বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে বোঝার জন্য বাক্যের মধ্যে বা বাক্যের শেষে কিংবা বাক্যে আবেগ (হর্ষ-বিষাদ), জিজ্ঞাসা ইত্যাদি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে বাক্য গঠনে যেভাবে বিরতি দিতে হয় এবং লেখার সময় বাক্যের মধ্যে তা দেখানোর জন্য যেসব সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে যতি বা বিরাম চিহ্ন বা ছেদচিহ্ন বলে।
সহজভাবে, বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে বুঝানোর জন্য এবং সম্বন্ধ পরিষ্কার করার জন্য বাক্যের মধ্যে ও শেষে কতগুলো চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, এগুলোকে বিরাম, যতি বা ছেদ চিহ্ন বলে।
পড়ুন – ভাষা কি বা কাকে বলে? ভাষার বৈশিষ্ট্য
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বিরাম চিহ্ন
যতি চিহ্নের নাম | আকৃতি | বিরতি -কাল- পরিমাণ |
কমা | , | ১ বলতে যে সময় লাগে |
দাঁড়ি/ পূর্ণচ্ছেদ | । | এক সেকেন্ড |
জিজ্ঞাসা বা প্রশ্নসূচক চিহ্ন | ? | এক সেকেন্ড |
বিস্ময়সূচক বা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন | ! | এক সেকেন্ড |
ড্যাস | – | এক সেকেন্ড |
কোলন ড্যাস | :- | এক সেকেন্ড |
কোলন | : | এক সেকেন্ড |
সেমি কোলন | ; | ১ বলার দ্বিগুণ সময় |
উদ্ধরণ বা উদ্ধৃতি চিহ্ন | ‘ ’/ ‘‘ ’’ | এক উচ্চারণে যে সময় লাগে |
হাইফেন | – | থামার প্রয়োজন নেই |
ইলেক বা লোপ চিহ্ন | ’ | থামার প্রয়োজন নেই |
বন্ধনী চিহ্ন | ( ), { },[ ] | থামার প্রয়োজন নেই |
পড়ুন – পারিভাষিক শব্দ বা পরিভাষা কি? এর প্রয়োজনীয়তা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ২০০ পারিভাষিক শব্দ
যতিচিহ্ন / ছেদচিহ্ন / বিরামচিহ্ন এর ব্যবহার
কমা / পাদচ্ছেদ (,)
- বাক্য পাঠকালে সুস্পষ্টতা বা অর্থ বিভাগ দেখানোর জন্য যেখানে স্বল্প বিরতির প্রয়োজন, সেখানে কমা ব্যবহৃত হয়।
- শুধু শেষ বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ ছাড়া, বাক্যের অন্তর্গত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদের শেষে কমা ব্যবহার করা হয়।
- সম্বোধনের পর কমা বসে।
- প্রত্যক্ষ উক্তির পূর্বে সূচক বাক্যের শেষে কমা বসবে।
- খন্ডবাক্যের পর কমা বসে।
- বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের পরে কমা বসে।
- মাসের তারিখ লিখতে বার ও মাসের পর কমা বসবে।
- নামের পর ডিগ্রিসূচক পরিচয় সংযোজিত হলে সেগুলোর প্রত্যেকটির পরে কমা বসবে। ইত্যাদি।
পড়ুন – বাবা কোন ভাষার শব্দ?পরীক্ষায় আসতে পারে এমন কয়েকটি তুর্কি শব্দ
সেমি কোলন (;)
- দুটি বা তিনটি বাক্য সংযোজক অব্যয়ের সাহায্যে যুক্ত না হলে সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়।
- কমা অপেক্ষা অল্প বিরতির প্রয়োজন হলে সেমিকোলন বসে।
- ছোট ছোট বিতর্কিত অংশ নির্দেশ করার জন্য সেমিকোলন বসে।
- সমজাতীয় দ্রব্য বা বিষয়কে আলাদা করার জন্য সেমিকোলন বসে। ইত্যাদি।
দাঁড়ি/ পূর্ণচ্ছেদ (।)
- বাক্যের শেষে দাঁড়ি ব্যবহার করতে হয়।
- অনেক সময় ক্রম নির্দেশক সংখ্যার পর দাঁড়ি বসে ।
পড়ুন – ব্যাকরণ কি বা কাকে বলে? ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা
জিজ্ঞাসা বা প্রশ্নসূচক চিহ্ন (?)
- কোন কিছু জিজ্ঞেস করা হলে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে।
- সন্দেহ বা সংশয় বোঝাতে প্রশ্নসূচক চিহ্ন ব্যবহৃত হয় ইত্যাদি।
বিস্ময়সূচক বা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন (!)
- ভয়, বিস্ময়, শোক, আনন্দ,বেদনায ইত্যাদি হৃদয়াবেগ প্রকাশ করতে বিস্ময়সূচক বা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
- আবেগসূচক অব্যয়ের পরেও বিস্ময় চিহ্ন বসে।
- সম্বোধন পদের পরে কখনো কখনো বিস্ময় চিহ্ন ব্যবহৃত হয় ইত্যাদি।
পড়ুন – উদাহরণসহ “এ” ধ্বনি উচ্চারণের ৫ টি নিয়ম
কোলন (:)
- বাক্যে কোন প্রসঙ্গ অবতরণের আগে কোলন বসে।
- যথা, যেমন, উদাহরণ ইত্যাদির পর কোলন বসে।
- কোন উদ্ধৃতির আগে কোলন বসে।
- নাটকের নামের পর সংলাপের আগে কোলন বসে।
- দরখাস্ত ও ফর্মে ভুক্তি ও উপভুক্তির পর কোলন বসে।
- গণিতের অনুপাত বুঝাতে কোলন বসে ইত্যাদি।
ড্যাস (-)
- উদাহরণ দিতে বা তালিকা দিতে হলে তার আগে ড্যাস চিহ্ন বসে।
- যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা তার বেশি বাক্যের সমন্বয় বা সংযোগ বোঝাতে ড্যাস ব্যবহৃত হয়।
- শূন্যস্থান পূরণের ক্ষেত্রে লুপ্ত শব্দের স্থানে ড্যাস বসে।
- স্থান ও কালগত দূরত্ব বা ব্যবধান নির্দেশ করতে ড্যাস বসে।
- ভ্রমণপথের পরিচয় দিতে ড্যাস চিহ্ন বসে। ইত্যাদি।
পড়ুন – ধ্বনি কি বা কাকে বলে? ধ্বনি,স্বরধ্বনি,ও ব্যঞ্জনধ্বনির প্রকারভেদ
কোলন ড্যাস (:-)
- উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত প্রয়োগ করতে হলে কোলন ড্যাস বসে।
- প্রসঙ্গের দৃষ্টান্ত প্রদর্শনের জন্য কোলন ড্যাস ব্যবহৃত হয়।
- শিরোনামের শেষে কোলন ড্যাস ব্যবহার করা হয় ইত্যাদি।
হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন (-)
- সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখানোর জন্য হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
- দুটি শব্দের সংযোগ বা বিশ্লেষণ দেখানোর জন্য হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
- কখনো কখনো উপসর্গের পর হাইফেন বসে।
- কোন একটি বর্ণ অন্য শব্দের সঙ্গে সম্পর্কিত হলে হাইফেন বসে।
- কোন উল্লেখযোগ্য চুক্তি বা ঘটনার সাথে স্থানের নামের সংযুক্তিতে হাইফেন বসে।
- দপ্তর অথবা প্রাতিষ্ঠানিক পদমর্যাদা বুঝাতে হাইফেন বসে।
- দুটি নাম বিশেষণের সংযোজনে হাইফেন বসে।
- সংখ্যার সাথে শব্দের সংযোগ ঘটাতে হাইফেন বসে ইত্যাদি।
পড়ুন – ব্যাকরণে পুরুষ কি বা কাকে বলে? পুরুষের প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ
ইলেক বা লোপ চিহ্ন (‘)
- কোন বর্ণ বিশেষের লোপ বুঝাতে বিলুপ্ত বর্ণের জন্য লোপচিহ্ন দেওয়া হয়।
উদ্ধরণ চিহ্ন (” “)
- বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিতে এই চিহ্নের অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।
- কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, বই, চলচ্চিত্র ইত্যাদির নাম ব্যবহারের সময় উদ্ধরণ চিহ্ন বসে।
পড়ুন – ধাতু কি বা কাকে বলে? ধাতুর প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ
ব্র্যাকেট বা বন্ধনী চিহ্ন () , { }, [ ]
- এ তিনটি চিহ্ন গণিতে ব্যবহৃত হয় তবে প্রথম বন্ধনীটি বিশেষ ব্যাখ্যামূলক অর্থে সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- নাটকের সংলাপে চরিত্রের ক্রিয়া নির্দেশ করতে প্রথম বন্ধনী ব্যবহার করা হয়।
- কখনো কখনো ব্যাখ্যামূলক বিষয় হিসেবে ৩ য় বন্ধনী ব্যবহৃত হয় ইত্যাদি।
পড়ুন – বাক্য কি বা কাকে বলে? গঠন ও অর্থ অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ
তাহলে আজ এখানেই শেষ করছি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।