তাওহীদ শব্দের অর্থ হলো একত্ববাদ। তাওহীদের মূল কথা হচ্ছে – আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এবং তিনি তার সত্বেও গুণাবলীতে অদ্বিতীয়। প্রশংসা এবং এবাদত এর মালিক একমাত্র তিনিই।
সূরা আশ-শুরা 11 নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “কোন কিছুই তার সদৃশ নয়।”
তাওহীদ কাকে বলে?
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ তাআলাকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া কে তাওহীদ বলা হয়। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলাকে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা ও ইবাদতের যোগ্য এক ও অদ্বিতীয় সত্তা হিসেবে বিশ্বাস এর নামই হলো তাওহীদ।
তাওহীদের গুরুত্ব
ঈমানের সর্বপ্রথম ও সর্ব প্রধান বিষয়় হলো তাওহীদ। অর্থাৎ মুমিন ও মুসলিম হতে হলে একজন মানুষকে সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদে বিশ্বাস করতে হবে। তাওহিদ বা বিশ্বাস ব্যতীত কোন ব্যক্তি ঈমান ও ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। ইসলামের সকল শিক্ষা ও আদর্শ তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত। পৃথিবীতে যত নবী-রাসূলগণ এসেছেন সকলেই তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন। সকল নবী গনের দাওয়াতের মূল কথা ছিল – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হঠাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ বা মাবুদ নেই। তাওহীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠা করার জন্য নবী-রাসূলগণ আজীবন সংগ্রাম করেছেন। মূলত তাওহিদই হলো ঈমানের মূল। ইসলামে তাওহীদের গুরুত্ব অপরিসীম।
তাওহীদ এর প্রয়োজনীয়তা
তাওহীদুল আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস। মানবজীবনে তাওহীদের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। তাওহিদা বিশ্বাস মানুষকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ করে দেয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা এবং পালনকর্তা। তাওহীদের বিশ্বাস এর মাধ্যমে মানুষ এই সত্যকে স্বীকার করে নেয়। মানুষের দ্বারা আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করে থাকে।
তাওহীদে বিশ্বাস মানুষকে আত্মসচেতন ও আত্মমর্যাদাবান করে তোলে। মানুষ আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারো নিকট মাথা নত করে না। এর ফলে জগতের সকল সৃষ্টির উপর মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হয় এবং মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মর্যাদা লাভ করে।
সুন্দর চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রেও তাওহীদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মানুষ আল্লাহতালার গুণাবলীর পরিচয় লাভ করে এবং সে অনুযায়ী চলার চেষ্টা করে। মানবসমাজে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায়ও তাওহীদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা তাওহীদে বিশ্বাস মানবসমাজে এ ধারণা প্রতিষ্ঠা করে যে, সকল মানুষই আল্লাহর বান্দা এবং সমান মর্যাদার অধিকারী। এতে করে মানুষের মধ্যে ঐক্যের চেতনা জাগ্রত হয়।
তাওহীদে বিশ্বাস মানুষের মধ্যে আল্লাহভীতি তৈরি করে। ফলে মানুষ আল্লাহর ইবাদত ও সৎ কর্মে উৎসাহিত হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য অসৎ এবং অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে। ফলে মানব সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হয়।
তাওহিদা বিশ্বাস মানুষকে পরকালীন জীবনের সফলতা এনে দেয়। কেননা তাওহীদে বিশ্বাস ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রেই তাওহীদে বিশ্বাস মুক্তি ও সফলতার পথ দেখায়।