বিটকয়েন কি? বিটকয়েন (Bitcoin) কীভাবে কাজ করে?

ইন্টারনেটের একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা হলো বিটকয়েন, যেটি বহু বছর ধরে বিদ্যমান। এখনকার সময়ে বিটকয়েন অনেক বেশি জনপ্রিয় ও একটি প্রচলিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া বিটকয়েন থেকে টাকা আয় করার সুযোগও রয়েছে।

আপনাদের মাঝে অনেকে হয়তো বিটকয়েন সম্পর্কে শুনেছেন তবে এখনো অনেকে আছে যারা বিটকয়েন নিয়ে কিছু জানেনা। তাই যারা বিটকয়েন সম্পর্কে কিছুই জানে না তাদের জন্যই আজকের এ আর্টিকেলটি লিখা। তাহলে আর দেরি না করে, চলুন জেনে নিই বিটকয়েন কি?

বিটকয়েন (Bitcoin) কি?

বিটকয়েন একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা যা কেবল ডিজিটালি ব্যবহার করা যায়। ডলার (Dollar), রুপির (Rupees) মতোই বিটকয়েনও এক ধরনের মুদ্রা।

এরকম ভার্চুয়াল মুদ্রাগুলোকে আমরা হাতে ধরে অনুভব করতে পারিনা,এমনকি চোখেও দেখতে পারিনা। তাই বিটকয়েন কে ডিজিটাল মুদ্রাও বলা হয়। আবার একে ইলেকট্রনিক মুদ্রাও বলা যেতে পারে।

অর্থাৎ এটা এমন ধরনের মুদ্রা যা কেবল অনলাইনে ডিজিটালি কেনাবেচা করা যায়। এ ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা বা ইলেকট্রনিক মুদ্রা ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনলাইন লেনদেন করা যায়। এটি কেবল অনলাইন ওয়ালেটগুলোতে সঞ্চয় করে রাখা যায়।

আরো পড়ুন- বিটকয়েন সম্পর্কে ৫ টি অজানা তথ্য!

এ ধরনের মুদ্রাগুলোকে সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। যেমন প্রতিটি দেশ-বিদেশে 1 ডলারের মান ভিন্ন ভিন্ন ঠিক সেভাবেই 1 বিটকয়েন এর মান বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন। এবার আপনাদের মনে হয়তো প্রশ্ন আসতেছে 1 বিটকয়েন সমান কত টাকা? বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে এটি আলাদা আলাদা।

ভারতের ক্ষেত্রে , ১৪ নভেম্বর, ২০২০ অনুযায়ী

১ বিটকয়েন = ১১৮৮০৮৯.৪০ ভারতীয় টাকা

এবং, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, ১৪ নভেম্বর, ২০২০ অনুযায়ী

1 বিটকয়েন = ১৩৫২৪৭৩.৯২ বাংলাদেশি টাকা

মনে রাখবেন 1 বিটকয়েন এর মান প্রতিদিন ওপর- নিচ হতে থাকে। তাই আমি যে সংখ্যা দিয়েছি ভাববেন না, এটাই চিরকাল থাকবে। হয়তো কালকেই এর চেয়ে দ্বিগুণ কম বা বেশি হতে পারে।

কিছুটা শেয়ার মার্কেটের মতই লাগছে তাই না। তবে বিটকয়েনের সাথে শেয়ার মার্কেটের কোন যোগসূত্র নেই।

বিটকয়েন কাকে বলে?

বিটকয়েন হল ভার্চুয়াল মুদ্রা। এটি এমন ধরনের মুদ্রা যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোন ব্যাংক, অথরিটিজ বা গভার্মেন্ট নেই। অর্থাৎ বিটকয়েনের কোন মালিক নেই।

ঠিক যেমন ইন্টারনেটের মালিক নেই কিন্তু আমরা সবাই ব্যবহার করে লাভ নিচ্ছি, তেমনি বিটকয়েনের কোন মালিক নেই। তবে যে কেউ ডিজিটালি এই মুদ্রা ব্যবহার করতে পারবেন।

বিটকয়েন কে আবিষ্কার করেছেন ?

২০০৯ সালে, “Satoshi Nakamato” নামের একজন ব্যাক্তি বিটকয়েনের আবিষ্কার করেছিলেন।

তবে, সেই সময় বিটকয়েন এর জনপ্রিয়তা ও লোকপ্রিয়তা আজকের সময়ের মতো কখনোই ছিলোনা। জানা যায়, বিটকয়েন কখন আবিষ্কার হয়েছিল তখন থেকে ২০১০ সালের মধ্যে 1 বিটকয়েনের মান কিছুই ছিল না।

পরে ২০১০ সালের মার্চ মাসে ১ বিটকয়েনের মান হয় ০.০০৩ এবং জুলাই মাসে০.০০৮ – $০.০৮ ভেতরে থাকে। এরপর ২০১৩ সাল থেকে 1 বিটকয়েন এর মান তীব্র গতিতে বাড়তে থাকে।

তাহলে ভেবে দেখুন, বিটকয়েন চালু হওয়ার সময় যদি কিছু কিনে রাখতেন তাহলে আজ একশো দুশো টাকার বদলে কয়েক লক্ষ টাকার মালিক থাকতেন। এভাবে বিটকয়েনের মাধ্যমে লোকেরা ইনকাম করছে।

বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে?

আগেই বলেছি, বিটকয়েন হলো ইলেকট্রনিক মুদ্রা বা ডিজিটাল মুদ্রা। এরকম মুদ্রা ব্যবহার ও আদান-প্রদান বা কেনা বেচা করার জন্য ইন্টারনেটের প্রয়োজন। যেমন –

বর্তমানে অনেক ধরণের Online Wallet Apps রয়েছে। যেমন – Paytm, Freecharge….. etc. যেভাবে টাকা হাতে না ধরে এবং চোখে না দেখেই এ ওয়ালেট অ্যাপগুলো ব্যবহার করে আমরা অন্যের ওয়ালেট অ্যাপ এ টাকা ডিজিটালি ট্রানস্ফার করতে পারি ঠিক তেমনভাবে বিটকয়েন এমন একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা যেটা কখনোই চোখে দেখতে এবং হাতে ধরতে পারবেন না।সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি বা ডিজিটালি করা হয়।

বিটকয়েন কেনাবেচা বা প্রদান করার জন্য আপনাকে যেকোনো একটি বিটকয়েন অ্যাপস বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে হবে। এ ওয়েবসাইট বা অ্যাপস এর মাধ্যমে আপনার কাছে থাকা বিটকয়েনের সাংখ্যিক বা পরিমাণ দেখতে পারবেন। আর এ ওয়েবসাইট এবং অ্যাপগুলোর মাধ্যমে আপনি বিটকয়েন কিনতে এবং বিক্রি করতে পারবেন।

যখন মার্কেটে বিটকয়েনের চাহিদা কম থাকে লোকেরা তখন বিটকয়েন কিনে রাখেন। কারণ তখন বিটকয়েনের দাম কম থাকে। তাই কম খরচ করে অধিক বিটকয়েন কিনতে পারবেন। আবার যখন বিটকয়েনের চাহিদা বেড়ে যাবে তখন এর দামও বেশি থাকবে। আর সেটাই সেসময় যখন কম দামে কেনা বিটকয়েন আপনি পুনরায় বিক্রি করে অধিক লাভ করতে পারবেন।

আপনার সেই কেনা বিটকয়েনের দাম কত সে ব্যাপারে আপনি অ্যাপস বা ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে জানতে পারবেন।

বিটকয়েন একাউন্ট খুলব কীভাবে?

বিটকয়েন শুধু অনলাইনে ইলেকট্রনিক ভাবে জমা রাখা যায়। তাই বিটকয়েন কিনতে চাইলে প্রথমে আমাদের একটি বিটকয়েন ওয়ালেট একাউন্ট প্রয়োজন। এইজন্য বিটকয়েন ওয়ালেট এ গিয়ে রেজিস্টার করতে হবে। তবে বিটকয়েন ওয়ালেট বিভিন্ন রকম হতে পারে। যথঃ

  • Desktop Wallet
  • Online Wallet
  • Mobile Wallet
  • Hardware Wallet

এর মধ্যে যেকোনো একটি ওয়ালেট ব্যবহার করে আপনি একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন। এগুলো ইউনিক অ্যাড্রেস হিসেবে একটি অ্যাকাউন্ট দেয়। আরে ইউনিক এড্রেস বা আইডির মাধ্যমে ভবিষ্যতে ইনকাম করা বিটকয়েন ওয়ালেট একাউন্টে জমা রাখতে পারবেন। বিটকয়েন একাউন্ট খোলার জন্য সবচেয়ে বেশি যে দুটি অ্যাপ ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো-

  • Unocoin
  • Zebpay

Unocoin

এটি একটি ইউজার ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট। যেটা ব্যবহার করে খুব সহজেই যে কেউ বিটকয়েন একাউন্ট খুলতে পারবে এবং সহজে বিটকয়েন কেনাবেচা করতে পারবে। Unicoin এ এমন কিছু ফিচার রয়েছে যে কারণে অনেকেই এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করে বিটকয়েন কিনে থাকেন।

এর ফিচারগুলো হলো-

  • Simple Integration
  • 0 % fees
  • OTC trading
  • No Chargebacks
  • Auto Sell Bitcoin
  • নিজের একটি বিটকয়েন এড্রেস তৈরি করতে পারবেন।
  • অধিক ভালো সিকিউরিটির ক্ষেত্রে 2 স্টেপ Authentication সুবিধা রয়েছে

একাউন্ট খোলার জন্য Unicoin App ডাউনলোড করে আপনার কিছু তথ্য ও নথিপত্র জমা করে আপনি একটি বিটকয়েন ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারবেন।

Zebpay

Zebpay একটি খুব ভালো ওয়েবসাইট যেখান থেকে আপনারা সহজে বিটকয়েন কিনতে পারবেন। বিটকয়েন কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অ্যাপ হিসেবে এটি প্রমাণিত হয়েছে।

এর বৈশিষ্ট্যগুলো হল –

  • এখানে বিটকয়েনের মাধ্যমে মোবাইল রিচার্জ এবং ডিটিএইচ রিচার্জ করা সম্ভব।
  • বিটকয়েনের মাধ্যমে অ্যামাজন ফ্লিপকার্ট এবং মেক মাই ট্রিপ ভাউচার কিনে নিতে পারবেন।
  • বিটকয়েন করার জন্য সবচেয়ে দ্রুত মাধ্যম।
  • সুরক্ষিতভাবে বিটকয়েন কেনাবেচা করতে পারবেন।
  • এ অ্যাপ ব্যবহার করে মোবাইল থেকেও বিটকয়েন কেনাবেচা করা সম্ভব।

বিটকয়েন কিভাবে কিনব?

বিটকয়েন কেনার জন্য প্রথমে Zebpay app ডাউনলোড করতে হবে। তাছাড়া আপনারা zebpay র website এ প্রবেশ করেও একাউন্ট রেজিস্টার করতে পারবেন। এরপর আপনাকে কিছুু তথ্য এবং ডকুমেন্ট দিয়ে একাউন্টট রেজিস্টার করতে হবে।

সবশেষে একাউন্ট এক্টিভ করার পর আপনি বিটকয়েন কিনতে পারবেন এবং যেকোনো সময় বিক্রিও করতে পারবেন।

বিটকয়েন কিভাবে আয় করা যায়?

বিটকয়েন আয় করার তিনটি প্রধান মাধ্যম রয়েছে। যেমন –

  • টাকা খরচ করে বিটকয়েন কেনা।
  • আপনি যদি অনলাইনে কোন প্রোডাক্ট বিক্রি করেন তাহলে তার বিনিময় কাস্টমারদের থেকে বিটকয়েন নিতে পারবেন।
  • বিটকয়েন মাইনিং

টাকা খরচ করে বিটকয়েন কেনা: সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হল টাকা খরচ করে বিটকয়েন কেনা। আপনার কাছে যদি টাকা থাকে তবে আপনি টাকার বিনিময় বিটকয়েন কিনেে নিতে পারবেন।

তাছাড়া আপনি বিটকয়েনের ছোট ছোট অংশ বা ইউনিট কিনতে পারবেন। যেমন – 1 টাকায় 100 পয়সা তেমনি একটি বিটকয়েন অনেকগুলো ছোট ছোট ইউনিট রয়েছে যেগুলোকে Satoshi বলা হয়। ১ বিটকয়েন = ১০ কোটি Satoshi থাকে।

আপনারা অনেক কম টাকা খরচ করে এই ছোট Satoshi গুলো কিনতে পারবেন। আপনি চাইলে 50 টাকা, 100 টাকা, 500 টাকা, 1000 টাকা বা এর বেশি টাকারও কিনতে পারবেন।

আপনি যদি অনলাইনে কোন প্রোডাক্ট বিক্রি করেন তাহলে তার বিনিময় কাস্টমারদের থেকে বিটকয়েন নিতে পারবেন

এতে আপনার পণ্য বেচা হয়ে গেল এবং বিনিময়ে বিটকয়েন আয় করে নিতে পারবেন। এখান থেকে নেওয়া বিটকয়েন আপনার বিটকয়েন ওয়ালেট একাউন্টে জমা থাকবে।

বিটকয়েন মাইনিং: বিটকয়েন থেকে আয় করার সর্বশেষ এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হল বিটকয়েন মাইনিং। এ ব্যাপারটি কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা এবং এ ব্যাপারে আপনার প্রচুর জ্ঞান থাকতে হবে। এজন্য প্রয়োজন হবে একটি কম্পিউটারের যার প্রসেসর এবং হার্ডওয়্যার অধিক উন্নতমানের এবং শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে বিটকয়েন মাইনিং কি? চলুন সে বিষয়ে জেনে নেই।

বিটকয়েন মাইনিং কি?

আমরা বিটকয়েন ব্যবহার করে অনলাইন পেমেন্ট বা ট্রানজেকশন করি। এধরনের বিটকয়েনের যখন অনলাইন ট্রানজেকশন হয়ে থাকে তখন ট্রানজেকশনগুলোকে ভেরিফাই করা হয়।

আর যারা এই বিটকয়েন ট্রানজেকশনগুলো ভেরিফাই করে তাদেরকে বলা হয় Miners. বিটকয়েন ট্রানজেকশন ভেরিফাই করার এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় বিটকয়েন মাইনিং।


আজ এখানেই শেষ করছি। আশা করি বিটকয়েন সম্পর্কে অল্পকিছু হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। আমার এ আর্টিকেল পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু । আর বিটকয়েন সম্পর্কে কোন রকম সমস্যা বা অভিযোগ থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন।

অবশ্যই পড়ুন –

জিমেইল একাউন্ট / জিমেইল আইডি খুলবো কিভাবে?

টুইটার (Twitter) একাউন্ট খুলবেন কীভাবে?

বেশি বেশি আয় করা যায় এমন সেরা ৫ টি ফ্রিল্যান্সিং কাজ

ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়ে আয় করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *