Homeবিজ্ঞানরসায়নকয়লা | কয়লার গঠন এবং ব্যবহার

কয়লা | কয়লার গঠন এবং ব্যবহার

বিশ্বজুড়ে জ্বালানির প্রধান উৎস হচ্ছে কয়লা। এটি এক ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি। প্রাচীনকালের বৃক্ষ অনেক দিন মাটির নিচে চাপা পরে আস্তে আস্তে কয়লায় পরিণত হয়েছে। কয়লা সাধারণত কাল বা বাদামী রঙের হয়ে থাকে। কয়লা সাধারণত কার্বনের একটি রূপ। কাঠ থেকে উৎপন্ন হয় কাঠ কয়লা আর খনিতে পাওয়া যায় খনিজ কয়লা। কয়লার অন্যতম প্রধান ব্যবহার হ’ল বিদ্যুৎ উৎপাদন করা।

কয়লা

কয়লার বৈশিষ্ট্য

নামকয়লা
প্রধান উপাদানকার্বন
বর্ণসাধারণত কালো বা বাদামী
প্রকার৪ প্রকর
অন্যান্য উপাদানঅক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন সালফার, গন্ধক ইত্যাদি।

কয়লার প্রকারভেদ

কয়লাকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

  • লিগনাইট কয়লা
  • পিট কয়লা
  • অ্যানথ্রাসাইট কয়লা
  • বিটুমিনাস কয়লা

এসব কয়লার মধ্যে অ্যানথ্রাসাইট কয়লা সবচেয়ে উন্নত মানের। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশে কয়লার খনি রয়েছে।

কয়লার গঠন

আজকে আমরা যে কয়লা ব্যবহার করছি এর গঠন আজ থেকে প্রায় 300 মিলিয়ন বছর পূর্বে শুরু হয়েছিল। তখনকার সময়ে বিশ্বে গাছপালাসহ অন্যান্য জলাবদ্ধতা প্রচুর পরিমাণে ছিল। এ গাছগুলো মারা গেলে তারা জলে ডুবে যায়। তখন তারা পুরোপুরি ক্ষয় হয়ে যায় নি, বা ভেঙে পড়েনি। বিপরীতে তারা পিট নামে এক ধরণের পদার্থ গঠন করে। তাপ, চাপ এবং পরিবেশের প্রভাবে পিট শক্ত হয়ে কয়লাতে পরিণত হয়।

কয়লার রূপ ও ব্যবহার

কয়লার বিভিন্ন রূপ রয়েছে।যেমন – পিট, বিটুমিনাস, লিগনাইট এবং অ্যানথ্রাসাইট। এদের মধ্যে অ্যানথ্র্যাসাইট হচ্ছে শক্ত কয়লা। অ্যানথ্রাসাইট কয়লা সর্বাধিক তাপ উৎপন্ন করে। মূলত ঘরগুলি গরম করার জন্য এ কয়লা ব্যবহৃত হয়।

নরম কয়লা হচ্ছে বিটুমিনাস কয়লা। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে এ কয়লা ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও বিটুমিনাস কয়লা স্টিল মিলগুলিতে কোক তৈরির জন্য অন্যতম জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সবচেয়ে নরম কয়লা হচ্ছে লিগনাইট। গ্যাস এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে এটি ব্যবহৃত হয়।

কয়লার খনি

খনির মাধ্যমে আমরা কয়লা পাই। খনির শ্রমিকরা স্ট্রিপ মাইনিং নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়াতের মাধ্যমে মাটির নিচ থেকে কয়লা আহরণ করে। গভীর খনি থেকে কয়লা আহরণ করার সময়, খনিবিদরা পর্যন্ত কয়লা তুলার জন্য দীর্ঘ সুড়ঙ্গগুলি খনন করে। যেগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে।

আমাদের দেশে পাঁচটি প্রধান কয়লার খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-

  • দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্র
  • জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র
  • রংপুর জেলা খালাশপীর কয়লাক্ষেত্র এবং
  • দিনাজপুরের দিঘিপাড়ায় অবস্থিত কয়লাক্ষেত্র উল্লেখযোগ্য।

খনির কয়লা খনি শ্রমিকদের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। অনেক সময় ছাদ ধসে পড়লে কয়লা খনি শ্রমিকরা আহত হতে পারে বা মারা যেতে পারে।মাঝে মাঝে কয়লায় আটকে থাকা গ্যাসগুলি আগুন বা বিস্ফোরণ ঘটায় এতে অনেক সময় দুর্ঘটনা হয়। অনেক শ্রমিক বছরের পর বছর ধরে কয়লার খনিতে কাজ কর। তারা প্রতিনিয়ত কয়লার ধুলায় শ্বাস ফেলতে ফেলতে নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে।

কয়লার অসুবিধা

কয়লার যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি অসুবিধা রয়েছে। এগুলো হলো-

  • কয়লা পোড়ালে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সহ বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়।
  • অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় কয়লা সস্তা।
  • কয়লা পোড়ালে বিষাক্ত গ্যাস থেকে এসিড বৃষ্টি তৈরি হতে পারে।
  • বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে যা জীবন্ত জিনিসের জন্য ক্ষতিকারক।
  • এর মারাত্মক গ্যাসের ফলে শ্বাসজনিত রোগ ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা রকম রোগ হতে পারে।

শেষ কথা

যেহেতু কয়লা তৈরি হতে অনেক সময় লাগে তাই এটি একটি অপূরণীয়যোগ্য সংস্থান হিসেবে পরিচিত। আর যেভাবে কয়লার ব্যবহার হচ্ছে তাতে পৃথিবীর কয়লার সরবরাহ একদিন শেষ হয়ে যাবে।

অবশ্যই পড়ুন –

সোনা | সোনার বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার

অক্সিজেন কি? অক্সিজেন এর বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Recent posts

Recent comments