চুল পড়বে এটাই স্বাভাবিক। জন্ম থাকলে অবশ্যই মৃত্যু আছে। তেমনি চুলেরও মৃত্যু আছে। চুল ১,১১০ দিন বাঁচে। এরপর মারা যায়। মানুষের মাথায় গড়ে ১ লক্ষ চলে আছে। প্রতিদিন 100 থেকে 150 চুল গজায় এবং 100 থেকে 15০ চুল পড়ে যায়। এটাই স্বাভাবিক। তবে এর চেয়ে বেশি পড়লে তা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের জানা উচিত চুল কেন পড়ে? চুল পড়া বন্ধের উপায় কি? আর দেরি না করে চলুন তাহলে জেনে নেই –
কীভাবে বুঝবেন আপনার চুল পড়ছে?
একজন সুস্থ মানুষের মাথায় গড়ে দেড় লক্ষ চুল থাকে। প্রতিদিন ১০০-১৫০ চুল পড়বে এটায় নরমাল। এর চেয়ে বেশি তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আপনার বালিশ, তোয়ালল বা চিরুনিতে লেগে থাকা চুল পরপর তিনদিন গুনতে চেষ্টা করুন অথবা ১ গোছা চুল হাতে নিয়ে টান দিন যদি দেখেন গোছার ৪ ভাগের ১ ভাগই উঠে আসে তবে সেটা চিন্তার বিষয়। বুঝবেন আপনার চুল পড়ছে।
আরও পড়ুন – ঘরোয়া উপায়ে সাদা চুল কালো করার ৭ টি টিপস
চুল পড়ে কেন?
চুল পড়ার কয়েকটি কারণ হলো –
- সাধারণত অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোনের কারণে চুল পড়ে। এরা চুলের ফলিকলের উপর কাজ করে ও চুল পড়া বাড়িয়ে তোলে।
- চুলে অতিরিক্ত কেমিক্যাল ও হিট দেওয়ার কারনে
- অতিরিক্ত টাইট করে চুল বাঁধলে চুল ঝরে পড়ে।
- বংশগত কারণেও চুল পড়তে পারে । অনেক পরিবারে বংশগত চুল পড়ার সমস্যা দেখা যায়।
- বিভিন্ন রোগের কারণে চুল পড়তে পারে।
- ক্যান্সার হওয়ার ফলে কেমোথেরাপি দিলে চুল পড়ে।
- অনেকদিনের মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে চুল পড়তে পারে।
- অনেক সময় দেখা যায় ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাময়িকভাবে চুলপড়া বাড়িয়ে দিতে পারে।
- খাবারে পুষ্টির অভাব হলে চুল পড়া বেড়ে যায়।
- ডায়েটে প্রোটিনের অভাব হলে, কিছু মিনারেল এবং ভিটামিনের ঘাটতি চুলপড়া অনেক গুণ বৃদ্ধি করে।
- মহিলাদের সন্তান জন্মদানের পর কিছু হরমোনের কারণে চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে ইত্যাদি।
তবে সবারই একইরকমভাবে চুল পড়ে না। কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছু অংশে চুল গজায় না আবার কারো সম্পূর্ণ মাথার চুল কমতে শুরু করে। একেকজনের এক এক রকম চুল পড়ার সমস্যা দেখা যায়।
চুল পড়া বন্ধের উপায়
পুষ্টির অভাবে যদি আপনার চুল পড়া শুরু হয় তাহলে খাদ্যতালিকার দিকে নজর দিন। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাবেন। খাবারের সাথে সাথে কিছু ভিটামিন এবং মিনারেলস গ্রহণ করবেন।
নতুন চুল গজাতে চাইলে অবশ্যই পড়ুন –
আয়রন ও জিংক চুল গজাতে সাহায্য করে। তাই আয়রন ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার ( মটরশুঁটি, বাদাম, কলিজা, মাংস, দুধ ইত্যাদি) বেশি করে খাবেন। এগুলো আপনার প্রয়োজনীয় জিংক ও আয়রনের অভাব মেটাবে আর প্রচুর পরিমাণে পানি খাবেন।
চুল লম্বা করার কিছু টিপস
- প্রতিদিন গোসলের আগে চুল আঁচড়ে নেবেন। সব সময় চুল নিচের দিক থেকে আঁচড়াবেন এতে করে চুলে জট থাকলে তাড়াতাড়ি খুলে যাবে চুল নষ্ট হবে না। আর এ কারণে মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করবেন।
- সপ্তাহে অন্তত 3 দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। চুলে বেশি শ্যাম্পু ব্যবহার করলে প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে গিয়ে চুল শুষ্ক হয়ে যায়। তাই শ্যাম্পু করার সময় কিছু সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে –
- সম্পূর্ণ চুল আগে ভিজিয়ে নিতে হবে।
- তুলে যতটুকু শ্যামপুর দিতে চান একটি বাটিতে নেবেন। সাথে একটু পানি মিক্সড করে পাতলা করে নেবেন। তাহলে লাগাতে সুবিধা হবে ও চুল তাড়াতাড়ি পরিষ্কার হবে
- শ্যাম্পু করার সময় খুব যত্ন করে আলতো হাতে মাথার তালুতে ভালোভাবে লাগাবেন এরপর চুলের নিচের দিকে লাগাবেন।
- চুল ধুয়ে ফেলার পর কন্ডিশনার লাগাবেন। 5/10 মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলবেন।
- গোসলের পর চুল টাওয়েল বা গামছা দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখবেন না। চুলে বাড়ি দিয়ে পানি ঝরানোর চেষ্টা করবেন না। এতে চুলের আগা ফেটে যায়।
- চুল ভেজা থাকলে চুলের গোঁড়া নরম থাকে তাই কখনো ভেজা চুল আঁচড়াবেন না।
- চুলে কখনো অতিরিক্ত তেল দিবেন না। তেল লাগিয়ে চুলের গোঁড়া ম্যাসাজ করবেন।
- রাতে ঘুমানোর আগে চুল আঁচড়িয়ে হালকা করে বেঁধে করে নিবেন এতে চুল জট পাকাবে না।
- তাছাড়া চুল পড়া বন্ধ করতে পেঁয়াজের রস চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে 10 মিনিট রাখুন এরপর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে নতুন চুল গজাবে এবং খুশকি ও কমবে।
- খাঁটি নারকেল তেলের সাথে বা অলিভ অয়েল তেল ভিটামিন ই ক্যাপসুলের সাথে মিশিয়ে চুলে ম্যাসাজ করলে নতুন চুল গজাবে।
- বেশি করে পানি খাবেন এবং সপ্তাহে দুবার চিরুনি ধোবেন ইত্যাদি।
চিকিৎসা
চিকিৎসায় কিছুটা উন্নতি হলেও একেবারে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। ২/৫ % মিনস্কিডিল ব্যবহার করে অনেক উপকার পাওয়া যায়। বর্তমানে দেখা যায় চুল প্রতিস্থাপন করা হয় তবে এটি খুব ব্যয়বহুল।
আজ এখানেই শেষ করছি। আমার এ পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলো অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।