জীবন বীমা কি? জীবন বীমার প্রকারভেদ

বীমা এমন একটি বিষয় যা অর্থের বিনিময়ে জীবন, সম্পদ বা মালামালের সম্ভাব্য পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির ন্যায় সঙ্গত ও নির্দিষ্ট ঝুঁকির স্থানান্তর। মূলত এটি অনিশ্চিত ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি অংশ। জীবন সুরক্ষা হলো বীমার অন্যতম ট্রেডিশনাল রূপ। বীমার একটি উপায় হচ্ছে জীবন বীমা। কিন্তু অনেকে জীবন বীমা সম্পর্কে জানেনা। তাই যারা জানে না তাদের জন্যই আজ আমার লেখা। চলুন তাহলে জীবন বীমা ও তার প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নেই –

জীবন বীমা

জীবন বীমা এমন এক ধরনের চুক্তি যা একজন বিমা গ্রহীতা ও বীমা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যে সম্পাদিত হয়। এখানে বীমা প্রতিষ্ঠান নিশ্চয়তা প্রদান করে যে, বীমা গ্রহীতার মৃত্যু হলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বীমাগ্রহীতার উত্তরাধিকারীকে প্রদান করা হবে। এ চুক্তির শর্তানুযায়ী কখনো কোন ধরনের মারাত্মক অসুস্থ হলেও বীমা গ্রহীতা অর্থ পেয়ে থাকে। আর বীমা গ্রহীতা এককালীন বা নির্দিষ্ট সময় পরপর বীমা কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে থাকে।

এক কথায়, জীবন বীমা এমন এক ধরনের চুক্তি যেখানে এককালীন অর্থ বা নির্দিষ্ট সময় পরপর কিস্তিতে পরিশোধের প্রতিদানে বীমাগ্রহীতার মৃত্যুতে বা নির্দিষ্ট বছরসমূহের শেষে বীমাকারী বৃত্তি বা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধের দায়িত্ব গ্রহণ করে।

জীবন বীমার বিবর্তনের ইতিহাস

  • জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান ১৮৯৬ সালে ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • ১৮১৯ সালে The Oriental Life Assurances Company গঠিত হয়।
  • ১৯৭২ ডাক জীবনবীমা চালু হয়।
  • ১৯৭৪ সালে ALICO বাংলাদেশে কাজ শুরু করে।
  • ১৮২৪ সালে Alliance Insurance Company গঠিত হয়।

জীবনবীমার প্রকারভেদ

৪ টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে জীবনবীমাকে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো –

  • মেয়াদ ভিত্তিতে
  • প্রিমিয়াম পরিশোধের পদ্ধতির ভিত্তিতে
  • মুনাফার অংশগ্রহণের ভিত্তিতে
  • বিমাগ্রহীতার সংখ্যার ভিত্তিতে
  • বীমাদাবি পরিশোধের পদ্ধতির ভিত্তিতে

মেয়াদের ভিত্তিতে প্রকারভেদ

মেয়াদের ভিত্তিতে জীবন বীমা তিন প্রকার। যথাঃ

  • মেয়াদী বীমাপত্র
  • আজীবন বিমাপত্র
  • সাময়িক বীমাপত্র

মেয়াদী বীমাপত্র: যে বীমাপত্রের মাধ্যমে এ অর্থে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে, বিমাগ্রহীতা নির্দিষ্ট বয়সে পদার্পণ করলে বীমাপত্রে উল্লেখিত নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করা হবে। অথবা উক্ত সময়ের পূর্বে বিমাগ্রহীতার মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারী বা মনোনীত ব্যক্তি বীমা পত্রে উল্লেখিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবে। এ বীমাপত্রকে মেয়াদী বীমাপত্র বলা হয়।

আজীবন বিমাপত্র: যে বীমা চুক্তির মাধ্যমে বিমাগ্রহীতা কে তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করতে হয় এবং বীমাকারী বীমাগ্রহীতার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী বা মনোনীত ব্যক্তিকে বীমাপত্রে উল্লেখিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় তাকে আজীবণ বীমাপত্র বলে।

আরও পড়ুন – সেরা ৫ টি বাংলা ডিকশনারি অ্যাপ! (একদম ফ্রি)

সাময়িক বীমাপত্র: এ বীমার মেয়াদ সাধারণত ২ মাস থেকে ৭ পর্যন্ত হতে দেখা যায়। এ সময়ের আগে বীমাকৃত ব্যাক্তি মারা গেলে বীমাদাবির অর্থ পরিশোধ করা হয়। আর বীমাকৃত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মারা না গেলে বীমাদাবি পায়না।

প্রিমিয়াম পরিশোধের পদ্ধতির ভিত্তিতে

প্রিমিয়াম পরিশোধের পদ্ধতির ভিত্তিতে জীবন বীমা দুই প্রকার। যথাঃ

  • একক কিস্তি বীমাপত্র
  • সমকিস্তি বীমাপত্র

মুনাফায় অংশগ্রহণের ভিত্তিতে

মুনাফায় অংশগ্রহণের ভিত্তিতে জীবন বীমা দুই প্রকার। এগুলো হলো –

  • একক জীবন বীমাপত্র
  • বহু জীবন বীমাপত্র

বীমাদাবি পরিশোধের পদ্ধতির ভিত্তিতে

বীমাদাবি পরিশোধের পদ্ধতির ভিত্তিতে জীবন বীমা দুই প্রকার।যথাঃ

  • এককালীন বীমাপত্র
  • বৃত্তি বীমাপত্র

প্রিমিয়াম

বীমাকারী বীমাগ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে বীমা গ্রহীতার কাছ থেকে, বিভিন্ন কিস্তিতে যে অর্থ গ্রহণ করে তাকে, প্রিমিয়াম বলা হয়।

প্রিমিয়াম নির্ধারণের পদ্ধতি

  • সর্বাধিক প্রাচীন পদ্ধতি অর্থাৎ নিরূপণ পদ্ধতি
  • মৃত্যু সম্ভাবনার হার এর উপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়। মৃত্যু সম্ভাবনার হার বাড়লে প্রিমিয়ামও বাড়ে অর্থাৎ স্বাভাবিক প্রেমিয়াম পরিকল্পনা।
  • সুষম পরিকল্পনা অর্থাৎ প্রতি বছরে একই পরিমাণ প্রিমিয়াম দিতে হবে।

বোনাস

এ কোম্পানির মূল্যায়নের পর উদ্বৃত্ত প্রকাশিত হলে তার একটা অংশ মুনাফা যুক্ত বীমাপত্রের মালিকদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হয়। এ ব্যবস্থাকে বোনাস বলা হয়।

বার্ষিক বৃত্তি (Annuity)

নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিশোধ করাকে বার্ষিক বৃত্তি বলা হয়। বার্ষিক বৃত্তি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-

সাধারণ বার্ষিক বৃত্তি: যে বার্ষিক বৃত্তির মাধ্যমে ভাতাভোগী নির্দিষ্ট হারে সারা জীবন ধরে ভাতা পেয়ে থাকে তাকে সাধারণ বার্ষিক বৃত্তি বলে।

তাৎক্ষণিক বৃত্তি: যে ব্যবস্থায় বীমা কোম্পানিকে চুক্তি অনুযায়ী অর্থ প্রদানের পরপরই ভাতা প্রদান কার্যকরী হয়,তাকে তাৎক্ষণিক বৃত্তি বলে।

প্রতিশ্রুতি বৃত্তি: বৃত্তি গ্রহীতা বৃত্তি চুক্তিতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যাপ্ত ভাতা প্রাপ্তি বিষয়টি নিশ্চিত করে চুক্তি সম্পাদন করতে পারে। একে প্রতিশ্রুতি ভিত্তি বলা হয়।

একক জীবন বৃত্তি: যেকোনো ধরনের ভিত্তি চুক্তিতে ভাতাভোগীর সংখ্যা সকল অবস্থায়়় একজন হলে তাকে একক জীবন বৃত্তি বলা হয়।

যৌথ জীবন বৃত্তি: যে বৃত্তি ব্যবস্থায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তি যৌথ জীবনকাল পর্যমত্ম ভাতা প্রদান করা হয় তাকে যৌথ জীবন বৃত্তি বলে।

সাময়িক বৃত্তি: এ ধরনের চুক্তিতে ভাতা প্রদানের একটা নির্দিষ্ট সময় বা মেয়াদের উল্লেখ থাকে।

সমর্পণ মূল্য

বীমাপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে বীমাপত্র শেষ করলে যে মূল্য বা প্রতিদান চাওয়া হয়, তাকে সমর্পণ মূল্য বলে। এর কয়েকটি বিষয় হলো –

  • বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৮০% সমর্থন মূল্য দেওয়া হয়।
  • বীমার মেয়াদ নিম্নে দুই বছর না হলে সমর্পণ মূল্য দেওয়া হয় না।

Prof.M N Mishra এর মতে সমর্পণ মূল্য নির্ণয় এর বৃত্তি 2 টি। যথা:

  • সঞ্চিতি বৃত্তিতে, সমর্পণ মূল্য = সমর্পণ মূল্য – সমর্পণ খরচ
  • সঞ্চয় ভিত্তিতে, সমর্পণ মূল্য = বীমা অর্থ + ভবিষ্যৎ খরচের জমাকৃত অংশ + ভবিষ্যৎ প্রদেয় বোনাস (পুঞ্জিভূত অর্থ + সমর্পণ খরচ)

তাহলে বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *