Homeবিজ্ঞানজীববিজ্ঞানভাইরাস কি? ভাইরাস কত প্রকার ও কি? ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য

ভাইরাস কি? ভাইরাস কত প্রকার ও কি? ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য

আজকের আর্টিকেলে আমরা ভাইরাস কি? ভাইরাস কত প্রকার ও কি? ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য, ভাইরাসজনিত রোগ, ভাইরাসের উপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে এসব বিষয় সম্পর্কে জেনে নেই –

ভাইরাস কি? ভাইরাস কত প্রকার ও কি? ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য
ভাইরাস কি? ভাইরাস কত প্রকার ও কি? ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য

ভাইরাস কি?

ভাইরাস একটি ল্যাটিন শব্দ। যার অর্থ হলো Poison বা বিষ। এটি এক প্রকার জীবকণা যা শুধু সজীব কোষেই নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করতে পারে। এ কারণে এদের জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের বস্তু বলা হয়।

ভাইরাসের একক হলো ভিরিয়ন (Virion)। Virus এত ক্ষুদ্র যে শুধুমাত্র 2A রেজুলেশন ক্ষমতাসম্পন্ন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে দেখা যায়।

রুশ জীবাণুবিদ আইভানোভসকি ১৮৯২ সালে তামাক গাছের মোজাইক রোগের কারণ হিসেবে প্রথম ভাইরাসের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করেন।

ভাইরাস (Virus) কাকে বলে?

ভাইরাস হলো অকোষীয় সূক্ষ্ম অতি আণুবীক্ষণিক জীবাণু যার নিউক্লিক এসিড DNA অথবা RNA দ্বারা গঠিত এবং যা মানুষসহ সকল জীবদেহে নানা ধরণের রোগ সৃষ্টি করে থাকে। এটি সাধারণত রোগ উৎপাদনকারী জীব হিসাবেই অতি পরিচিত।

Virus জীব ও জড়ের মধ্যকার একটি সেতুবন্ধন। এটি প্রাণীদেহে প্রবেশ করলে অনুকূল পরিবেশে প্রাণীর ন্যায় আচরণ করে থাকে। এর দেহ নিউক্লিক এসিড এবং প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত। এছাড়াও কোন কোন ভাইরাসের দেহে লিপিড, কার্বোহাইড্রেট, এনজাইম, ভিটামিনের ন্যায় পদার্থ ইত্যাদি পাওয়া যায়। Virus এর দেহে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম নেই

ভাইরাসের বৈশিষ্ট‍্য

  • ভাইরাস জীব ও জরের মধ‍্যবর্তী পর্যায়ের এক রকম বস্তু অর্থাৎ Virus জীব ও জড়ের মধ্যকার একটি সেতুবন্ধন।
  • ভাইরাস অকোষীয়, অতি আণুবীক্ষণিক সাইটোপ্লাজমবিহীন ক্ষুদ্রতম সত্তা।
  • এদের পরিশ্রুত করে স্ফটিক দানায় পরিণত করা যায়।
  • ভাইরাস শুধুমাত্র ইলেকট্রন অনুবিক্ষন যন্ত্রে দৃশ‍্যমান।
  • কোন প্রকার কোষীয় অঙ্গাণু যেমন – রাইবোসোম, মাইটোকন্ড্রিয়া ইত্যাদি নেই।
  • এটি বাধ‍্যতামূলক পরজীবী এবং রোগসৃষ্টিকারী বস্তু।
  • এদের কোন বিপাকীয় কার্যক্রম সাধিত হয় না।
  • এরা শুধু জীবন্ত পোষক কোষে বংশবিস্তার করতে পারে।
  • এদের দেহ প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিডের সমন্বয়ে গঠিত।
  • ভাইরাসকে কেলাসিত করা, সেন্ট্রিফিউজ করা, ব্যাপন করা, সাসপেনশন করা যায়।
  • ভাইরাস একমাত্র প্রতিলিপি গঠনের দ্বারা বংশবিস্তার করে। 
  • এদের জেনেটিক রিকম্বিনেশন ঘটে।
  • এদের অভিযোজন ক্ষমতা আছে। ইত্যাদি।

ভাইরাস কত প্রকার ও কি কি?

রোগবিস্তার বা বংশবিস্তার অনুযায়ী ভাইরাস প্রধানত তিন প্রকার। এগুলো হলো –

  • উদ্ভিদ ভাইরাস
  • প্রাণী ভাইরাস
  • ব‍্যাকটিরিয়া ভাইরাস / ব্যাকটেরিওফাজ

উদ্ভিদ ভাইরাস: যে সব ভাইরাস উদ্ভিদ-দেহে রোগ সৃষ্টি করে বা বংশবিস্তার করে, তাদের উদ্ভিদ ভাইরাস বলা হয়। যেমন – টোবাকো মোজেক ভাইরাস, টম‍্যাটো বুসী, আলুর এক্স-ভাইরাস, ধানের টুংরো ভাইরাস, ঢেড়স ও শিমের হলুদ শিরা মোজাইক ভাইরাস ইত‍্যাদি উদ্ভিদ ভাইরাস।

প্রাণী ভাইরাস: যে সব ভাইরাস প্রাণীদেহে রোগ সৃষ্টি করে বা বংশবিস্তার করে, তাদের প্রাণী ভাইরাস বলা হয়ে থাকে। যেমন – বসন্ত রোগের ভাইরাস ‘ভ‍্যারিওলা’ এবং ‘ভ‍্যাকসিনিয়া’, পোলিও রোগের ‘পোলিওমাইয়েলিটিস’ ইত্যাদি প্রাণী ভাইরাস।

ব‍্যাকটিরিয়া-ভাইরাস: এই ধরণের ভাইরাস ব‍্যাকটিরিয়ার দেহে বংশবিস্তার করে। এইরকম ভাইরাসের নিউক্লিক অ্যাসিডটি DNA প্রকৃতির হয়ে থাকে। ফাজ ভাইরাস বা ব‍্যাকটিরিওফাজ এই ধরনের ভাইরাস। 

এগুলো ছাড়াও সায়ানোফাজ নামে এক ধরণের ভাইরাস রয়েছে। এরা আবার ২ ধরণের হয়ে থাকে। এগুলো হলো –

  • DNA ভাইরাস
  • RNA ভাইরাস

DNA ভাইরাসঃ কলিফাজ, T2 ফাজ, ভ্যাকসিনিয়া, ভ্যারিওলা, স্মালপক্স / গুটিবসন্ত, TIV ইত্যাদি এ ধরণের ভাইরাস।

RNA ভাইরাসঃ TMV, HIV, Rubella, ডেঙ্গু, পোলিও, করোনা ভাইরাস (mRNA) ইত্যাদি এ ধরণের ভাইরাস।

ইমার্জিং ভাইরাস কী বা কাকে বলে?

ভাইরাসের পরজীবিতা সুনির্দিষ্ট হলেও কিছু কিছু ভাইরাস নির্দিষ্ট পোষক প্রজাতি থেকে সম্পর্কহীন অন্য পোষক প্রজাতিতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। আদি পোষক থেকে পরে নতুন পোষক প্রজাতিতে রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসকে ইমার্জিং ভাইরাস বলে।

যেমন – ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রকৃত পোষক ছিল পাখি যা পরবর্তীতে মানুষে রোগ সৃষ্টি করে। এছাড়াও HIV, Nile Virus, Ebola, SARS ইত্যাদি এ ধরণের ভাইরাস।

ভাইরাসজনিত রোগ

Virus এর কারণে নানারকম রোগ হয়ে থাকে। যেমন – হাম, পোলিও, বসন্ত, জলাতঙ্ক, হার্পিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মাম্পস, এইডস, হেপাটাইটিস ইত্যাদি। সবচেয়ে ছোট ভাইরাসটি হলো পোলিও। পোলিও এবং বসন্তের টিকা ভাইরাস থেকে তৈরি করা হয়। জলবসন্তের জীবাণু হলো Varicella.

তৈরিকৃত টিকা পোষকদেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। হাম, পোলিও, জলাতঙ্ক ইত্যাদি ভাইরাসজনিত রোগের টিকা ভাইরাস থেকে তৈরি করা হয়। গো-বসন্তের ভাইরাস থেকে মানুষের বসন্ত রোগের টিকা প্রস্তুত করা হয়।

মানুষের কয়েকটি ভাইরাসজনিত রোগ ও সংশ্লিষ্ট ভাইরাসের নাম

রোগের নাম ভাইরাসের নাম
HIV
ফ্ল্যাভি ভাইরাস
পোলিওপোলিওমাইলাইটিস
হামরুবিওলা ভাইরাস
জলাতঙ্কর‍্যাবিস ভাইরাস
গুটি বসন্ত ভেরিওলা ভাইরাস
জলবসন্তVaricella-Zoster Virus
ইনফ্লুয়েঞ্জাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
সাধারণ সর্দি Rahino Virus
Covid-19করোনা ভাইরাস (mRNA)
নিউমোনিয়াঅ্যাডেনো ভাইরাস

এগুলো ছাড়াও ভাইরাসজনিত আরও বিভিন্ন রোগ রয়েছে।

ভাইরাসের উপকারিতা

ভাইরাস যে শুধু আমাদের ক্ষতিই করে থাকে তা নয়, এটি আমাদের নানারকম উপকারও করে থাকে। মাটিতে বিদ্যমান অসংখ্য প্রোটোজোয়া, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির মৃত্যু ঘটিয়ে তাদের দেহকে সার হিসেবে রূপান্তর করে ভাইরাস মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।


আজকের মতো এখানেই থাকলো। আশা করি, ভাইরাস কি? ভাইরাস কত প্রকার ও কি? ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি সম্পর্কে অল্প কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু। আর আর্টিকেলটি নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন – তরঙ্গ কাকে বলে? তরঙ্গ কত প্রকার ও কি কি? তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Recent posts

Recent comments