নাইট্রোজেন কি? নাইট্রোজেনের যোজ্যতা, ব্যবহার এবং প্রস্তুতি

১৪ গ্রাম আণবিক ভরবিশিষ্ট মৌলই হল নাইট্রোজেন। নাইট্রোজেন পরমাণুকে বাংলায় যবক্ষারজান বলে ডাকা হয়। পদার্থটি বিশুদ্ধ অবস্থায় বর্ণহীন, গন্ধহীন ও স্বাদহীন থাকে। এটি একটি দ্বি-পরমাণুক গ্যাস, যার যোজনী সংখ্যা ৩ ও ৫। এবং এর যোজ্যতা ইলেকট্রন ৫। নাইট্রোজেন নিজের সঙ্গে শক্তিশালী ত্রি-বন্ধনে যুক্ত হয়ে নাইট্রোজেন গ্যাসে (N2) পরিণত হয়। আর নাইট্রোজেনই আমাদের বায়ুমণ্ডলে সর্বাধিক আয়তনে বিরাজ করে। তা ছাড়া হিমায়ক হিসেবে নাইট্রোজেনের বেশ ব্যবহার রয়েছে।

এটি পৃথিবীর সাধারণ কক্ষীয় তাপামাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। নাইট্রোজেনের এর গলনাঙ্ক : -২১০০.০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং স্ফুটনাঙ্ক : -১৯৫.৭৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নাইট্রোজেনের আইসোটোপ

নাইট্রোজেনের ২টি সুস্থিত আইসোটোপ রয়েছে। আইসোটোপ দুটি হলো—
        ১৪N : এর নিউট্রোন সংখ্যা ৭টি।
        ১৫N : এর নিউট্রোন সংখ্যা ৮টি।

নাইট্রোজেনের বৈশিষ্ট্য

নাইট্রোজেনের পারমানবিক সংখ্যা ৭। বাতাসে প্রায় ৭৮ ভাগ নাইট্রোজেন থাকায় , প্রতিটি নিঃশ্বাসে আমরা অক্সিজেনের সাথে নাইট্রোজেনও গ্রহন করে থাকি। নাইট্রোজেন আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে উদ্ভিদ বাতাস থেকে প্রাপ্ত নাইট্রোজেন সরাসরি গ্রহণ করতে পারে না। জীববিজ্ঞানে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবে।

উচ্চ চাপে নাইট্রোজেনকে তরলে রূপান্তার করা যায়। কোন কিছুকে খুব ঠাণ্ডা করতে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করা যায়। গবেষণায়, বিভিন্ন প্রয়োজনে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহৃত হয়। যেহেতু তরল নাইট্রোজেন মুহূর্তের মধ্যেই গ্যাসে পরিনত হয় তাই একে দীর্ঘ সময় তরল করে রাখার জন্য ভ্যাকুমফ্লাস্ক বা ডিউয়ার(Dewar) নামের একটি বিশেষ ফ্লাস্ক ব্যবহার হয়।

নাইট্রোজেন ০.৩৪ তড়িৎঋণাত্বকতা বিশিষ্ট একটি অধাতু। নাট্রোজেন এর ইলেকট্রন বিন্যাস হতে দেখা যায় এর পরমাণুর বহিস্থ কক্ষপথে ৫টি ইলেক্ট্রন বিদ্যমান। এ কারণে অধিকাংশ যৌগে এটি ত্রিযোজী। নাট্রোজেন অণুতে (N)বিদ্যমান ত্রিবন্ধন শক্তিশালী বন্ধন সমুহের মধ্যে একটি। ফলে (N)অণুকে অন্যান্য যৌগে পরিণত করা বেশ কষ্টসাধ্য এবংঅন্যান্য নাইট্রোজেনের বিভিন্ন যৌগ থেকে N উৎপাদন সহজসাধ্য।

নাইট্রোজেনের ব্যবহার

গ্যাসীয় নাইট্রোজেন

নাইট্রোজেনের বহুবিধ ব্যবহার আছে। নিষ্ক্রীয় বিধায় এটি বাতাসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয় যেখানে জারণ বিক্রিয়া এড়ানো প্রয়োজন। তাই শস্যাগারে শস্য মজুদ রাখতে এবং সিল করা প্যাকেট নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে পূর্ণ করা থাকে। তাছাড়া ড্রাই আইসের মত তরল নাইট্রোজেনের প্রধান ব্যবহার হয়ে থাকে হিমায়ক হিসেবে।

নাইট্রোজেনের প্রস্তুতি

অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH4Cl) ও সোডিয়াম নাইট্রাইটকে (NaNO2) মিশিয়ে সতর্কভাবে তাপ দিলে অ্যামোনিয়াম নাইট্রাইট (NH4NO2) উৎপন্ন হয়। এটি একটি বিষ্ফোরকও বটে। এই অ্যামোনিয়াম নাইট্রাইটে 2 ভাগ N 4 ভাগ H ও দুইভাগ O থাকে। H, O কে নিয়ে পানি তৈরী করলে N মুক্ত হয়ে যায় এবং N2 তৈরী করে

NH4Cl + NaNO2 = NH4NO2 + NaCl

NH4NO2 = N2 + 2 H2O

নাইট্রোজেনের ধর্ম

ভৌতধর্ম:

নাইট্রোজেন একটি

  • স্বাদহীন
  • বর্ণহীন
  • গন্ধহীন
  • অবিষাক্ত
  • অদাহ্য
  • স্বল্পদ্রাব্য
  • প্রায় বায়ুর সমান হাল্কা গ্যাস
  • এটি দহন করতে প্রায় সাহায্য করেনা বললেই চলে
  • অধিকাংশ জীবের শ্বাসকার্যে এদের ভূমিকা নেই

রাসায়নিক ধর্ম

নাইট্রোজেন অণুর মধ্যে ত্রিবন্ধন বিদ্যমান থাকার কারণেই এই মৌলের নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়। তবে কিছু বিশেষ শর্তে নাইট্রোজেন অন্যান্য যৌগ বা মৌলের সাথে বিক্রিয়া করে।

নাইট্রোজেন চক্র

বায়ুতে উপস্থিত সর্বাধিক পরিমাণে থাকা নাইট্রোজেন বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মাটিতে আর মাটি থেকে বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। আর এ প্রক্রিয়াটি চক্রাকারে চলতে থাকে। তাই একে নাইট্রোজেন চক্র বলা হয়। আর এই চক্রের কারণে পৃথিবীতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ সর্বদা অপরিবর্তিত থাকে।   

চক্রটি শুরু হয় যখন নাইট্রোজেন গ্যাস বজ্রপাতে 3000 C তাপমাত্রায় অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসে। নাইট্রোজেন অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসার ফলে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) উৎপন্ন হয়। আবার এই নাইট্রিক অক্সাইড বাতাসের অক্সিজেনের (O2) সাথে বিক্রিয়া করে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (NO2) উৎপন্ন করে।

আর এই নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে উৎপন্ন নাইট্রিক এসিডে (HNO3) মাটিতে মেশে। অতঃপর মাটিতে উপস্থিত কার্বোনেট লবণের (CaCO3) সঙ্গে মিশে নাইট্রেট লবণ উৎপন্ন হয়। উদ্ভিদ বা বৃক্ষ তার মূল রোম দিয়ে নাইট্রেট লবণ শোষণ করে নেয়। বিভিন্ন প্রাণী উদ্ভিদ বা বৃক্ষের লতাপাতা ও ফলমূল গ্রহণ করে। যার ফলে নাইট্রোজেনবিশিষ্ট যৌগটি প্রাণীর মাঝে চলে আসে। যখন প্রাণীটি মারা যায়, তখন তার দেহ বিভিন্ন অণুজীব পচন ঘটায় এবং উক্ত নাইট্রোজেন আবার বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। আর এই প্রক্রিয়াটি চক্রাকারে চলতে থাকে।


আজ এ পর্যন্তই। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

4 thoughts on “নাইট্রোজেন কি? নাইট্রোজেনের যোজ্যতা, ব্যবহার এবং প্রস্তুতি”

  1. Your style is really unique in comparison to other people I’ve read
    stuff from. Thanks for posting when you’ve got the opportunity, Guess I’ll just
    bookmark this page.

  2. I do agree with all of the ideas you’ve offered for your post.
    They are really convincing and will certainly work.

    Still, the posts are too brief for novices. May just
    you please extend them a bit from next time? Thanks
    for the post.

    Here is my site займ онлайн

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *