এমন কেউ নেই যে চকলেট ভালোবাসে না? চকলেট ভালোবাসে না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। বিভিন্ন উৎসব -অনুষ্ঠানে প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে গিফট হিসেবে হরেক রকমের চকলেট আদান-প্রদান হয়।
চকলেট খারাপ, নাকি ভালো?
তবে চকলেট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি খারাপ এটা নিয়ে এখনো মতভেদ রয়েছে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা কখনো চকলেটকে ভালো বলেছেন আবার কখনো এর তেমন উপকারিতা নেই বলেছেন। তবে ভালো পক্ষে রায় পড়েছে বেশি।
চকলেট নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এটি উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক করে এবং হৃদপিন্ডের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। তাছাড়া চকলেট রক্তের শর্করার পরিমাণ হ্রাস বৃদ্ধি করে স্বাভাবিক রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়।
বিংশ শতাব্দীতে চকলেটের উৎপাদন ও জনপ্রিয়তা দুটোই বৃদ্ধি পায়। এসময় উপকারিতা ও অপকারিতার পাশাপাশি চকলেটের আসক্তি নিয়েও গবেষণা শুরু হয়। যুক্তরাজ্যে 1998 সালে প্রায় সাড়ে 300 মানুষের উপর জরিপে দেখা যায় পিৎজা বা বার্গারকে পিছনে ফেলে ভোক্তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চকলেট। এ জরিপে আরও জানা যায় অবসাদগ্রস্ত বা মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে মানুষ চকলেট বেশি খায়।
এছাড়া গত 17 বছরে চকলেট নিয়ে আরো অনেক উন্নত পর্যায়ের গবেষণা হয়েছে বা হচ্ছে। 2002 সালের গবেষণায় দেখা গেছে চকলেটে থাকা ক্যাটেকিনস নামের একটি এন্টি অক্সিডেন্ট পদার্থ ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে আর ডার্ক চকলেট ডায়াবেটিসকে দূরে রাখে। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপর 2005 সালের এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া যায়। 2006 সালের এক গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় চকলেটে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া হৃদযন্ত্র ও ত্বকের জন্য চকলেট উপকারী।
চকলেটের মূল উপাদান হচ্ছে কোকোয়া। বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় কোকোয়ার অদ্ভুত নানা গুণের কথা। দৌড়ানোর সহায়ক হিসেবে প্রাচীন মায়া সভ্যতায় চকলেট পাউডার ব্যবহার করা হতো। চকলেট খেলে নাকে বসে দৌড়ানো যেত। তবে গত দশকে জানা গেছে চকলেটে থাকা রাসায়নিক পদার্থ ডায়রিয়া নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন গবেষক বলেন, “চকলেট খুব ভালো এন্টি-অক্সিডেন্ট। শরীরের প্রদাহজনিত রোগ কমাতে এটি সাহায্য করে। আমরা মনে করি, এন্টি অক্সিডেন্ট হওয়ার জন্যই এর উপকারী দিক বেশি। তাছাড়া চকলেট খেলে ক্যান্সার ও স্মৃতিভ্রমের ঝুঁকিও কমে। “
তবে সব চকলেটেরই যে গুণ আছে, তা নয়। কোকোয়া বীজে থাকা ফ্লাভোনয়েডস নামক পুষ্টিকণা চকলেটকে এন্টি অক্সিডেন্টে পরিণত করে এবং প্রদাহজনিত রোগ কমায়।কালো ডার্ক চকলেটে এসব গুণ বেশি থাকে। তবে দুধ মেশানো বা সাদা রঙের চকলেটে কম থাকে। অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে ডার্ক চকলেট কি? চলুন তাহলে জেনে নেই,
ডার্ক চকলেট কি?
যেসব চকলেটের 70 ভাগ কোকোয়া দিয়ে তৈরি, সেসব চকলেটকে বলা হয় ডার্ক চকলেট। তৈরি করার ওপর নির্ভর করে কোন চকলেটে কতটা কোকোয়া থাকবে। যে চকলেটে যত বেশি কোকোয়া থাকবে সে চকলেট স্বাস্থ্যের জন্য তত বেশি উপকারী। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, বাজারে আমরা যেসব চকলেট কিনি তার সবই কী বিশুদ্ধ? চলুন তাহলে এ প্রশ্নের উত্তরও জেনে নেই।
বাজারের সকল চকলেটই কী বিশুদ্ধ?
বাজার থেকে যেসব চকলেট কিনা হয় সেগুলো, কি বিশুদ্ধ? বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাজার থেকে যেসব চকলেট কেনা হয় তার সবই বিশুদ্ধ নয়। ওয়াইস খাজা বলেছেন, ” বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত চকলেটে দুধ ও চিনি থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। এগুলো তেমন পুষ্টিকরও নয়।” তিনি আরো বলেছেন, নানান ধরনের চকলেটের গুণ নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে কম। ডার্ক চকলেট স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও কতটুকু উপকারি তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দিনে দু’বারের বেশি ডার্ক চকলেট না খাওয়ায় উত্তম।
চকলেটের জাদুকরী গুণ!!!
সত্যিই চকলেটের জাদুকরী গুণ রয়েছে। বিশেষ করে ভালো মানের চকলেটগুলোতে অর্থাৎ কালো বা ডার্ক চকলেটে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে।৭০% কোকোয়াসমৃদ্ধ চকলেটকেই ডার্ক চকলেট বলে।
এতে রয়েছে লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, আঁশ, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিংক ও সেলেনিয়াম। দিনে অল্প পরিমাণ ডার্ক চকলেট খেলেও 50 % পর্যন্ত হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। তাছাড়া শারীরিক প্রদাহ রোধ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও এ চকলেট সহায়তা করে। এতে প্রচুর পরিমাণে জৈব উপাদান রয়েছে, যাতে এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
এন্টি অক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোধ করে এবং ক্যানসার রোধে ভূমিকা রাখে। কোন এক গবেষণায় দেখা গেছে যে কোন ফলের তুলনায় ডার্ক চকলেটে এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান অনেক বেশি।
তাছাড়া কোকোয়া বীজের ফ্ল্যাভানল মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ায় যা মানুষকে আরো উদ্দীপ্ত করে তোলে। চকলেটের আরেকটি বড় গুণ হচ্ছে এটি বিষন্নতা দূর করে। চকলেটে থাকা ট্রিটমেন্ট নামের একটি উপাদান বিষন্নতা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য নিয়মিত ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে।
ভালো চকলেট চেনার উপায়?
চকলেট প্রক্রিয়াজাত করলেই এর গুণগত মান কমে যায়। কোকোয়া বাটার, চিনি ও চর্বিসমৃদ্ধ চকলেট শরীরের পক্ষে উপকারী নয়। তাই চকলেট কেনার সময় কম মিষ্টি জাতীয় চকলেট কিনতে হবে। তবে সর্বোচ্চ মাত্রার কোকোয়া সমৃদ্ধ চকলেটই ভালো। যদি সম্ভব হয় অর্গানিক কিনা সেটাও দেখে নিতে হবে।
প্রেমের সাথে চকলেটের সম্পর্ক!!
ভ্যালেন্টাইন্স সপ্তাহের তৃতীয় দিন হল চকলেট ডে। এদিন মিষ্টিমুখ করাতে চকলেট উপহার দেওয়া হয়। তবে শুধু ভালোবাসার মানুষদের মন পেতে মিষ্টিমুখ করিনা। আমাদের জীবনের যেকোনো সুখের ঘটনা ঘটলে বা প্রিয়জনদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেও উপহার হিসেবে চকলেট দেওয়ার রীতি রয়েছে।
গবেষণা থেকে জানা যায় ভালবাসা বৃদ্ধিতে বা যাদের জীবনে প্রেমের বালাই নাই, তাদের মধ্যে প্রেম – ভালবাসার উৎসাহ জাগিয়ে তুলতে চকলেট বা মিষ্টির ভূমিকা অনেক। এমনই তথ্য জানিয়েছে জার্নাল অফ “সোশাল এন্ড পার্সোনাল রেলেশনশিপ ” নামের পত্রিকা। এখানে বলা হয়েছে আমাদের মন-মানসিকতা বা উদ্দীপনার ক্ষেত্রে চকলেট এবং মিষ্টি অনেক কার্যকরী।চকলেট নিয়ে অনেক কথা হলো, এবার আর চিন্তাভাবনা না করে এক কামড় চকলেট খেয়েই দেখুন!!!