নারীকে আরো সুন্দর করে লম্বা সুন্দর ঘন রেশমি চুল। সব নারীর মনেই আশা থাকে একগোছা লম্বা সুন্দর রেশমী চুলের। কিন্তু নানারকম ব্যস্থতায় চুলের যত্নের দিকে খেয়ালই করা হয় না। তাই চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে ওঠে। আর এই চুলে চিরুনি করলেই চুল উঠতে থাকে, চুলের ডগায় ফাটল ধরে। আর বর্তমানে আমরা প্রত্যেকেই এই চুল পড়া নিয়ে সমস্যায় জর্জরিত। তাই ত্বকের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি আমাদের চুলের যত্নও নিতে হবে। তাহলেই আমরা ঝলমলে, সুন্দর, ঘন ও লম্বা চুল পাব। তাহলে আর দেরি না করে চলুন চুলের যত্নে ১৩ টি কার্যকরী টিপস সম্পর্কে জেনে নেই।
চুলের যত্নে ১৩ টি কার্যকরী টিপস
চুলকে সুন্দর রাখতে যত্ন করা প্রয়োজন। চুলের যত্নের জন্য অনেক টিপস রয়েছে। তার মাঝে আজ আমি ১৩ টি টিপস নিয়ে আলোচনা করব।
০১. চুলকে সুরক্ষিত রাখুন
সব সময় চুলকে সূর্যের আলো, রোদ, বৃষ্টি ইত্যাদি থেকে সুরক্ষিত রাখা উচিত। সুর্যের প্রচণ্ড রোদ, তাপ ,ধুলাবালি ইত্যাদি চুলের দুর্দশা ডেকে আনে। ধীরে ধীরে চুলের গোড়াতে জমাট বাঁধে। এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে রোদ-বৃষ্টিতে চলাচলের সময় ছাতা বা ক্যাপ পরা উচিত। আপনি চাইলে কাপড় বা ওড়না দিয়েও ঢেকে রাখতে পারেন।
ভেজা চুল সবচেয়ে বেশি ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে। একারণেই ভেজা অবস্থায় চুলের গোড়া থেকে চুল ভেঙে যাওয়া সহজ। তাই শ্যাম্পু করার সময় চুলে বেশি চাপ প্রয়োগ করবেন না। এছাড়াও গোসলের পর পরই ভেঁজা চুলে চিরুনি করবেন না। এতে চুল সুরক্ষিত থাকবে।
পড়ুন – চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়
০২ . চুলে সঠিকভাবে শ্যাম্পু করুন
বাইরে বের হলেই চুলে প্রচুর পরিমাণে ধুলাবালি, ময়লা ময়লা জমে থাকে। এ কারণ এ চুল পরিষ্কার করার জন্য চুলের ধরন অনুযায়ী ভালো মানের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। চুলে শ্যাম্পু করার সময় চুল ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। চুলে যদি অতিরিক্ত ময়লা থাকে তাহলে দুইবার শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে অন্তত ৩/৪ দিন শ্যাম্পু করুন।
০৩ . সঠিকভাবে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন
প্রতিদিন চুল ধুয়ে ফেলার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এতে করে চুল মসৃণ হয় এবং ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
তাছাড়া কন্ডিশনার সঠিকভাবে ব্যবহার করুন। কারণ এর কাজ হল চুলকে মসৃণ রাখা। তাই এটি ব্যবহার করার সময় চুলের গোড়া থেকে অন্তত 1 ইঞ্চি দূরে ব্যবহার করুন। লক্ষ রাখবেন চলে যেতে অতিরিক্ত কন্ডিশনার দেওয়া না হয়। কারণ অতিরিক্ত কন্ডিশনার চুল তৈলাক্ত করে।
০৪ . সব সময় একই ধরনের হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন
চুলের যত্ন নেওয়ার সময় একই ধরনের কোম্পানির অনুরূপ উপাদানে তৈরি প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিত। এতে করে কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই চুলের যত্ন নিতে পারবেন।
০৫ . অতিরিক্ত হিট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন
অতিরিক্ত তাপের ফলে চুল ভেঙে যায়। তাই যখন চুলে হিট দেবেন তখন অতিরিক্ত হিট দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ অতিরিক্ত হিটের কারণে চুল জ্বলে যেতে পারে। তাই হিট দেওয়ার সময় সর্তকতা অবলম্বন করবেন।
০৬ . আলতোভাবে তোয়ালে ব্যবহার করুন
অনেকে আছে যারা চুল মোছার সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে। এতে করে বারবার ঘর্ষণের ফলে চুল তার সুস্থতার হারিয়ে ফেলে। ফলে চুল গোড়া থেকে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই চুল মোছার সময় আলতোভাবে তোয়ালে ব্যবহার করবেন।
পড়ুন – চুল পড়ে কেন? চুল পড়া বন্ধের উপায়?
০৭ . আঁটসাঁট বেণী নয়
রাতে ঘুমানোর সময় শক্ত করে বেণী না করাই ভালো। হালকা করে বেণী করবেন। এতে করে চুল টান টানে থাকবে না এবং ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে
০৮ . ভালো বালিশের কভার ব্যবহার করুন
ঘুমানোর সময় ভালো বালিশের কভার ব্যবহার করুন। কারণ কটনের কাপড় রুক্ষ হয়। লেখাপড়া থেকে তৈরি বালিশের কভারের ঘুমালে ভেঙে যাওয়া একটি নিত্য প্রয়োজনীয় ঘটনা হয়ে যেতে পারে। তাই ঘুমানোর সময় পাতলা কাপড়ের কভার ব্যবহার করা উচিত।
০৯ . নিয়মিত তেল দিন
চুলের জন্য তেল খুব উপকারী। নিয়মিত তেল ব্যবহার করলে চুলের গোড়া শক্ত হয়। তবে খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত যেন না হয়।
১০ . ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন
চুলের জন্য গরম পানি ক্ষতিকর। তাই চুল পরিষ্কার করার জন্য সব সময় ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন।
অনেক সময় দেখা যায় শীতকালে অনেকেই চুলে গরম পানির ব্যবহার করে। এটি হেয়ার ড্যামেজের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় ।
পড়ুন – মাথায় চুল গজানোর উপায়
১১ . চুলে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন
চুলকে ভালো রাখার জন্য চুলের ধরন অনুযায়ী হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত শুষ্ক বা মিশ্র হয় তাহলে 10 থেকে 15 দিন পর পর আর তৈলাক্ত হলে 15 দিন পর পর চুলে প্যাক লাগান। আপনি ঘরে বসে নিজের চুলের প্যাক তৈরি করতে পারবেন। তাছাড়া ঘরে তৈরি প্যাক সুরক্ষায় বেশি উপকারী।
১২ . অতিরিক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন
চুলে কখনো অতিরিক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন না। এতে করে চুলের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং বৃদ্ধি কমে যায়।
১৩ . স্বাস্থ্যকর খাবার খান
স্বাস্থ্য চুলে প্রতিফলিত হয়। আপনি যদি স্বাস্থ্যকর থাকেন তাহলে চুল ভালো থাকবে। তাই চুলকে সুন্দর রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত।
চুলের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন এবং প্রোটিন , আইরন ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত গ্রহণ করুন।
আরও পড়ুন – ঘরোয়া উপায়ে সাদা চুল কালো করার ৭ টি টিপস
বেশি বেশি প্রোটিন জাতীয় শাকসবজি খাবেন। তাছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন।
আসলে একজনের সৌন্দর্যের জন্য যে খুব বেশি ব্যয়বহুল লাইফস্টাইল বা প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হয় তেমন নয়। শুধুমাত্র নিয়মিত পরিচর্যা করলেই চুলকে সুন্দর রাখা যায়।
আজ এখানেই থাকলো। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আর কোনকিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না কিন্তু।