ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় করুন সহজ ৫ উপায়ে!

আমরা যত তথ্য ও প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ততই বাড়ছে অনলাইনে কাজের পরিমাণ। অনলাইনের এই কাজ যা কখনো শেষ হবার নয়। কাজের পরিমাণ যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে ইনকাম রেটও।

অনলাইনে এখন কম-বেশি অনেকেই টাকা ইনকাম করছে। অনলাইনে টাকা ইনকাম করা অন্য সকল মাধ্যম থেকে সহজ হওয়ার কারণে অনেকেই অনলাইনে ইনকামের দিকে ঝুঁকছে। আমরা প্রতিদিন ফেসবুক, ইউটিউবে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো ব্যবহার করে আমাদের লাভের থেকে লসই বরং বেশি হয়। কারণ, আমরা অনেকেই জানি না এসকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে কিভাবে লাক্ষ লাক্ষ টাকা ইনকাম করা যায়।

আমরা বাংলাদেশের মানুষরা ফেসবুক এবং ইউটিউবে বেশি সময় ব্যয় করি। তাই শুধু শুধু সময় নষ্ট না করে, এগুলো থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায় সে সকল পদ্ধতিগুলো নিয়েই আজকের আলোচনা। ইউটিউব থেকে টাকা ইনকামের অনেকগুলো পদ্ধতি সম্পর্কে আমি অলরেডি বেশ কয়েকটা ব্লগ পোস্ট করেছি, যাদের ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার ইচ্ছে আছে তারা নিচের ব্লগগুলো থেকে একবার ঘুরে আসুন।

ইউটিউব থেকে আয় করার A টু Z

ইউটিউবে ভিডিও মনিটাইজেশন ছাড়াই টাকা ইনকাম করুন

১০ টি ব্রিলিয়েন্ট ইউটিউব চ্যানেল আইডিয়ায় লক্ষ টাকা ইনকাম করুন

সহজ ৩ উপায়ে আয় করুন ইউটিউব থেকে!

আজকে আমি মূলত ফেসবুকে গ্রুপ বা পেইজ থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ফেসবুকে সময় নষ্ট না করে যারা সময়টাকে কাজে লাগাতে চান তাদের জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা। ধৈর্য্য ধরে সম্পূর্ণ ব্লগটি পড়ুন আশা করি ভাল কিছু পাবেন। তো, চলুন সামনে আগানো যাক,,,,,, ফেসবুক গ্রুপ বা পেইজ থেকে টাকা ইনকামের অনেকগুলো পথ আছে। এতো কিছু একটি ব্লগে আলোচনা করা সম্ভব না। আমি এখানে মূলত সেরা ৫ টি পদ্ধতি সম্পর্কে বলবো, যেগুলোর মাধ্যমে সকল শ্রেণীর মানুষই ফেসবুক থেকে যতখুশি ইনকাম করতে পারবেন।

1. পণ্য বিক্রি করে ইনকাম

 

ফেসবুকের কল্যাণে এখন আর কোন পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য আলাদা ওয়েবসাইটের প্রয়োজন পড়ে না। এখন আপনি ফেসবুককে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আপনি একটি পেইজ বা গ্রুপ খুলে তাতে আপনার যেকোন প্রডাক্ট বিক্রি করতে পারেন। আপনার গ্রুপ বা পেইজে মেম্বার যত বেশি হবে আপনার প্রডাক্টগুলো আপনি তত বেশি মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারবেন। তাছাড়া আপনি ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার যেকোন প্রডাক্ট অল্প টাকার মাধ্যমে বুস্ট (Boost) করে আপনার টার্গেটেড মানুষদের কাছে পৌছে দিতে পারেন। আপনি যে ধরনের প্রডাক্ট বিক্রি করতে চান, সে সকল প্রডাক্টের পিকচারের সাথে এর দাম এবং কোয়ালিটিগুলো লিখে (চাইলে দাম উল্লেখ্য নাও করতে পারেন) গ্রুপে বা পেইজে পোস্ট করে দিবেন। তাতে আপনি অল্প সময়ের মধ্যেই অসংখ্য ক্রেতার কাছে পৌছাতে পারছেন। যেহেতু আপনার গ্রুপ বা পেইজটি প্রডাক্ট সেলিং গ্রুপ তাই এখানে আপনার ক্রেতার শুধু থাকবে। অল্প সময়ে প্রডাক্ট বিক্রি করার জন্য ফেসবুক একটি বেস্ট মাধ্যম। তবে অবশ্যই দিনের যেকোন সময় পোস্ট করবেন না। আপনার ক্রেতারা দিনের যে সময়টাতে ফেসবুকে বেশি একটিভ থাকে, সেই সময় আপনি পোস্ট করবেন। তাতে আপনি আরো বেশি মানুষের কাছে পৌছাতে পারবেন। প্রয়োজনে রুটিন করে পোস্ট করুন।

উল্লেখ্যঃ ফেসবুক গ্রুপ বা পেইজের মাধ্যমে আপনি যেকোন পণ্যই বিক্রি করতে পারেন। তবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- মেয়েদের কসমেট্রিক্স সামগ্রী, যেকোন ধরনের কাপড়ের পণ্য, যেকোন ধরনের ইলেক্ট্রনিক্সের পণ্য, ফল-মূল সহ দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্য সামগ্রী।

2. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অতুলনীয়। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুক যেহেতু অন্যতম, তাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর একটি বেস্ট প্লাটফর্ম হচ্ছে ফেসবুক। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো অন্যের ই-কমার্স সাইটের পণ্য নিজে বিক্রি করা। আর এই বিক্রির জন্য উক্ত ই-কমার্স সাইট আপনাকে কিছু কমিশন দিবে। সহজ কথায়, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মানে কমিশনের মাধ্যমে অন্যের পণ্য বিক্রি করা। এই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য আপনার বিশেষ কোন দক্ষতার বা কোন কিছু শিখার দরকার নাই। আপনার যদি একটি অধিক মেম্বারের ফেসবুক গ্রুপ বা পেইজ তাকে তাহলেই আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন। তার জন্য আপনাকে যা করতে হবে, তা হলো আপনি যাদের ওয়েবসাইটের পণ্য বিক্রি করবেন তাদের সাথে আগে কথা বলে একটি অ্যাফিলিয়েট একাউন্ট খুলে নিবেন। একাউন্ট খোলা হয়ে গেলে আপনি যে পণ্যগুলো বিক্রি করতে চাচ্ছেন,  তারা এসব পণ্যের একটি লিংক আপনাকে দিবে। ঐ লিংক আপনি ফেসবুক গ্রুপে বা পেইজে পোস্ট করবেন। তারপর ঐ লিংক থেকে গিয়ে যতজন মানুষ পণ্য কিনবে আপনি তাদের থেকে কিছু কমিশন পাবেন। অবশ্যই, আপনাকে তারা কি পরিমাণ কমিশন দিবে এটাও আপনার আগেই কথা বলে নিতে হবে।

যেসকল ওয়েবসাইট থেকে আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন তাদের মধ্যে বর্তমান সময়ে বিশ্বের বিখ্যাত ১০টি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইট হলো-

1. Amazon Associates

2. eBay Partner Network

3. ClickBank 

4. Walmart 

5. ShareASale

6. FlexOffers 

7. CJ

8. Rakuten Marketing

9. Avangate Affiliate Network

10. Peerfly

3. অ্যাডভার্টাইজের মাধ্যমে ইনকাম

ইউটিউবের মতো ফেসবুকেও রয়েছে অ্যাডভার্টাইজমেন্টের মাধ্যমে আয় করার সুবিধা। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে যে শর্তগুলো পূরণ করতে হবে তা হলো- 1. আপনার পেইজের ১০,০০০ লাইক বা ফলোয়ার থাকতে হবে। 2. আপনার পেইজের ভিডিওগুলোর ওয়াচ টাইম ৩০,০০০ মিনিট হতে হবে। 3. ভিডিওর দৈর্ঘ্য ৩-৪ মিনিটের কাছাকাছি হতে হবে। এই শর্ত গুলো পূরণ করতে পারলে আপনি আপনার পেইজের মনিটাইজেশনের (monetization) জন্য আবেদন করতে পারবেন। (মনিটাইজেন কি? জানতে এখানে ক্লিক করুন)

১ মিনিটের ভিডিও বা ৯০ সেকেন্ডের ভিডিও গুলোতে সাধারণত ফেসবুক মনিটাইজেশন দেয় না। ফেসবুকে মনিটাইজনের জন্য অবশ্যই এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। তবে ফেসবুক মনিটাইজেশনের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে কম টাকা দেয়। অ্যাডভার্টাইজমেন্টের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতে চাইলে দেখে নিতে পারেন ইউটিউব থেকে টাকা ইনকামের A টু Z. তবে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ছাড়াও ফেসবুক থেকে টাকা ইনকামের আরো একটি পদ্ধতি হলো স্পন্সরশীপ। স্পন্সরশীপের মাধ্যমে মূলত আপনি কোন ই-কমার্স সাইট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্যের প্রচার করে ইনকাম করতে পারবেন হাজার হাজার টাকা। তবে তার জন্য অবশ্যই আপনার ভাল একটি Group বা Page চাই, যেখানে আপনার ভিডিওগুলো মোটামোটি ভাল পরিমাণ ভিউ হয়। সেক্ষেত্রে সাধারণত আপনার ভিডিওগুলো 100K থেকে শুরু করে যত বেশি ভিউ হবে আপনার স্পন্সরশীপ ইনকাম তত বেড়ে যাবে।

4. সাবক্রিপশন বা মেম্বারশিপ

সাবক্রিপশন বা মেম্বারশিপ ফেসবুকের একটি দারুন পরিষেবা। ২০১৮ সালে ফেসবুক এই পরিষেবাটি চালু করেন। মূলত, সাবক্রিপশন হলো গ্রুপ বা পেইজে পেইড মেম্বার এড করা। এটা অনেকটা ফেসবুকের প্রাইভেট গ্রুপের মতো। এখানে গ্রুপের এডমিন প্রত্যেক মেম্বারের কাছ থেকে মাসে 0.99ডলায় থেকে 9.99 পর্যন্ত নিতে পারেন। অর্থাৎ এডমিন মেম্বারশিপ চালু করবেন, তখন গ্রুপের মেম্বাররা টাকা দিয়ে মেম্বারশিপ কিনে নিবেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো এতো টাকা দিয়ে কেউ কেন মেম্বারশিপ কিনবে? একটা উদাহরণ দিলে বুঝে যাবেন কেন মেম্বারশিপ মানুষ কিনে। যেমন অনেক ভাল খেলোয়ার আছেন যারা খেলার প্রশিক্ষণ, নৃত্য প্রশিক্ষণ, মুভি মেকিং প্রশিক্ষণ, ডিজাইন প্রশিক্ষণ, শিক্ষক, ডাক্তারী সেবা, আইন সেবা, হ্যাকিং সেবা ইত্যাদি পেইড মেম্বারশিপের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। সুতরাং, সাবক্রিপশন বা মেম্বারশিপের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতে হলে আপনার অবশ্যই বিশেষ কোন দক্ষতা লাগবেই। নয়তো কেউ টাকা দিয়ে আপনার কাছে কোন কিছু শিখতে আসবে না।

5. অন্যান্য উপায়ে ইনকাম

উপরে উল্লেখিত উপায়গুলো ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি ভাল পদ্ধতি রয়েছে। যেমন- ব্যবসার প্রচার, ফেসবুক গ্রুপ বা পেইজ বিক্রি, সার্ভিস বিক্রি ইত্যাদি। যেকোন ধরনের ব্যবসাকে স্থানীয়, দেশীয় বা বিশ্ব পর্যায়ে প্রমোট করার জন্য ফেসবুক একটি বেস্ট মাধ্যম। কারণ, ফেসবুকের মাধ্যমে আপনি অল্প টাকা দিয়েই আপনার টার্গেটেড এরিয়া, বয়স অনুযায়ী আপনার ব্যবসাকে প্রমোট করতে পারবেন। আপনার যদি কোন ছোট-বড় ব্যবসা থাকে, তাহলে আপনি ফেসবুকটাকে ব্যবসা প্রমোট করার জন্য সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া, আপনার যখন মোটামোটি বড় একটা গ্রুপ বা পেইজ থাকবে, আপনি যখন ইচ্ছে তা বিক্রি করে দিতে পারবেন। বর্তমানে ফেসবুক প্রাইভেট গ্রুপের মাধ্যমে অনেক পেইড কোর্স করানো হয়। আবার অনেকেই গ্রুপ বা পেইজে পড়ালেখার কোন টপিকের ভাল ভাল ভিডিও বা কনটেন্ট লিখে তার উপর বিভিন্ন শিটও বিক্রি করে থাকেন। অর্থাৎ প্রথমে একটি ভাল ভিডিও লেকচার আপলোড করা হয়, এই লেকচারটা যাদের কাছে ভাল লাগে তারা ঐ টিচারের অফার করা দামে তার শিট গুলো কিনেন। ফলে এখান থেকে বেশ ভাল একটা এমাউন্ট ইনকাম করা যায়। সর্বোপরি বলা যায়, পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের মানুষই যেহেতু ফেসবুক ব্যবহার করে তাই এখানে আপনি জিরো থেকে হিরো বনে যেতে পারেন যদি সঠিক পদ্ধতিতে আগাতে পারেন। ফেসবুক আজ হাজার হাজার মানুষের ইনকাম সোর্সে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এখন ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের ছোট-বড় ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তাই, এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে যে কাজটা ভাল করতে পারবেন, তার পেছনে সময় দিন। সফলতা একদিন আসবেই।

আর ব্লগটি ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন।

ধন্যবাদ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *