আসসালামু আলাইকুম প্রিয় ভাই ও বোন। আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছেঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি। আফজালুস সালাতি বাদাল মাফরুদাতি সালাতুল লাইলি’ অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।” – (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)
আমাদের মধ্যে অনেকেই আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের কিভাবে পড়তে হয় জানিনা। তাই আজ আমি তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত নিয়ে বিস্তারিত লিখার চেষ্টা করব।
তাহাজ্জুদের নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ ইবাদত। যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে পারবেন, তাদের মধ্যে একশ্রেণির মানুষ হলেন তারা, যারা যত্নের সঙ্গে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। তাহাজ্জুদ নামাজ একটি নফল ইবাদত তবে নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। তাহাজ্জুদের নামাজকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত হিসাবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। তিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন এবং সাহাবীদের এই নফল পালনে উৎসাহিত করতেন। কুরআনের বিভিন্ন সুরায় এ নামাজের প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে।
তাহাজ্জুদ নামাজ কি?
তাহাজ্জুদ (تهجد) শব্দের অর্থ ঘুম থেকে জাগা। তাহাজ্জুদ নামাজ বা রাতের নামাজ হচ্ছে একটি নফল ইবাদত, ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফজিলত সবচেয়ে বেশী।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর ওপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। তাই তিনি জীবনে কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকেন নি। তবে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এটা সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ এ নামাজ আদায় করলে অশেষ পুণ্য লাভ করা যায়, কিন্তু আদায় করতে না পারলে কোনো গুনাহ হবে না।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ নিম্নে দেওয়া হলঃ-
নিয়তঃ “আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলার দিকে মুখ করিয়া তাহাজ্জুদের দু-রাকআত নফল নামাজের নিয়ত করিলাম। আল্লাহু আকবার।”
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নাত নাকি নফল?
তাহাজ্জুদ নামাজ একটি নফল ইবাদত। তাহাজ্জুদের নফল ইবাদাতকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত হিসাবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার পূর্বে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। তাই তিনি জীবনে কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত হননি এবং তাঁর সাহাবীদেরকেও এটা পালনে উৎসাহিত করতেন।
সূরা বনী ইসরাইলের ৭৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَى أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا
রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন।
আল্লাহ তার বান্দাদের রাত্রির কিছু অংশ কুরআন তিলাওয়াত আর নামায কায়েম করার মধ্য দিয়ে জাগ্রত থাকার জন্য বলেছেন।
পড়ুনঃ ফরজ গোসলের দোয়া, নিয়ত ও নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়
ইশার নামাজ আদায়ের পর থেকে শুরু করে সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া যায়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। তবে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত এবং রাকাআত
ইশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। কুরআনে রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের যে তাকীদ করা হয়েছে তার মর্ম এই যে, রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে থাকার পর উঠে নামায পড়া। তাহাজ্জুদের সর্বোত্তম সময় এই যে, এশার নামাযের পর লোকেরা ঘুমাবে। তারপর অর্ধেক রাতের পর উঠে নামায পড়বে। নবী (সাঃ) কখনো মধ্য রাতে, কখনো তার কিছু আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে-ইমরানের শেষ রুকুর কয়েক আয়াত পড়তেন। তারপর মেসওয়াক ও অযু করে নামায পড়তেন।
তাহাজ্জুদের নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়ার বর্ণনা পাওযা যায়। অর্থাৎ, সর্ব নিম্ন ২ রাকাআত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাআত পড়া যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। তবে এটা আবশ্যক নয়। তাহাজ্জুদের নামাজের কোনো কাজা নেই।
পড়ুনঃ ওযু / অজুর দোয়া, নিয়ত ও ওযু করার সঠিক নিয়ম
তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার নিয়ম
এখানে আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ে জানব ইনশাআল্লাহ। তাহাজ্জুদ একটি নফল ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত দুই রাকাত করে আদায় করতেন। তিনি কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকাত এবং কখনো ১২ রাকাত পড়েছিলেন। কিন্তু কেউ যদি এ নামাজ ২ রাকাত আদায় করেন, তাহলেও তার তাহাজ্জুদ আদায় হবে।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।”
যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম। কেরাত উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজে পড়া জায়েজ আছে। তবে উচু স্বরে পড়া যদি কারও কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তবে চুপিচুপি পড়া কর্তব্য।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মঃ
– তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধা।
– অতঃপর ছানা পড়া।
– সুরা ফাতেহা পড়া।
– অন্য সূরা বা সূরার অংশবিশেষ বা কেরাত পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক লম্বা কেরাত পড়তেন। অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করা। এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
এভাবে দুই দুই রাকাআত করে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা উত্তম।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে রাতের শেষ প্রহরে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আমরা আজকে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম – বাংলা উচ্চারণ সহ নিয়ত, দোয়া এবং পড়ার ফজিলত সম্পর্কে জানলাম। লিখাটি ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।
Apu apni chailei apnar site ti te Google Ads set korte paren tate apni ekta valo amount er taka protimashe generate korte parben I highly recommend that
dhonnobad
মাশাআল্লাহ, আপু আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ?
প্রিয় আপু তোমার জন্য দোয়া ও অসংখ্য ভালবাসা রইল,
আপু তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা ও দোয়া রইলো। তোমার লেখা থেকে অনেক সুন্দর করে তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে জানতে পারলাম। আল্লাহ পাক তোমার মঙ্গল করুন। সেই সাথে তোমার মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি এবং আল্লাহ পাক যেন তোমাকে আরও ভালো ভালো লেখার তৌফিক দান করেন। আমীন।
আমিন
I just take a lesson, thanks ?
মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর লিখনি। খুব ভালো লেগেছে।
আলহামদুলিল্লাহ, অনেক উপকৃত হলাম। আমি আগে কখনোও তাহাজ্জুদ পড়িনি। এখান থেকে নিয়ম ও ফজিলত জানতে পারলাম???
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ?
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর এই লিখনির জন্য। অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই লিখা। আপনার লিখার মাধ্যমে তাহাজ্জুদ এর নামাজ সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম।
ماشاء الله
Alhamdulillah
আসসালামু আলাইকুম ওয়া’রাহামিল্লাহি ওয়া’বারাকা
তাহাজ্জুদ নামাজে এক রাকাতে একাধিক সূরা কি পড়তে পারবো ? আর লম্বা সিজদা করতে গিয়ে কি কি পড়তে পারি ?
জাযাকাল্লাহু খায়ের
বর্তমানে আমি এখন তাহাজ্জুদ নামাজে বসে বসে পড়তেছি খুব ভালো লাগছে। অসংখ্য ধন্যবাদ
আপনার পোস্ট পড়ে অনেক উপকৃত হয়েছি??? অনেক ভালো লাগলো ??
আপু আপনার জন্য দোয়া রইল
Alhamdulillah ???