আজ আমরা ফরমালিন কি এবং ফরমালিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানব।
ফরমালিন কি?
ফরমালডিহাইডের রাসায়নিক সংকেত হলো HCHO. সাধারণত ফরমালডিহাইডের ৩৭ – ৪০% জলীয় দ্রবণই হলো ফরমালিন। অর্থাৎ, ফরমালিন (-CHO-)n হলো ফরমালডিহাইডের পলিমার। ফরমালডিহাইড দেখতে সাদা পাউডারের মতো এবং পানিতে সহজেই দ্রবণীয়। এছাড়াও ফরমালিনে ১০ – ১৫ % মিথানল মিশ্রিত থাকে। ফরমালডিহাইড ও মিথানল উভয়েই বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক।
পড়ুন – শ্বসনতন্ত্র কি বা কাকে বলে? শ্বসনতন্ত্রের প্রকারভেদ ও পরিচিতি
ফরমালিন সাধারণত টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, পেপার, রং, মৃতদেহ সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়। লিভার বা যকৃতে মিথানল এনজাইমের উপস্থিতিতে প্রথমে ফরমালডিহাইড পরে ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়। দুটোই শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর।
ফরমালিনের ক্ষতিকর দিক
- ফরমালিনে থাকা ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনাকে আক্রান্ত করে রেটিনার কোষ ধ্বংস করে। এতে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
- এটি ব্যবহারের কারণে পেটের পীড়া, হাঁচি, কাশি,শ্বাসকষ্ট, বদহজম, ডায়রিয়া, আলসার ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে।
- এসব রাসায়নিক পদার্থ আস্তে আস্তে লিভার, কিডনি, হার্ট, ব্রেন ইত্যাদিকে ধ্বংস করে দেয়।
- লিভার ও কিডনি অকেজো হয়ে যায়। হার্ট দুর্বল হয়ে যায়।
- স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়।
- পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালীতে ক্যান্সার হতে পারে।
- রক্তের এসিডিটি বাড়তে পারে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিকভাবে উঠানামা করে।
- শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
- বুদ্ধিমত্তা দিন দিন কমছে।
- গর্ভবর্তী মায়েদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ইত্যাদি।
পড়ুন – পুষ্টি কি বা কাকে বলে? পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা
ফরমালিন টেস্ট করার উপায়
সাধারণত মাছ, মাংস, দুধ, মিষ্টি, আম, আপেল ইত্যাদির মাঝে ফরমালিন মেশানো হয়। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাৎক্ষণিক ফরমালিন টেস্টের জন্য মাছ আমদানি পয়েন্টে সাময়িক সময়ের জন্য ল্যাবরেটরি স্থাপন করে। তবে গ্রামে, হাটে,বাজারে,মাছে তুচ্ছভাবে যে ফরমালিন প্রয়োগ হচ্ছে সে ব্যাপারে কিছুই করা যাচ্ছে না।
এটা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার, এজন্য কয়েক হাজার ল্যাবরেটরি দরকার। যাতে করে ক্রেতারা নিজেরায় ফরমালিন টেস্ট করতে পারে এবং ফরমালিন দেওয়া জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকেন।
পড়ুন – মাইটোসিস কি? মাইটোসিস কোষ বিভাজনের গুরুত্ব
ফরমালিনের প্রধান কাজ হলো পচন রোধ করা। সাধারণত ৩৭-৫০% ফরমালডিহাইডের সাথে ১৫% মিথাইল অ্যালকোহল মেশালে ফরমালিন তৈরি হয়। তাই ফরমালডিহাইডের উপস্থিতিই ফরমালিনের অস্তিত্ব প্রমাণ করে । আর এর পরীক্ষার জন্য কিছু কমপ্লেক্স ক্যামিকেলের প্রয়োজন হয়। এগুলো হলো –
- ফরমালডিহাইডের দ্রবণের সাথে ২ সিসি ফিনাইল হাইড্রোজাইন হাইড্রোক্লোরাইড (১%) এবং ১ সিসি ৫% পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাড দিয়ে তারপর আবার ৫ সিসি ঘনীভূত হাইড্রোক্লোরিক এসিড মেশালে সম্পূর্ণ দ্রবণ গাঢ় গোলাপি রং হয়ে থাকে। একে সেরিভারস টেস্ট বলা হয়।
- ফরমালডিহাইডের হালকা দ্রবণ যেমন মাছে ফরমালিন দেওয়া থাকলে তা ধুয়ে তার পানওতে ১ সিসি সোডিয়াম নাইট্রোপ্রোসাইড মেশালে গাঢ় সবুজ নীল রং ধারণ করে। এতে ফরমালিনের অস্তিত্ব প্রমাণ করে। এসকল ক্যামিকেল পাওয়া অনেক কঠিন এবং দামও অনেক।
তাই সহজ একটি পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিন। সন্দেহযুক্ত ফরমালিন মাছ ধুয়ে পানিতে ৩% হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মেশালে ফরমালডিহাইড অক্সিডাইজড হয়ে ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়। ফরমিক এসিডের প্রমাণের জন্য সে পানিতে অল্প মারকিউরিক ক্লোরাইড মেশালে সাদা রঙের তলানি পড়বে। এতেই ফরমালিন প্রমাণিত হবে।
আরও পড়ুন – ফোন পানিতে পড়ে গেলে কী করবেন?
মাছ থেকে ফরমালিন দূর করার উপায়
- পানিতে প্রায় ১ ঘন্টা মাছ ভিজিয়ে রাখলে ফর্মালিনের মাত্রা ৬১% কমে যায়।
- লবণাক্ত পানিতে ফর্মালিনযুক্ত মাছ ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে ৯০% ফর্মালিন কমে যায়।
- চাউল ধোয়া পানিতে প্রথমে এবং পরে সাধারণ পানিতে ফর্মালিনযুক্ত মাছ ধুলে ৭০% ফর্মালিন কমে যায়।
- তবে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো ভিনেগার ও পানির মিশ্রণে মাছ ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে ১০০% ফর্মালিনই দূর হয়ে যায়।
ফল ও সবজি থেকে ফর্মালিন দূর করার উপায়
ফল খাওয়ার আগে সামান্য গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে ফল ও সবজি ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে ফর্মালিন দূর হয়ে যায়।
তাহলে আজ এখানেই থাকলো। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।