকে দুই গিগাহার্টজ হলে ভালো হয়। এতে করে আপনার মোবাইলের গতি অনেক বেড়ে যাবে এবং মোবাইল ব্যবহার আরামদায়ক হয়ে উঠবে।
তাহলে আজ এ পর্যন্তই। আশাকরি মোবাইলের প্রসেসর সম্পর্কে আপনাদের মোটামুটি ধারণা দিতে পেরেছি। এরপরও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর করে বুঝিয়েছেন। ধন্যবাদ।